Image description
নির্বাচনমুখী হয়ে উঠছে দেশের রাজনীতি

‘যারা অতীত মনে রাখতে পারে না, তাদের সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে হয়’ (জর্জ সান্তায়না)। ‘ইতিহাস নিজেকে পুনরাবৃত্তি করে, প্রথমটি ট্র্যাজেডি হিসেবে, দ্বিতীয়টি প্রহসন হিসেবে’ (উইনস্টন চার্চিল) এই উক্তি দু’টি ইঙ্গিত করে যে, ‘ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিলে একই ভুল বারবার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে’। প্রশ্ন হচ্ছেÑ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বিএনপি কি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরিণতির ইতিহাস ভুলে গেছে? ’৯০-এর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ’৯১ সালের নির্বাচনের সময় শেখ হাসিনা ধরেই নিয়েছিলেন ক্ষমতায় যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের কে কোন্ মন্ত্রণালয় নেবেন সে তালিকা পর্যন্ত করা হয়। শেখ হাসিনা নিজেকে ভাবি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রশাসনে আদেশ-নির্দেশ দিতে থাকেন। নির্বাচনের দিন হাসিনা ছিলেন উল্লসিত। ভোট গণনার পর দেখা গেলে নৌকার বিপর্যয় ঘটেছে এবং ধানের শীষ প্রতীকের বিপুলসংখ্যক প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। বিএনপি সরকার গঠন করে এবং দেশের ইতিহাসে প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হন আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। নির্বাচনের ফলাফলে কিংকর্তব্যবিমূঢ় শেখ হাসিনা ‘সূক্ষ্ম কারচুপি’ অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগ থেকে ‘পদত্যাগ নাটক’ করেন। পরের ইতিহাস সবার জানা।

’৯১ সালের ওই নির্বাচনের ফলাফল জানান দেয় নদীমাতৃক বাংলাদেশ হচ্ছে জোয়ার ভাটার দেশ। জোয়ার ভাটার মতো এদেশের মানুষের মন। রাজনৈতিক দলগুলোতে কখন জনসমর্থন বাড়ে আর কখন কমে তা বলা দুস্কর। চলমান সময়ের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে নির্বাচন হলে বিএনপি বিপুলসংখ্যক আসন নিয়ে ক্ষমতায় যাবে। বিএনপির সমপর্যায়ের রাজনৈতিক শক্তি এবং জনসমর্থন কারোই নেই। কিন্তু বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় দলটির নেতাদের কর্মকৌশল দেখে সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনদের অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, আগামী নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপি কি তাদের এই জনসমর্থন ধরে রাখতে পারবে তো? দিল্লির নীল নকশা অনুযায়ী জামায়াতকে নানাভাবে ক্ষমতায়িত করা হচ্ছে; ইসলামী দলটিকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে পর্যন্ত যেতে দেখা যাচ্ছে অথচ বিএনপির নেতারা ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত আলেম সমাজের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। বিএনপি কি আলেম সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে?

শুধু রাজনীতি এবং ভোটের রাজনীতি দু’টি ভিন্ন জিনিস। ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের নিজস্ব কর্মী সমর্থনদের বাইরে যেমন সমগ্র হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ভোট ‘নৌকার রিজার্ভ ভোট’ বিবেচনা করা হতো; তেমনি দরবার শরীফের পীর-মাশায়েখ, খানকা-মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক-আলেম ওলামাদের ভোটকে বিএনপির ‘ধানের শীষের রিজার্ভ ভোট’ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে রাজনীতির মাঠে দেখা যাচ্ছে দেশের ইসলামী চিন্তাবিদ, স্কলার ও আলেম সমাজের সঙ্গে বিএনপির যোজন যোজন মাইল দূরত্ব। রমজানের আগে নির্বাচনের আয়োজন হলে ভোটের মাত্র কয়েক মাস বাকী। জামায়াত তাদের তিনশ’ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। দলটি বিপরীত মাজহাবে বিশ্বাসী ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছে জোট গঠনের চেষ্টায়। আলেম ওলামাদের ভোট পাওয়ার লক্ষ্যে নানান কৌশল করছে। অথচ বিএনপি কিছু নেতার ভাবখানা এই যে বিএনপি ক্ষমতায় যাবেই। জনগণ এবং আলেম-ওলামাদের কাছে যাওয়ার কি দরকার?

ওলি আউলিয়ার এই বাংলাদেশে হাজার হাজার দরবার শরীফ, খানকা শরীফ রয়েছে। এসব দরবারে পীর ও ইসলামী স্কলারগণ নির্বাচনে প্রার্থী হন না। এসব দরবার কেন্দ্র করে পীর-ওলি-আউলিয়াদের লাখ লাখ মুরিদান, আশেকান রয়েছেন। দেশে ইসলামী ধারার কোনো বড় রাজনৈতিক সংগঠন না থাকায় জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী বিএনপিকে ভোট দিয়ে থাকেন তারা। এছাড়াও মাদরাসার শিক্ষার্থী-শিক্ষকরাও বিএনপিকে ভোট দিয়ে থাকেন। এ ধরনের দু’-একজন পীর ও তার দল নির্বাচন করলেও ৯৯ ভাগ দরবার শরীফের পীরগণ ভোট করেন না; তাদের মুরিদান বিএনপিকে ভোট দিতে অভ্যস্ত। অথচ ‘বিএনপির ভোট ব্যাংক’ হিসেবে এই আলেম ওলামা ও দরবার শরীফের আশেকান-মুরিদানদের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক আলগা হয়ে যাচ্ছে। আলেমদের প্রায় সব ভোটারই ভারতবিরোধী হিসেবে পরিচিত। জিয়াউর রহমান সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহ হির রাহমানের রাহিম’ সংযোজন করায় পীর-মশায়েখরা বিএনপিকে ধরে নেন নিজেদের পক্ষ্যের রাজনৈতিক শক্তি। দেশে যখন একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশালের জয়জয়কার তখন জিয়াউর রহমান ১৯ দফা কর্মসূচির নিয়ে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। রাজনীতিতে মধ্যপন্থী দল হিসেবে পরিচিত হলেও বিএনপি কার্যত জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী রাজনৈতিক সংগঠন। বর্তমানে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন এমন কিছু নেতার বামপন্থী চেতনা ও ভারতপ্রেমী মানসিকতার কারণে ইসলামী ধারায় বিশ্বাসী এই বিপুলসংখ্যক বিএনপির ভোটারদের উপেক্ষা করছে বিএনপি!

বিএনপির বিট করেন এমন কয়েকজন সাংবাদিক জানান, তারেক রহমান সবার ঘরে ঘরে যাওয়ার জন্য সব শ্রেণির নেতাকে নির্দেশনা দিলেও দলের ভিতরে ‘আলেম-ওলামা ও ইসলাম বিদ্বেষী চক্র’ গড়ে উঠেছে। তারা তথাকথিত প্রগতিশীলতার নামে ইসলামী ধারার ছোট ছোট দল, দরবার শরীফের পীর-মশায়েখদের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব সৃষ্টি করে রাখছে। আলেমদের মধ্যে কেউ কেউ অভিযোগ করছেন দিল্লির চেতনা ধারী বামপন্থার কিছু নেতা বিএনপি আলেম-ওলামাদের সঙ্গে সেতুবন্ধন করুক চায় না। গত মে মাসের মাঝামাঝি সময় বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বার বার রাজনৈতিক রঙ বদলকারী কিশোরগঞ্জের অ্যাড. ফজলুর রহমান একটি টিভির টকশোতে আলেমদের নিয়ে বিয়োগদার করে বলেন, ‘দেশে মোল্লাতন্ত্র শুরু হয়েছে। মা-বোনদের বলবো আপনারা আলেমদের বিয়ে করবেন না। বিবাহিত মা-বোনদের বলবো আলেমদের পেটে ধরবেন না’। ছাত্রলীগ থেকে আওয়ামী লীগ অতঃপর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এবং ড. ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীর পিডিপি হয়ে বিএনপিতে আসা এই নেতার আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতা সম্পর্কে আপত্তিকর বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করা হয়। দেশের ইসলামী দলগুলো ছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনরা ফজলুর রহমানের কা-জ্ঞানহীন ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন তীব্র ভাষায়। কিশোরগঞ্জে অবাঞ্ছিত ঘোষিত ফজলুর রহমান এখনো শেখ মুজিবের চেতনা ধারণ করে ‘ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের চেয়ে হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকার ভালো ছিল’ দাবি করে বক্তব্য দিচ্ছেন। অথচ রহস্যজনকভাবে তার বিরুদ্ধে বিএনপি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। অথচ দলের কিছু নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজী, দখলদারিত্বের অভিযোগ উঠলে এবং এ নিয়ে দিল্লিপন্থী গণমাধ্যমের ব্যাপক প্রচারণায় ওই নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আওয়ামী ঘড়ানার এই ফজলুর রহমান মার্কা আরো কিছু নেতা বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে আরো রয়েছে। মূলত তারা আলেমদের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব সৃষ্টির আত্মঘাতি পথে হাটছেন?

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনার পলায়ন ও ‘আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মৃত্যু’র পর বিএনপির নেতারা ধরেই নিয়েছেন নির্বাচন হলে তারা বিপুল পরিমাণ আসন নিয়ে সংসদে যাবেন। অনেকটা ’৯১ সালের নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের মতোই। কিন্তু অতি বিশ্বাস আর প্রতিপক্ষকে খাটো করে দেখায় আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে চরম বিপর্যয়ে পড়তে হয়েছে। এটা ঠিক দীর্ঘ ১৫ বছর বিএনপির লাখো নেতাকর্মী জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। গুন-খুন-কারাগার, জুলুম নির্যাতন বিএনপির ওপর দিয়ে গেছে। ১৫ বছর দলকে দ্বিখ-িত করার চেষ্টা করে হাসিনাকে ব্যর্থ হতে হয়েছে। জনসমর্থন ও সাংগঠনিকভাবে বিএনপির আশপাশে কোনো দল নেই। নির্বাচন হলে বিএনপি বিপুলসংখ্যক আসন পাবে অনেকেই মনে করছেন। কিন্তু প্রতিপক্ষকে জামায়াত নানাপন্থায় শক্তি সঞ্চয় করছে। নির্বাচনে বিএনপিকে ঠেকাতে জামায়াত বিভিন্ন দলের সঙ্গে জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তারা ইসলামের বিপরীত আকিদ্বায় বিশ্বাসী ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বিভিন্ন দলের সঙ্গে নির্বাচনী জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। নিজেদের শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে নির্বাচন পেছানো এবং আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিত্ব আগামী সংসদে সুনিশ্চিত করতে আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন (পিআর) দাবি করছে। আলেম সমাজের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব কাজে লাগিয়ে জামায়াত ইসলামী ধারার দলগুলোকে নিজেদের জোটে নেয়ার চেষ্টা করছে। দলটির নেতারা বিদেশে বিভিন্ন শক্তিকে নিজেদের পক্ষ্যে নেয়ার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠেছে। এমনকি দিল্লির সমর্থন কাজে লাগাতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জামায়াতে নিচ্ছে। শুধু কি তাই! বিএনপির মূল প্রতিদ্বন্দ্বি এনসিপি সারাদেশে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করছে। উত্তরাঞ্চলের রংপুর থেকে শুরু করে দেশের সবগুলো জেলা ঘুরে দলটির নেতারা সাধারণ মানুষকে নিজেদের পক্ষে নেয়ার মিশনে নেমেছে। গণমাধ্যমের খবরে দেখা যাচ্ছে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া এনসিপির নেতারা যেখানে যাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ তাদের সমাবেশে আসছেন এবং সমাবেশ সফল করছেন। ফলে বিএনপির যেসব নেতা ভাবছেন নির্বাচন হলেই বিপুলসংখ্যক আসন নিয়ে ক্ষমতায় যাব তাদের এতো আত্মবিশ্বাসী হওয়া উচিত নয়। গত ৭ জুলাই সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) যে নির্বাচনী জরীপ প্রকাশ করেছে তা নিয়ে বিএনপির স্বপ্নে বিভোগ হওয়া ঠিক নয়। কারণ জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে, ভোটার এবং ভোট ব্যাংক আলেম-ওলামাদের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করলে প্রতিপক্ষ তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলবে। আবার জামায়াতের যেমন তিনশ’ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী দিয়েছে নির্বিঘেœ। বিএনপির সে অবস্থা নেই। প্রতিটি আসনে বিএনপির ৪ জন থেকে ৬ জন যোগ্য প্রার্থী রয়েছে। ফলে প্রার্থী মনোনয়নে বিএনপিকে কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হবে।

পতিত হাসিনা ১৫ বছর ইসলামী ধারার দলগুলোকে গালিগালাজ করতেন এবং আলেম-ওলামাদের জঙ্গী প্রমাণে মরিয়া ছিলেন। তারপরও ভোটের হিসেবে বিবেচনায় দলের একাধিক নেতা ও একাধিক মন্ত্রীকে ইসলামী ধারার দল, সংগঠন ও আলেমদের ম্যানেজ করে রাখার জন্য অ্যাসাইনমেন্ট দিতেন। একাধিক মন্ত্রী ও সিনিয়র নেতার কাজই ছিল আলেম-ওলামা-দরবার শরীফের পীরদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের সুসম্পর্ক গড়ে তোলা। দিল্লির প্রেসক্রিপশনে চলা আওয়ামী লীগ আলেমদের জঙ্গী হিসেবে অবিহিত করলেও ভিতরে ভিতরে আলেম-পীর মশায়েখের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন। অথচ বিএনপির যেসব নেতার সঙ্গে আলেম সমাজের প্রতিনিধিদের সম্পর্ক রয়েছে তাদের কোণঠাসা করে রাখা হচ্ছে।

বিএনপির সঙ্গে ২০ দলীয় জোটে ছিলেন এমন একাধিক ইসলামী ধারার দলের নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জামায়াত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও বিএনপি থেকে কেউ যোগাযোগ করেনি। দু’জন সিনিয়র নেতা আক্ষেপ করে বলেন, আমরা বিএনপির সঙ্গে ছিলাম কিন্তু দল হিসেবে ছোট। ছোট দল হওয়ায় ইচ্ছা করলেও বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি না। অবশ্য তিনি আশা করছেন অবশ্যই বিএনপি যোগাযোগ করবেন।
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে সবচেয়ে বেশি নির্মমতার শিকার হয়েছে এদেশের আলেম-ওলামা ও ইসলামপন্থী জনগণ এবং বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি। ফ্যাসিবাদের পতনের পর একটি জাতীয় ঐক্যমত তৈরি হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বড় রাজনৈতিক দলের জন আকাক্সক্ষা বিরোধী কর্মকা- এবং কিছুটা পারস্পরিক হেইট পলিটিক্স চর্চার কারণে এই ঐক্যে ফাটল সৃষ্টি হচ্ছে। বড় দল হিসেবে বিএনপি যথেষ্ট উদারতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ইসলামপন্থী দলগুলোর সাথে কাছাকাছি অবস্থানে আসার বিপরীতে দূরত্ব তৈরি করেছে। ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই ক্ষমতাসীন হওয়ার মানসিকতাজনিত কর্মকা-ে বিএনপিকে বিতর্কিত করে তুলেছে। বামপন্থীদের সাথে যতটা সখ্যতা তারা বজায় রেখে চলেছেন ইসলামপন্থীদের সাথে ঠিক ততটাই দূরত্ব রাখছেন। এই পলিসি আগামী জাতীয় নির্বাচনে তাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

ইসলামী মূল্যবোধের শক্তি হিসেবে বিএনপি ইসলামের পক্ষের শক্তিগুলোর সাথে মূল্যায়নের ও সহাবস্থানের সম্পর্ক তৈরি করলে নিজেরাই লাভবান হবে। আমাদেরকে ভুলে গেলে চলবে না যে, ব্যাপক রক্তপাত, প্রাণহানি ও বিশাল আত্মত্যাগের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের যে প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে তাতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে দেশ জাতির কল্যাণে কাজ করতে হবে। জাতি কখনো আবার ও ফ্যাসিবাদ স্বৈরাচার কিংবা একনায়কতন্ত্রের যুগে ফিরে যেতে চায় না। গণমানুষের এই আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে না পারলে রাজনীতিবিদদেরকে এর চরম মাশুল দিতে হবে।

অবশ্য দেশের রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করেন এমন বিজ্ঞজনেরা বলছেন, বাইরে থেকে অনেকেই অনেক সমালোচনা করতে পারি। ভিতরের চিত্র জানিনা। এতোদিন সবাই নিজস্ব রাজনীতি করেছে। বিএনপিও তাই করছে। সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি। নির্বাচনী হাওয়া শুরু হলে বিএনপি অবশ্যই ভোট ব্যাংক হিসেব পরিচিত ইসলামী ধারার দল, আলেম-ওলামা, পীর মশায়েখদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। বিএনপি নেতারা জানান, দেশের কারা ধানের শীষের ভোটার। বিশেষ করে তারেক রহমান যে ভাবে দল পরিচালনা করছেন তিনি অবশ্যই পিতার মতোই আলেমদের কাছে টেনে নেবেন। আর ১৫ বছর ধরে নির্যাতন আলেমরাও বিএনপির বাইরে যাবে না। কারণ বিএনপি ও ওই পীর মশায়েখ চিন্তা চেতনায় একে অপরের পরিপূরক।