
রাজধানীর মিরপুরের পশ্চিম মণিপুরে ছাত্রদল ও যুবদলের ১০–১৫ জনের একটি দল গতকাল রোববার রাতে একটি বাসায় যায়। ৫৬ বছর বয়সী সিরাজুল ইসলাম নামের ওই ব্যক্তি একসময় শ্রমিক লীগ করতেন। রাত ১০টায় তাঁর বাসায় ঢুকে ছাত্রদল ও যুবদলের নেতারা বলেন, ‘তুই আওয়ামী লীগ করিস, আওয়ামী ফ্যাসিস্টের লোক, তোরে পুলিশ ধরাইয়া দেব, বাঁচতে হলে ২০ লাখ টাকা দে।’ এরপর চলতে থাকে তাঁদের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান, অন্যদিকে সিরাজুলের পরিবারের পক্ষ থেকে কাকুতি–মিনতি। রাত তিনটার সময় ওই বাসা থেকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে বের হন ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা–কর্মীরা।
বাসায় ঢুকে চাঁদাবাজির খবর পেয়ে ওই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় মিরপুর থানা–পুলিশের একটি দল। তারা এই চাঁদাবাজদের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করে। চাঁদাবাজির ১৬ হাজার টাকা ও একটি মোটরসাইকেল তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। বাকি টাকা নিয়ে পালিয়ে যান ওই দলে থাকা অন্যরা। পুলিশ ও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
চাঁদাবাজির এ ঘটনায় গ্রেপ্তার চারজনের মধ্যে মিরপুর থানা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আতিকুর রহমান ওরফে মিন্টু (৩৫) এবং যুগ্ম আহ্বায়ক তাবিত আহমেদ আনোয়ার ওরফে আনোয়ার হোসেন তাবিত (৩৫) রয়েছেন। এ ছাড়া গ্রেপ্তার অপর দুজন মো. রতন মিয়া (৩৪) মিরপুরের একটি ওয়ার্ডের যুবদলের সঙ্গে যুক্ত, আর মো. ইসমাইল হোসেন (২৪) মিরপুর থানা ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এ বিষয়ে মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ রোমন আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল গভীর রাতে মণিপুর এলাকা থেকে তাঁর সরকারি নম্বরে ফোন করে জানানো হয়েছিল, পুলিশ পরিচয়ে সিরাজুলের কাছ থেকে চাঁদাবাজি হচ্ছে। এরপরই মিরপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। খবর পেয়ে র্যাবও সেখানে পৌঁছায়। তখন ধাওয়া দিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী জাহানারা ইসলাম আজ সকালে বাদী হয়ে গ্রেপ্তার চারজনসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৮-১০ জনকে আসামি করে মিরপুর মডেল থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা করেছেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ছাত্রদল ও যুবদলের ওই চার নেতা–কর্মীকে আজ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়। পরে তাঁদের কারাগারে পাঠান আদালত।
ঘটনার বিবরণে জাহানারা ইসলামের করা মামলায় বলা হয়, রোববার রাত ১০টার দিকে গ্রেপ্তার করাসহ পলাতক আসামিরা বাসার প্রধান ফটকে এসে কলবেল বাজাতে থাকেন। এ সময় পরিচয় জেনে দরজা খুলে দিলে তাঁরা বাসায় ঢুকে সিরাজুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রীকে জিম্মি করেন। তাঁরা সিরাজুল ইসলামকে ‘তুই আওয়ামী লীগ করিস, আওয়ামী ফ্যাসিস্টের লোক, তোরে পুলিশ দিয়ে ধরাইয়া’ দেব বলে ভয়ভীতি দেখান। তাঁরা সিরাজুলের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা চান। চাঁদা দেওয়া না হলে সিরাজুল ও তাঁর স্ত্রীকে প্রাণে শেষ করে দেবেন বলে ভয়ভীতি দেখান ও হুমকি দেন আসামিরা। তাঁরা প্রাণ বাঁচাতে তাঁদের কাছে থাকা ২০ হাজা টাকা আসামিদের হাতে তুলে দেন। এ সময় আসামিরা বাকি টাকা পরিশোধের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। সিরাজুল ও তাঁর স্ত্রী উপায়ান্ত না দেখে ওই বাড়ির চতুর্থ তলার বাসিন্দার কাছ থেকে তিন লাখ টাকা ঋণ নেন। ওই টাকা পেয়েও আসামিরা বাকি টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন। তখন সিরাজুল তাঁর মোবাইল ব্যাংকিংয়ে থাকা ৩০ হাজার টাকা আসামিদের দিয়ে দেন। এতে তাঁরা শান্ত না হয়ে আরও টাকা চান। একপর্যায়ে সিরাজুল ও তাঁর স্ত্রী তাঁদের ছেলেমেয়ের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেড় লাখ টাকা এনে তাঁদের হাতে তুলে দেন। রাত তিনটার দিকে আসামিরা পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে বের হচ্ছিলেন। এরই মধ্যে পুলিশ ও র্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এ সময় আসামিরা এদিক–সেদিক দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ ও র্যাব চার আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। অন্যরা পালিয়ে যান।