
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভোটের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন দেশের ১৩টি রাজনৈতিক দলের নেতারা। একইসঙ্গে নির্বাচনপূর্ব সময়ে সরকারকে নিরপেক্ষতা প্রমাণ, সব দলের প্রতি সমান আচরণ এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বুধবার (২৩ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে এ আহ্বান জানান রাজনৈতিক নেতারা।
নেতারা বলেন, নির্বাচনের আগে নিরপেক্ষ আচরণ না করলে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়। গত মঙ্গলবার একই ভেন্যুতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে আলাদা বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে তারা বলেন, শুধু চারটি দলকে আমন্ত্রণ জানানো সরকারে পক্ষপাতমূলক মনোভাবের পরিচায়ক। এনসিপিকে অতিরিক্ত প্রটোকল দিয়ে প্রচারে সহায়তা করায় ক্ষোভ জানান তারা।
বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতারা নিয়মিত সর্বদলীয় সংলাপ আয়োজন, রাজনৈতিক ঐক্য ধরে রাখা এবং নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করার তাগিদ দেন। তারা বলেন, “ফ্যাসিবাদ প্রতিহত করতে হলে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে হবে।”
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর উপলক্ষে আমরা রাজনৈতিক ঐক্য দৃশ্যমান করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এক বছর না যেতেই পরাজিত শক্তি ষড়যন্ত্রে নেমেছে। রাজনৈতিক বিভেদ ঠেকাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”
সচিবালয়ে ছাত্রদের ওপর হামলার প্রসঙ্গও বৈঠকে উঠে আসে। নেতারা অভিযোগ করেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের প্রচেষ্টায় ঘাটতি রয়েছে। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে আরও কার্যকর হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
বৈঠকে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে অনেকেই আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।
১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, “এনসিপি সরকারি প্রটোকলে প্রচার চালাচ্ছে— এটা দৃষ্টিকটু। আমরা নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ জানতে চাই।”
বাসদের বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, “এই সরকার বিপদে পড়লেই রাজনৈতিক দলগুলোকে ডাকে। পক্ষপাতমূলক আচরণে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।”
সাইফুল হক (বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি) বলেন, “দেশ অরাজকতার দিকে যাচ্ছে, কারণ সরকার দুর্বল। নিয়মিত সংলাপ জরুরি।”
ড. রেদোয়ান আহমেদ (এলডিপি) বলেন, “সব রাজনৈতিক দল সমান সুযোগ পাচ্ছে না। এনসিপিকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।”
নুরুল হক নুর (গণঅধিকার পরিষদ) বলেন, “সরকার নিরপেক্ষ না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। পক্ষপাত বন্ধ করতে হবে।”
জোনায়েদ সাকি (গণসংহতি আন্দোলন) বলেন, “মানুষ আশ্বস্ত হতে চায়। অবিলম্বে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে। বিচার ও নির্বাচনী ব্যবস্থায় সংস্কার দরকার।”
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “দলীয় বিভেদের পেছনে সরকারের দোষ আছে। সবার প্রতি সমান আচরণ নিশ্চিত না হলে ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দেবে।”
দ্রুত ভোটের তারিখ ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়ে কিছু সুপারিশ পেশ করেন নেতারা। সেগুলো হল-
সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, পক্ষপাতমূলক আচরণ বন্ধ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোরতা, নিয়মিত সর্বদলীয় সংলাপ, এনসিপিকে প্রটোকল বন্ধের দাবি এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আস্থা ফিরিয়ে আনা।
শীর্ষনিউজ