
জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এ জন্য প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করেছে। হাইকমান্ডের নির্দেশ মতে, এবার প্রার্থী করার ক্ষেত্রে দলের ত্যাগী এবং ক্লিন ইমেজের নেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। ১০০ আসনে প্রাধান্য দেওয়া হবে তরুণ নেতাদের। এদিকে নিজ নিজ সংসদীয় আসনে প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে চলছে নেতাদের দৌড়ঝাঁপ।
সংস্কার ও পতিত স্বৈরশাসক গোষ্ঠীর বিচার ছাড়া নির্বাচন নয় বললেও ইতিমধ্যে জামায়াত, বাংলাদেশ ইসলামি আন্দোলন, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদও তাদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে শুরু করেছে। দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকায় নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই নিয়ে অন্যান্য দল থেকে খানিকটা পিছিয়ে। তবে দলটি বলছে, তারা সবসময়ই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।
সূত্র জানায়, ফেব্রুয়ারি মাস টার্গেট করে নির্বাচনী প্রস্তুতি পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। ইতোমধ্যে নির্বাচনী চূড়ান্ত কর্মকৌশল প্রণয়ন করা হয়েছে। দলের হাইকমান্ড অত্যন্ত গোপনে তিন স্তরে যাচাই-বাছাই কার্যক্রম চালিয়েছে। ৩০০ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি খসড়া তালিকার কাজ শেষ করেছে দলটি। এ তালিকায় অধিকাংশ আসনেই একাধিক প্রার্থী রয়েছে। খসড়া তালিকার প্রার্থীদের আমলনামাও পৌঁছে গেছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে। প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ের পর তিনি প্রার্থীদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে যোগ্য ও ক্লিন ইমেজের নেতাদের গ্রিন সিগন্যাল দেওয়াও শুরু করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহ থেকে তারেক রহমান মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাথে ভার্চুয়ালি কথা বলছেন। প্রায় প্রতিদিন এ সাক্ষাৎ অব্যাহত রয়েছে। গড়ে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচজনের সাথে কথা বলছেন তিনি।
ঢাকার এক আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী ঢাকা টাইমসকে বলেন, গেল সপ্তাহে ভার্চুয়ালি সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান তার কাছে এলাকা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। তবে এই এলাকায় ভিন্ন দলের সকল নেতা সম্পর্কে তারেক রহমানের জানাশোনা দেখে নিজেই অবাক হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগরের এই বিএনপি নেতা। শুধু ঢাকা মহানগরই নয়, দেশের ৩০০ আসন সম্পর্কেই তারেক রহমান এমন খোঁজখবর রাখেন বলে মনে করেন এই নেতা।
বিএনপির আরেকটি সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে ঢাকার কয়েকটি আসন চূড়ান্ত করেছেন তারেক রহমান। এসব প্রার্থীকে ভোটের মাঠে কাজ করার জন্য গ্রিন সিগন্যালও দিয়েছেন। গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া আসনগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণে একটি আর উত্তরে পাঁচটি আসন।
এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ের নেতাদের অনেকের সাথে আলাপ করে জানা গেছে যে, দল থেকে ইতোমধ্যেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনা অনুযায়ী বেশিরভাগ এলাকাতেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলের বিভিন্ন ইউনিট পুনর্গঠনের পাশাপাশি ব্যাপক জনসংযোগ করছেন।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রতিটি আসনে সার্ভে করা হচ্ছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। বিএনপির তৃণমূলের নেতারা যাদের চাইবেন তাদের সবচেয়ে বেশি প্রায়োরিটি দেওয়া হবে। চূড়ান্তভাবে বিএনপির যে মনোনয়ন বোর্ড আছে, সেখানে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ইন্টারভিউ হবে। তারপরই যাচাই-বাছাই শেষে যোগ্য প্রার্থীকে দেওয়া হবে দলীয় মনোনয়ন। জুলাই আন্দোলনসহ যুগপৎ আন্দোলনে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন এবং আছেন তাদেরও সেই কার্যক্রমও মূল্যায়ন করা হবে বলে জানান তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ২০১৮ সালে সরকারের নির্যাতনের মধ্যেও বিএনপি যে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল, তখনও দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন প্রায় আড়াই হাজার প্রার্থী। এখনো বিভিন্ন এলাকায় একাধিক প্রার্থী আছে। দল, নেতাকর্মী এবং জনগণ নির্বাচন নিয়ে খুবই উৎসাহী। মনোনয়ন বাছাইও হবে প্রতিযোগিতামূলক। আগামী নির্বাচন সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে হবে—এমন আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এটি জনগণেরও বহুদিনের প্রত্যাশা।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঢাকা টাইমসকে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো নির্বাচনের তারিখ নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে রেখেছে। এর মধ্যেও বিএনপি নির্বাচনের প্রাথমিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে। বিএনপি নির্বাচনের জন্য সবসময়ই প্রস্তুত। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বিএনপিই জনগণের ভোটে পুনরায় রাষ্ট্রক্ষমতায় আসবে।
ঢাকাটাইমস