Image description

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের নির্দেশ দিয়েছেন যেন তারা বিদেশি নির্বাচনের স্বচ্ছতা বা নিরপেক্ষতা নিয়ে কোনো মন্তব্য না করেন। এই নির্দেশনার মাধ্যমে ওয়াশিংটন দীর্ঘদিনের প্রতিষ্ঠিত নীতি থেকে সরে আসছে, যেখানে তারা বিশ্বজুড়ে অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের প্রসারে কাজ করে আসছিল।

বৃহস্পতিবার সব কূটনীতিককে পাঠানো মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি অভ্যন্তরীণ তারবার্তায় এই তথ্য প্রকাশ করেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে ওই তারবার্তায় বলা হয়েছে, কোনো নির্বাচনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক ‘সুস্পষ্ট ও জোরালো’ স্বার্থ জড়িত না থাকলে মন্ত্রণালয় আর ওয়াশিংটন থেকে নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো বিবৃতি বা সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ইস্যু করবে না। এর পরিবর্তে, মন্তব্য করার উপযুক্ত সময় এলে, বার্তা হবে সংক্ষিপ্ত এবং বিজয়ী প্রার্থীকে অভিনন্দন জানানোই প্রধান গুরুত্ব পাবে। প্রয়োজন মনে হলে যৌথ পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক স্বার্থের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।

এই ‘সংবেদনশীল’ তারবার্তায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা, বৈধতা কিংবা দেশগুলোর গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সম্পর্কে মত দেওয়া এড়ানো উচিত’।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো বার্তা গেলে তা সরাসরি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের কাছ থেকে আসবে, এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সুস্পষ্ট অনুমোদন ছাড়া মার্কিন কূটনীতিকদের এ ধরনের বিবৃতি দিতে নিষেধ করা হয়েছে।

এই নির্দেশনার পেছনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘অহস্তক্ষেপবাদী’ দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করছে। তারবার্তায় সৌদি আরবে ১৩ মে দেওয়া ট্রাম্পের একটি ভাষণেরও উল্লেখ আছে, যেখানে তিনি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো কীভাবে চলবে তা নিয়ে ‘পশ্চিমা হস্তক্ষেপবাদীদের’ কথাবার্তার সমালোচনা করেছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো কীভাবে পরিচালিত হবে তা এখন ওয়াশিংটনের দেখার বিষয় নয়; যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র আগ্রহ হচ্ছে দেশগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র এই দৃষ্টিভঙ্গিকে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসনের ‘রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব’ জোরদারের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন।

দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটন মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে তাদের পররাষ্ট্র নীতির মূল উপাদান হিসেবে প্রচার করে আসছিল। তবে ট্রাম্পের আমলে এসে যুক্তরাষ্ট্রকে এই নীতি থেকে ক্রমশ সরে আসতে দেখা যাচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা এই নীতিকে অন্য দেশের কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন এবং এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মানবাধিকার ব্যুরোকে নতুন করে সাজানো হয়েছে।

 

বর্তমানে, ট্রাম্প প্রশাসন ইউরোপজুড়ে ডানপন্থি নেতাদের আটকাতে বিভিন্ন দেশের ‘নিপীড়নমূলক আইনের’ সমালোচনা করে যাচ্ছেন, বিশেষ করে যেখানে কট্টর অভিবাসনবিরোধী মতবাদকে দমন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।