Image description

নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধনের জন্য ১৪৪টি দল আবেদন করে। এ রাজনৈতিক দলগুলোর কোনোটিই নিবন্ধন পাওয়ার শতভাগ শর্ত পূরণ করতে পারেনি। যার মধ্যে গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) রয়েছে। আবেদনকারী দলগুলোর বেশির ভাগেরই নেই গঠনতন্ত্র, জেলা-উপজেলা কমিটি ও নিজস্ব কার্যালয়।

এ অবস্থায় বিধান অনুযায়ী সব দলকেই ১৫ দিন সময় দিয়ে ঘাটতি পূরণের চিঠি দিয়েছে ইসি। গত ১৫ জুলাই থেকে প্রথম ধাপে আবেদন করা ৬২টি এবং দ্বিতীয় ধাপে ৮২টি দলকে চিঠি দেওয়া হয়। এসব চিঠিতে প্রতিটি দলের যেসব তথ্যের ঘাটতি রয়েছে, তা উল্লেখ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেসব তথ্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। 

আইন অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী মাঠপর্যায়ে সরেজমিন যাচাই করা হবে। কোনো দল তথ্য সরবরাহ না করলে বা চূড়ান্ত যাচাইয়ে তথ্যের মিল না পেলে ওই দল নিবন্ধন পাওয়ার অযোগ্য বিবেচিত হবে। আর নিবন্ধন ছাড়া কোনো দলের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই।   

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ২০ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধনপ্রত্যাশী দলগুলোকে আবেদন দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল ইসি। পরে এনসিপিসহ ৪৬ দলের অনুরোধে ওই সময় বাড়িয়ে ২২ জুন নির্ধারণ করা হয়। ওই সময় পর্যন্ত ১৪৪টি দল ১৪৭টি আবেদন করে। দল নিবন্ধন আবেদনগুলো যাচাই-বাছাইয়ে সাত সদস্যের কমিটি করে দিয়েছিল ইসি। 

গত কয়েকদিনে সংশ্লিষ্ট ইসির নির্বাচন সহায়তা ও ব্যবস্থাপনা শাখার কার্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিনই সেখানে নিবন্ধনের আবেদনকারী দলের নেতাদের ভিড় লেগে আছে। তাদের বেশির ভাগই এসেছিলেন ইসির সময় বর্ধিত করার চিঠি নিতে। এর আগে ইসি কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট দলগুলোর ঠিকানায় চিঠি পাঠানোর পাশাপাশি বেশ কিছু দলের নেতাদের ফোন করে চিঠি নিতে বলা হয়েছিল। কেউ কেউ এসেছিলেন ইসির চাহিদার বিপরীতে তথ্য ও কাগজপত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া বিষয়ে জানতে।      

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, নিবন্ধন পেতে রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, অন্তত এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর অফিস, অন্তত ১০০ উপজেলা বা মেট্রোপলিটন (মহানগর) থানায় কার্যালয় এবং প্রতিটি কার্যালয়ে ন্যূনতম ২০০ ভোটার তালিকাভুক্ত থাকতে হবে। দলীয় প্যাডে আবেদনের সঙ্গে ১০ ধরনের শর্ত পূরণের তথ্য-প্রমাণাদি এবং নিবন্ধন ফি হিসেবে ৫ হাজার টাকা (অফেরতযোগ্য) জমা দিতে হবে। 

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ সমকালকে বলেন, নিবন্ধন আবেদন জমা দেওয়া সব দলেরই তথ্যের ঘাটতি রয়েছে। এসব তথ্য জমা দিতে সব দলকে ১৫ দিন সময় দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত যাচাইয়েও শর্ত পূরণে ব্যর্থ দলগুলো নিবন্ধন পাবে না।  

এনসিপির আবেদনে যেসব ঘাটতি

নিবন্ধন আবেদনের ত্রুটি সংশোধনের জন্য ১৫ দিন তথা ৩ আগস্ট পর্যন্ত সময় দিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বরাবর চিঠি দিয়েছে ইসি। চিঠিতে আবেদনের ত্রুটিগুলো তুলে ধরে বলা হয়, আবেদনে ঠিকানাসহ দলের সব কার্যকর জেলা দপ্তরের তালিকা দেওয়া হয়নি। ঢাকা ও সিলেট জেলা দপ্তরের ভাড়া চুক্তিপত্রে দলের নাম উল্লেখ নেই। ঠিকানাসহ সব উপজেলা ও থানা দপ্তরের তালিকা দেওয়া হয়নি। ২৫টি উপজেলা/থানায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোটার (ন্যূনতম ২০০ জন) সদস্যের অন্তর্ভুক্তি পাওয়া যায়নি। এসব থানা/উপজেলার ১০৮ থেকে ১৯৫ জনের নাম দেওয়া হয়েছে। কিছুক্ষেত্রে একই ভোটারকে বারবার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। 

আবেদনের সঙ্গে ইটনা উপজেলার ভাড়ার চুক্তিপত্রে দলের নাম উল্লেখ নেই। হালুয়াঘাট উপজেলার ভাড়া চুক্তিপত্রে দলের নাম ও অফিসের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়নি। দলীয় তহবিলের পরিমাণ এবং নিবন্ধনের বিষয়ে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্তের অনুলিপির শেষ পৃষ্ঠায় স্বাক্ষর না থাকার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া দলের গঠনতন্ত্রে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা ও উপজেলা বা ক্ষেত্রমত এবং জেলা কমিটির সদস্য কর্তৃক প্রস্তুত প্যানেল থেকে কেন্দ্রীয় সংসদীয় বোর্ড কর্তৃক সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করার বিধান রাখা হয়নি। দলটির কোনো দলিল বা কার্যক্রমে সংবিধানপরিপন্থি নয়, দলে বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধের (ট্রাইব্যুনাল) অধীনে দণ্ডিত কোনো ব্যক্তি নেই মর্মে দলের প্রধানের ইস্যুকৃত প্রত্যয়নপত্র সংযুক্ত করা হয়নি। 

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব রোববার সমকালকে বলেন, প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে ইসি থেকে এনসিপির নিবন্ধন আবেদনে কয়েকটি বিষয়ে ত্রুটি পাওয়ার কথা জানানো হয়েছে। সেগুলো সংশোধনের পর্যায়ে এনে নির্ধারিত সময়ে তথ্য-প্রমাণাদি জমা দেবেন তারা।  

অন্য দলগুলোর যে অবস্থা

নিবন্ধনের আবেদন করে প্রাথমিক বাছাইয়ে ফেল করা দলগুলোর মধ্যে অন্তত ৩০টি দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছে সমকাল। সবাই ইসির চিঠিতে তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

সংবিধানবিষয়ক জনস্বার্থ পার্টি– সংগঠন (সিএপিপি) আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম তালুকদার জানান, ইসি থেকে জানানো হয়েছে দলীয় গঠনতন্ত্র জমা দিতে হবে। জেলা-উপজেলা কার্যালয় ও কমিটির শর্ত পূরণ করতে হবে। এ ছাড়া ইসির নিবন্ধনের জামানত বাবদ যে পাঁচ হাজার টাকা তারা জমা দেননি, সেটিও চাওয়া হয়েছে। 

একইভাবে নিবন্ধনের আবেদন করা বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটি, জেলা ও উপজেলা দপ্তরের বিষয়ে কোনো দলিল জমা দেয়নি। এ দলটি কোনো শর্ত পালন করেনি। বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টিও (বাজাপা) জেলা ও উপজেলা দপ্তরের দলিল এবং নিবন্ধনের শর্ত প্রতিপালন ছাড়াই আবেদন জমা দিয়েছে। বাংলাদেশ তৃণমূল জনতা পার্টির কেন্দ্রীয়, মহানগর ও জেলা কার্যালয়ের জন্য একটি ঠিকানা দিয়েছে। এ দলটি ৫টি নির্দেশনা পালন করেনি। বাংলাদেশ মুক্তি ঐক্যদলের আরপিওর ১০টি শর্ত মানেনি।

এছাড়া শর্ত পূরণে ব্যর্থ বাংলাদেশ জনজোট পার্টি (বাজপা), বাংলাদেশ-তিসারী-ইনসাফ দল, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, বাংলাদেশ ইউনাইটেড পার্টি, বাংলাদেশ আজাদী পার্টি (বিএপি), জাতীয় ন্যায়বিচার পার্টি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট পার্টি (বিডিএম), দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন, জনতার অধিকার পার্টি, বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস) এবং বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি)। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইসির চিঠির জবাব দেওয়ার কথা জানিয়েছেন দলগুলোর নেতারা।