Image description

অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত মন্তব্য করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, ‘ড. ইউনূসের স্বজনপ্রীতির সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। বেতন-ভাতা ফেরত দিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতেই হবে।’ গতকাল বুধবার দুপুরে চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ডে এনসিপির পথসভায় তিনি এ কথা বলেন।

এ সরকারের কাছে অনেক প্রত্যাশা ছিল জানিয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পর আমরা রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে চেয়েছিলাম।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আগের মতো, আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাও আগের মতো। একজন স্বাস্থ্যমন্ত্রী (উপদেষ্টা) আছেন, চেনেন ওনাকে? উনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাই-ব্রাদার কোটায় আসছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের স্বজনপ্রীতির সবচেয়ে বড় উদাহরণ স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। সব সময় বলে আসছি, এই স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কোনো প্রয়োজন নাই।’

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও চিকিৎসা সম্পর্কে ‘কিছু বোঝেন না’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘উনার একমাত্র যোগ্যতা উনি গ্রামীণ ব্যাংকে ছিলেন এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছের মানুষ। এই স্বাস্থ্য উপদেষ্টা লইয়া আমরা কী করিব? দুঃখজনক বিষয়, উনি নিজে চিকিৎসা করাইতে সিঙ্গাপুর যান। জনগণ উনাকে যে বেতন দিছে, সেগুলো রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়ে এই স্বাস্থ্য উপদেষ্টার অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।’

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় শোক জানিয়ে হাসনাত বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, লাশের ওপর দিয়ে আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদ আবার রাজনীতিতে আসতে চেষ্টা করছে। আমরা যারা বাংলাদেশকে ধারণ করি, সবাই শোকাহত। কিন্তু যদি আওয়ামী লীগ ফের উত্থানের চেষ্টা করে, আমরা শোককে শক্তিতে পরিণত করে এই আওয়ামী লীগকে নাই করে দেব।’

পথসভায় আরও বক্তব্য দেন এনসিপির কেন্দ্রীয় মুখ্য সমন্বয়ক ও চাঁদপুরের বাসিন্দা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সমন্বয়ক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন প্রমুখ।

পরে গতকাল বিকেলে কুমিল্লায় এনসিপির পদযাত্রা শেষে নগরীর টাউনহল মাঠের শোকসভায় হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের সখ্য মেনে নেওয়া হবে না। ঢাকায় মাইলস্টোন যখন আগুনে পুড়ছিল, তখন সেখানে আওয়ামী লীগ আলু পোড়া দিয়ে খেতে চেয়েছিল। তাই আপনাদেরকে বলব—আপনি বিএনপি করেন সমস্যা নেই, জামায়াতে ইসলামী করেন সমস্যা নেই, কিন্তু আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্য কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।’

তিনি আরও বলেন, “যারা অহংকার করে মাটিতে হাঁটেন, আল্লাহ তাদের অপছন্দ করেন, তাদের ধ্বংস করে দেন। সে কথার প্রমাণ আমরা পেয়েছি হাসিনাকে ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে, কুমিল্লা থেকে বাহার-সূচনাকে উৎখাত করার মধ্য দিয়ে। আমরা প্রেস কনফারেন্সেও দেখেছি, হাসিনা দম্ভ করে বলেছিল, কুমিল্লা নামের আগে যেহেতু ‘কু’ আছে, এই কুমিল্লা নামে বিভাগ হবে না। হাসিনাকে উৎখাত করে আমরা বলছি—বিভাগ হবে, কুমিল্লা নামেই বিভাগ হবে।’’

এর আগে সকালে চাঁদপুর সার্কিট হাউসে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। এ সময় জুলাই আন্দোলনের নেতাদের কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। স্বজন হারিয়ে তাদের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন নেতৃবৃন্দের কাছে।

সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘শহীদদের মায়েরা কান্না করতে করতে তাদের চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। নতুন আরেক জুলাই এসেছে; কিন্তু কোনো বিচার দেখা যায়নি। জুলাই ঘটনার জন্য দায়ী খুনি হাসিনাসহ জড়িত সবার বিচার করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিচার না করে অন্য কোনো কিছু চিন্তা না করার জোর দাবি জানাচ্ছি।’

পরে ঢাকার বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতদের স্মরণে সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণ থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত শোক র্যালি করেন এনসিপি নেতাকর্মীরা।