
জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে বাংলাদেশে দফায় দফায় ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে গত বছরের ১৮ই জুলাই প্রথম দফায় সারা দেশে ইন্টারনেট সেবা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়, যার ফলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
সপ্তাহখানেকের মধ্যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ফিরতে শুরু করলেও বন্ধ রাখা হয় সামাজিক সব যোগাযোগমাধ্যম। ১০ দিন বন্ধ থাকার পর চালু হয় মোবাইল ইন্টারনেট। খবর বিবিসি বাংলার।
কিন্তু ততদিনে এমন অনেক ঘটনা ঘটে যায়, যা পরবর্তীতে শেখ হাসিনার সরকারের পতনকে ত্বরান্বিত করে।
ইন্টারনেট বন্ধের এই ঘটনাটি এমন একটি সময় ঘটে, যখন আন্দোলন দমনে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ব্যাপক বলপ্রয়োগ শুরু করে।
আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও গুলির ঘটনায় বাড়তে থাকে হতাহতের সংখ্যা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদেরও হামলার জন্য দায়ী করা হয়।
দেশজুড়ে সহিংসতা ও প্রাণহানির মধ্যে ২১শে জুলাই বিকালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যেদিন এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, সেদিনও এক ডজনেরও বেশি মানুষ নিহত হন।
বৈঠকে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খানের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে শেখ হাসিনা কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন বলে সাংবাদিকদের জানান প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান। কিন্তু ঠিক কী ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
‘শেখ হাসিনা পালায় না’
তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠকের পরদিন (২২ জুলাই) বিকালে দেশের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত ওই সভায় নিজের পালিয়ে যাওয়ার গুঞ্জন খারিজ করে দিয়ে তৎকালীন সরকারপ্রধান বলেন, ‘শেখ হাসিনা পালায় না’।
আন্দোলন চলাকালে সরকারি স্থাপনায় হামলা জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করে এবার তাদের ‘সহজে ছাড় দেওয়া হবে না’ বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
অন্যদিকে শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি ‘পূর্ণ আস্থা ও সমর্থন’ রয়েছে বলে সভায় জানান ব্যবসায়ী নেতারা।
সংকটময় পরিস্থিতিতে অতীতের মতো ভবিষ্যতেও তারা শেখ হাসিনার পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছিলেন।
পরবর্তীতে ছাত্র আন্দোলনের মুখে গতবছরের পাঁচ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বক্তব্যটি সোশ্যাল মিডিয়ার ঘুরপাক খাচ্ছে।