Image description

জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) যোগদানের পর ইটনা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কবির শ্যামলকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে যুবলীগ। গত শনিবার কিশোরগঞ্জে এনসিপির একটি পথসভায় বক্তৃতা দেওয়ার পর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে সংগঠন থেকে চূড়ান্তভাবে বাদ দেওয়া হয়। শ্যামল ছাড়াও এনসিপির ইটনা উপজেলা কমিটিতে যুক্ত হওয়ায় আরও দুই যুবলীগ নেতাকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। জেলা যুবলীগের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে রাতেই ফেসবুকে প্রকাশ করা হয় বহিষ্কারের নোটিশ এরপরই বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।

বহিষ্কারের নোটিশে বলা হয়েছে, গোলাম কবির শ্যামলসহ ওই তিন নেতা সম্প্রতি এনসিপির ইটনা উপজেলা কমিটিতে যুক্ত হয়েছেন এবং গত শনিবার কিশোরগঞ্জ শহরের পুরানথানা এলাকায় এনসিপির এক পথসভায় বক্তব্য রাখেন, যা যুবলীগের গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী। দলীয় সিদ্ধান্তে উল্লেখ করা হয়, “জুলাই সন্ত্রাসীদের দল” হিসেবে চিহ্নিত এনসিপিতে যোগদানের মাধ্যমে তারা খুনিদের সঙ্গে ঐক্য ও সংহতি প্রকাশ করেছেন। এই অভিযোগে কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিলের নির্দেশে গঠনতন্ত্রের ২২(ক) ধারায় তাদের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল স্তরের কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

জানা যায়, গত শনিবার রাতে এনসিপির দেশব্যাপী পদযাত্রার অংশ হিসেবে কিশোরগঞ্জের পুরান থানার তিন রাস্তার মোড়ে অনুষ্ঠিত পথসভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে একই মঞ্চে ছিলেন গোলাম কবির শ্যামল। সভায় বক্তৃতার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পরই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। শ্যামলের বাবা ওমর ফারুক ইটনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। নিজেও ছিলেন ইটনা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।

উল্লেখ্য, এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর স্বাক্ষরে গত ৫ জুন তিন মাসের জন্য ২১ সদস্যের ইটনা উপজেলা কমিটি গঠিত হয়। এতে প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পান মো. নাজমুল ঠাকুর, যুগ্ম আহ্বায়ক চারজন এবং সদস্য ১৬ জন। গোলাম কবির শ্যামল ছিলেন কমিটির ২ নম্বর সদস্য। একই কমিটিতে কামরুজ্জামান সোহেল ছিলেন ৪ নম্বর এবং বাসেত আহমেদ ১১ নম্বর সদস্য।

শ্যামলের বিষয়ে মন্তব্য জানতে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। কামরুজ্জামান সোহেলও ফোন ধরেননি। তবে বহিষ্কৃত অপর নেতা বাসেত আহমেদ বলেন, তার প্রকৃত নাম মো. বাছেদ মিয়া। তিনি জানান, ‘যুবলীগে মূল্যায়ন না পাওয়ায় অনেক আগেই পদত্যাগ করেছি এবং নিষ্ক্রিয় ছিলাম। এখন আমি এনসিপিতে আছি।’

এ বিষয়ে এনসিপির ইটনা উপজেলা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী মো. নাজমুল ঠাকুর দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘গোলাম কবির শ্যামল ২০১৮ সালেই যুবলীগ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তার বাবা চেয়ারম্যান নির্বাচনে জয়ী হলেও দলীয় নেতারা তাকে ফেল করিয়েছিলেন বলে অভিযোগ তুলে শ্যামল যুবলীগ থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর তিনি আর কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন না।’ তিনি অভিযোগ করেন, স্থানীয় বিএনপি-সমর্থিত কিছু লোক শ্যামলকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে একটি সাজানো বহিষ্কারের ঘটনা সামনে এনেছে।

২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ নিয়ে শ্যামলের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে দলীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘গোলাম কবির শ্যামলকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কারের বিষয়টি শুনেছি। তবে বিস্তারিত জানি না। স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এসব বিষয়ে কথা বলতে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম বকুলসহ অন্য নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।