Image description

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচারে মরিয়া রাজনৈতিক দলগুলো। নির্বাচনের সম্ভাব্য দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তৎপরতাও বেড়েছে। জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে মেহেরপুরের দুটি আসনেই মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মাঝে বেশ পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। এখন থেকেই নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে গণসংযোগ, মিছিল-মিটিং এবং শুভেচ্ছাবিনিময়ের মধ্য দিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।

তবে দুটি আসনেই বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে কমিটি দেওয়ায় মাঠপর্যায়ে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। দুটি আসনেই বিএনপির কমিটিতে আওয়ামী লীগের লোকদের পুনর্বাসনের অভিযোগ তুলেছেন খোদ বিএনপিরই একাধিক নেতাকর্মী। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে চলছে মিছিল-মিটিংসহ বিভিন্ন কর্মসূচি। ঘটেছে সংঘর্ষের মতো ঘটনাও।

বিএনপির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছেÑএকদিকে দলটির কমিটি, অন্যদিকে দলের ত্যাগী নেতাকর্মী ও সমর্থক, যার বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে নির্বাচনে। কমিটি নিয়ে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে না পারলে দুটি আসনেই জামায়াতে ইসলামী বাড়তি সুবিধা পেতে পারে।

এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও সরব রয়েছেন। ইসলামী আন্দোলন এবং গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থীরাও মাঠে রয়েছেন।

মেহেরপুর-১ (সদর ও মুজিবনগর)

মেহেরপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাসুদ অরুণ। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে তিনি মেহেরপুর-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দীর্ঘদিন ধরে মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘ ১৭ বছর স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনামলে নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করে মেহেরপুরের বিএনপিকে টিকিয়ে রাখেন এই নেতা। ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে মামলা-হামলার ভয়ে কেউ মিছিল-মিটিং করতে পারেননি। নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হন নেতাকর্মীরা। কিন্তু সেই কঠিন সময়েও নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বিএনপির হাল ধরে রাখেন তিনি।

একাধিক মামলার আসামি হয়ে কারাবরণ করেছেন, তবুও হাল ছাড়েননি। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে মেহেরপুর-১ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে বাদ পড়েছেন ত্যাগী এই নেতা।

এই আসনে আলোচনায় রয়েছেন মেহেরপুর জেলা জামায়াতের আমির ও দলটির কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য মাওলানা তাজ উদ্দিন খান। এরই মধ্যে মেহেরপুর-১ আসনের প্রার্থী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী। তিনি ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলীয়ভাবে মনোনয়ন পান। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে মামলা-হামলা ও নির্যাতন-নিপীড়ন উপেক্ষা করে দলকে সুসংগঠিত করেন এই নেতা।

এদিকে নির্বাচনি এলাকায় কাজ করে যাচ্ছেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামরুল হাসান। তিনি জেলা বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। জেলা আইনজীবী সমিতির পরপর তিনবারের সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। এরই মধ্যে নির্বাচনকে সামনে রেখে গণসংযোগ শুরু করেছেন তিনি। দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করছেন। তবে জেলা বিএনপির মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির মহাসচিব ও সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা জাকির হোসেন ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের আন্দোলনে অংশ নিয়ে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে কাজ করছেন তিনি।

এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আরো আছেন আলমগীর খান সাতু। ১৯৯৬ সাল থেকে দীর্ঘদিন তিনি জেলা বিএনপির সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে জেলা বিএনপির সিনিয়র সদস্য হিসেবে দায়িত্বে আছেন। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পান তিনি। ২০১৩-১৪ সাল থেকে ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে দলকে সুসংগঠিত করতে কাজ করছেন।

আসনটিতে আলোচনায় আছেন নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতা সোহেল রানা। ইতোমধ্যে গণসংযোগ শুরু করেছেন তিনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় এই সমন্বয়ক দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন এবং সরকারি সেবাদানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার প্রত্যয়ে তরুণ প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনি প্রচার চালাচ্ছেন।

জানতে চাইলে এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ অরুণ বলেন, ‘আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর জনমনে প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় তৃণমূলে নিষ্ক্রিয়তা, হতাশা এবং দলছুট মনোভাব তৈরি হয় নেতাকর্মীদের মাঝে। তবে ১৭ বছর রাজপথে থেকে নির্যাতনের শিকার হওয়া তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর ফলে এখন তৃণমূল বিএনপি দারুণভাবে সংগটিত হয়েছে।

মেহেরপুর-২ (গাংনী)

মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসন থেকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন আমজাদ হোসেন। দীর্ঘদিন জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের আমলে দলের হাল ধরে রেখেছিলেন। নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তিনি।

বিএনপির সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করার ফলে দলের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি সৃষ্টি হয়, যার প্রভাব এখনো রয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে মামলা-হামলার শিকার হয়ে কারাবরণও করতে হয় আমজাদ হোসেনকে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে দলকে সুসংগঠিত করে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।

মেহেরপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাভেদ মাসুদ মিল্টন ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পান। এর আগে দলের সিনিয়র সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে মামলার শিকার হয়ে কারাবরণও করতে হয়েছে তাকে। তা সত্ত্বেও দলকে সুসংগঠিত করে তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনি মাঠে কাজ করছেন।

আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের বিষয়ে মাসুদ মিল্টন বলেন, ‘যে লড়াই ছিল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে, সেই আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। কারণ দল এখন সুসংগঠিত।’

এই আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কাজ করছেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা। তিনি জামায়াতে ইসলামীর মেহেরপুর জেলা শাখার কর্মপরিষদ ও শূরা সদস্য। দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গণসংযোগ এবং সামাজিক কল্যাণমূলক কাজ করে যাচ্ছেন।

অন্যদিকে আসনটিতে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শাকিল আহমেদ তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে নির্বাচনের মাঠ গোছানো শুরু করেছেন। নতুন বাংলাদেশে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে তরুণ প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করছেন তিনি।

এ ছাড়া দুটি আসনেই বিএনপির একাধিক প্রার্থী, ইসলামী আন্দোলন এবং গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে।