Image description

বান্দরবানে আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকরা। এই আসনটি ছয়বার আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। এবার এটি দখলে নিতে মরিয়া বিএনপি। প্রত্যাশা রয়েছে জামায়াতেরও।

আর দীর্ঘদিনের শক্ত অবস্থান জানান দিতে চায় আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল জনসংহতি সমিতি। তবে এখন পর্যন্ত মাঠে সক্রিয় দেখা গেছে বিএনপি-জামায়াতকে। এছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা নির্বাচনি প্রচারণায় না থাকলেও কমিটি গঠন ও দল গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এর বাইরে ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী বাছাই করেছে, তবে চূড়ান্ত করেনি কাউকে। তবে দলটি জোটবদ্ধ নির্বাচনের কথাও ভাবছে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনো ঠিক হয়নি। নির্বাচন সামনে রেখে হাইকমান্ডের নির্দেশে দল গোছানো শুরু করেছে বিএনপি। নির্বাচনি প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সাংগঠনিক শক্তি, শৃঙ্খলা এবং গতিশীলতা বৃদ্ধিতে মনোযোগ দিয়েছে দলটি। দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজেদের অবস্থান জানান দিতে প্রতিদিন মাঠ পর্যায়ে রাজনৈতিক নানা কর্মসূচির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। বিশেষ করে জেলা বিএনপির সভাপতি রাজপুত্র সাচিং প্রু জেরী এবং সাবেক সভাপতি মাম্যাচিং আসন্ন সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকার শীর্ষে রয়েছেন। বহু বছর পর বান্দরবান জেলা বিএনপি এখন ঐক্যবদ্ধ। তবুও শীর্ষ নেতাদের অংশগ্রহণে পৃথক কিছু দলীয় কর্মসূচি হচ্ছে। যা নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে হাইকমান্ডের নির্দেশ অনুযায়ী আসন্ন সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্র ঘোষিত প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করবেন সবাই, এমন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও সাবেক পৌর মেয়র জাবেদ রেজা বলেন, অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় জেলা বিএনপি এখন ঐক্যবদ্ধ। হাইকমান্ড তৃণমূলের জনপ্রিয়তা যাচাই করে যাকে যোগ্য মনে করে প্রার্থী করবে, তাকে বিজয়ী করা হবে। এদিকে নিজ থেকে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা না দিলেও দলের একটি অংশ চায় তরুণ নেতা রেজা যেন মনোনয়ন চান।

জানা যায়, সাত বছর পর চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি বান্দরবান জেলা বিএনপির ৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে সাবেক সংসদ সদস্য সাচিং প্রু জেরীকে আহ্বায়ক ও সাবেক পৌর মেয়র জাবেদ রেজাকে সদস্যসচিব করা হয়। এ ছাড়া কমিটিতে সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক ওসমান গনি, যুগ্ম-আহ্বায়ক মুজিবুর রশীদ এবং সাবেক এমপি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাম্যাচিংকে সদস্য করা হয়। পরবর্তী সময়ে ৪ জুন আংশিক সেই কমিটির সদস্য সংখ্যা ৪৬ জন করে আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্র।

পার্বত্য বান্দরবান হলো জাতীয় সংসদের ৩০০ নম্বর আসন। এই আসন গঠিত সাতটি উপজেলা, দুটি পৌরসভা ও ৩৪টি ইউনিয়ন নিয়ে। ১৯৯১ থেকে ছয়বার এই আসনে আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন । বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি, অতীতে দলীয় কোন্দলের কারণে এই আসনটি বিএনপির হাতছাড়া হয়েছিল। এই কোন্দল এখনো বিদ্যমান। এমন পরিস্থিতিতে আশাবাদী হয়ে উঠেছে অন্য দলগুলো।

জানা যায়, ১৯৯১ সালে এই আসনে এমপি হন আওয়ামী লীগ নেতা বীর বাহাদুর। এরপর তিনি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে সাচিং প্রু জেরীর কাছে হেরে যান। পরবর্তী সময়ে সে বছর হওয়া নির্বাচনে বীর বাহাদুরের কাছে হেরে যান সাচিং প্রু জেরী। এরপর থেকেই এই আসনে এমপি ছিলেন বীর বাহাদুর।

বিএনপি নেতাকর্মীদের মতে, ধানের শীষ প্রতীক পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক সাচিং প্রু জেরী। তিনি বান্দরবান সদর উপজেলা ও পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া তিনি এ জেলায় দলীয় বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। সাচিং প্রু জেরী বলেন, আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর তৃণমূলে দল গোছানোর কাজ চলছে। প্রার্থীর বিষয়ে দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত মানতে সবাই ঐক্যবদ্ধ।

বোমাং সার্কেলের পুত্রবধূ ও সাবেক জেলা বিএনপি সভাপতি মাম্যাচিংও মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর ৫ম ও ষষ্ঠ জাতীয় সংসদের (মহিলা) সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি। এ ছাড়া বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক ট্রাস্টি ও জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ তিনি বিএনপির উপজাতিবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। মাম্যাচিং বলেন, প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তবে আমার জানামতে এখনো কেন্দ্র থেকে বান্দরবানে কাউকে সিগন্যাল দেওয়া হয়নি। কেন্দ্র যাকে ভালো মনে করে তার পক্ষে কাজ করতে হবে। বিএনপির ঐক্য ধরে রাখার জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির সদস্য সচিব জাবেদ রেজা বলেন, সাচিং প্রু জেরী ও মাম্যাচিং দলের শীর্ষ ব্যক্তি, তারাই অগ্রধিকার পাবেন।

এই আসনে মনোনয়ন চাইবেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক ডা. সারোয়ার আলম। তিনি জেলার লামা উপজেলার ফাইতং এলাকার বাসিন্দা। তিনি বলেন, শহীদ জিয়ার আদর্শ ধারণ করে আমি ২৩ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ২০১৮ সালে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম। এবার আমি এই আসন থেকে মনোনয়ন চাইব।

বিএনপিতে যখন মনোনয়নপ্রত্যাশীর ছড়াছড়ি তখন জামায়াত অনেকটাই নির্ভার। কারণ দলটি এই আসনে ইতিমধ্যে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি এ ঘোষণা দেওয়া হয়। তিনি হলেন— জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির, জেলা পরিষদ সদস্য ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা, আলীকদম এবং সদর উপজেলায় জামায়াতের আলাদা ভোট ব্যাংক রয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে দলটি ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে।

জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী আবুল কালাম বলেন, আমি নেতা হতে চাই না, জনগণের সেবক হতে চাই। আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামী শক্তিকে অর্ধেকের বেশি আসন নিয়ে শাসনব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এজন্য জামায়াতে ইসলামী ভোটের মাঠে কাজ করছে।

বান্দরবানে এবার আলোচনায় রয়েছে আঞ্চলিক দল জনসংহতি সমিতি। উপজাতি অধ্যুষিত পাহাড়ের ভোটের মাঠে এই দলটির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। দলটি এবার নির্বাচনে অংশ নেবে বলে জানিয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতা কেএস মং এই ঘোষণা দেন। তিনি জানান, জনসংহতি সমিতি নির্বাচনে অংশ নেবে। প্রার্থী হিসেবে দল আমাকে মনোনীত করলে ভোটের মাঠে লড়ব।

স্থানীয়দের মতে, জেএসএস নির্বাচন করলে রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচিসহ উপজাতীয়দের ভোট দলটি পাবে।

এই আসনের জন্য প্রার্থী বাছাই করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও। তবে তারা এখনো কাউকে প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করেনি। জেলা কমিটির সভাপতি মাওলানা আবুল কালাম জানান, আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে বৈঠক হয়েছে। যেখানে তিনজন সম্ভাব্য প্রার্থীর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি ছাড়াও বাকি দুজন হলেন— কাজী মজিবর রহমান ও মুফতি শওকতুল ইসলাম। পরবর্তী সময়ে একক প্রার্থী ঘোষণা করা হবে।

স্থানীয় ভোটারদের মতে, ইসলামী দলগুলো জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করলে এবং জেএসএস একক প্রার্থী দিলে বড় দলগুলোর একক আধিপত্য অনেকটা কমবে।