
জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ তিন নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে আল্টিমেটাম দিয়েছেন বহিষ্কৃত নেতারা। বহিষ্কৃত নেতাদের নেতৃত্বে গঠিত “বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া”র সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা বিভাগীয় অতিরিক্ত মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা। গতকাল রাজধানীর গুলশানে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ ঘোষণা দেন। এসময় দলটির আরও বেশ কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য, নারায়ণগঞ্জ ও সোনারগাঁয়ের অনেক নেতাকর্মী একাত্মতা প্রকাশ করেন এবং অবিলম্বে তাদের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করার দাবি জানান।
একাত্মতা প্রকাশ করে লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আমাকে রাজনীতি শিখিয়েছেন। জাতীয় পার্টি পরিবার গড়ে গিয়েছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি আরও বলেন, জাতীয় পার্টি যদি ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহলে মানুষ বুঝবে জাতীয় পার্টি একটি ফ্যাক্টর। যারা দল বিক্রি করে স্বার্থ হাসিল করেছে, তাদের বিদায় করতে না পারায় আমি ক্ষমা চাইছি। জাতীয় পার্টি আজও ভাঙেনি, আমরা তৃণমূলকে সঙ্গে নিয়ে একটি শক্তিশালী দল গঠনের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি। কিছু মানুষ একতা চায় না, তারা চেয়ারম্যানের কান ভারী করছেন। জাতীয় পার্টি কোনো ব্যক্তির নয়।
এসময় সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এক সময় বলেছিলেন, ‘আমি অনেক কষ্ট করে দলকে দাঁড় করিয়েছি, যেন এটি বিলুপ্ত না হয়। আজকের বাস্তবতা দেখে মনে হচ্ছে, দলের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। জিএম কাদেরের কর্মকাণ্ডে দল ধ্বংসের পথে যাচ্ছে। হঠাৎ করেই ৪৫ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে মহাসচিবের সম্মতি ছাড়াই। মনোনয়নপত্র বিক্রির হিসাব চাওয়ায় অনেককে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি বলেন, জিএম কাদের গণতন্ত্রের কথা বলছেন, অথচ গঠনতন্ত্রে স্বৈরাচারী ধারা রেখে দিয়েছেন। এরশাদ সাহেব কখনো ক্ষমতার লোভ করেননি, রক্তপাত এড়াতে তিনি ক্ষমতা ছেড়ে দেন। আপনার সৎ সাহস থাকলে কাউন্সিল ডাকুন, আমি নির্বাচনে দাঁড়িয়ে আপনাকে হারিয়ে দেবো। এমনকি আপনার স্ত্রীও আপনাকে ভোট দিবেন না।
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, বেআইনিভাবে আমাদের ১০ জনকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আমরা প্রত্যেকে দলের কাউন্সিলর ছিলাম। দলের কাউন্সিলে উনি যেন আবার চেয়ারম্যান হতে পারেন সে হীনম্মন্যতা থেকে আমাদেরকে দল থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। নিয়ম হলো মহাসচিব চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলাপ করে মিটিং ঢাকবেন। অথচ আমাকে কিছু জানানোই হয়নি। কোরামের জন্য নতুন ৫ জনকে প্রেসিডিয়াম সদস্য করেছেন। আপনার সাহস থাকলে আপনি কাউন্সিল করেন, কাউন্সিলে যাবো আমরা। তিনি আরও বলেন, দলের গঠনতন্ত্রের ২০-এর ক ধারা এটা স্বৈরতান্ত্রিক ধারা আমরা বলেছিলাম বাদ দিতে, আপনি বাদ দেননি। গত নির্বাচনে জিএম কাদেরের স্ত্রীর মনোনয়নের কারণে লিয়াকত হোসেন খোকার মনোনয়ন বাদ দিয়েছিলেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনে যাওয়া আমাদের ভুল ছিল; এজন্য আমরা জাতির কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।
কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, যারা এখানে একত্রিত হয়েছেন তাদেরকে আমি স্বাগত জানাই। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আমাকে বলে গিয়েছে আমি হয়তো থাকবো না; তুমি দলকে ধরে রেখো। ক্যান্টনমেন্টে আমার অনেক সমর্থক রয়েছে। জাতীয় পার্টি একটি শক্তিশালী দলে রূপান্তরিত করবো আমরা ইনশাআল্লাহ।
সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, ৬৮ হাজার গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে এ কথা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন। তিনি মসজিদ, এতিমখানা, মাদ্রাসার বিদ্যুৎ বিল মওকুফ করেছেন। আল্লাহ ছাড়া এমন কোনো শক্তি নেই যে জাতীয় পার্টিকে ভাঙবে। জিএম কাদেরের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনি যদি এরশাদ সাহেবের ভাই হয়ে থাকেন তাহলে দ্রুত মুজিবুল হক চুন্নু, রুহুল আমিন হাওলাদার, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সাহেবের সঙ্গে বসে সমস্যার সমাধান করুন। না হলে ১৪ তারিখের পর দেখবেন সারা বাংলাদেশের সকল নেতাকর্মী আপনাকে বয়কট করবে। রাজনীতিতে জিএম কাদের আমার কাছে বাচ্চা। নিজের থেকে দল বড় অথচ আপনার বউকে বড় করেছেন। কাউন্সিল ছাড়া জাতীয় পার্টির যারা আছেন তারা অবৈধ।
সংবাদ সম্মেলনে একাত্মতা প্রকাশ করেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য- মাশরুম মাওলা, জহিরুল ইসলাম জহির, আরিফ হোসেন, নাজমা আক্তার, সাইদুর রহমান টেপা, মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, মোস্তফা আল মাহমুদ, সোলায়মান আলম সেতু, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, ভাইস চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ ও শেখ আলমগীর হোসেন, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সম্রাট শাহজাহান, নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি সানাউল্লাহ সানু, নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সাধারণ সমপাদক রিপন মাওয়াল, ঢাকা উত্তরের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, মিজানুর রহমান মিজানসহ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁও উপজেলা আহ্বায়ক লিটু প্রমুখ।