
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দেয়ালে দেখা মিলেছে রহস্যময় এক গ্রাফিতির। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দেয়াল জুড়ে লেখা হয়েছে ‘স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল আসছে’। লাল, সাদা ও কালো রঙে লেখা এই গ্রাফিতি কীসের বার্তা তা নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই শিক্ষার্থীদের মাঝে। তবে এই রহস্যের রহস্য উদঘাটন হয়েছে।
গত শুক্রবার বিকাল থেকেই কার্জন হল, টিএসসি, মধুর ক্যান্টিন, চারুকলা, কলাভবন, হাজী মুহম্মদ মহসিন হল, এ এফ রহমান হল, শেখ মুজিবুর রহমান হল ও জসিমউদ্দিন হলে আশপাশের দেয়ালে ‘স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল আসছে’—এই বাক্যসংবলিত বার্তাটির দেখা মেলে।
এটি দেখে খুব শীঘ্রই ক্যাম্পাসে বড় কিছু ঘটার আশঙ্কা করেন শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ। কেউ বলেন, হয়তো বড় কোনো অঘটন ঘটতে যাচ্ছে ক্যাম্পাসে। আবার কেউ বলেন, হয়তো ছাত্রলীগের কেউ জনমনে ভয় সৃষ্টির চেষ্টা করছে এই গ্রাফিতির মাধ্যমে। এটি কোনো সাংস্কৃতিক বা সৃজনশীল প্রতিবাদের প্রতীকও হতে পারে বলে ধারণা করেন কেউ কেউ।
তবে এই গ্রাফিতির পেছনে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুল ইসলাম খান। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি জানিয়েছেন, জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে তার লেখা একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হতে যাচ্ছে যার নাম ‘স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল: অভ্যুত্থানের অজানা অধ্যায়’। আগামী ২০ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের টিএসসি অডিটোরিয়ামে এই মোড়ক উন্মোচন করা হবে বলে জানান তিনি।
আবিদুল ইসলাম খান বলেন, আমার জুনিয়ররাই মূলত ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দেয়ালে এই গ্রাফিতি অঙ্কনের উদ্যোগ নেয়। এর লক্ষ্য বইয়ের নাম আগে থেকেই মানুষের কাছে পরিচিতি করানো। আর সেটি ইতোমধ্যে হয়েছেও। অনেকের মধ্যেই কৌতূহল দেখেছি এই নিয়ে। নানান জনের নানান ধারণা তৈরি হয়েছে এই গ্রাফিতি নিয়ে। ব্যাপারটি খুব মজার। আমি আশা করছি প্রকাশিত বইটি যখন সবাই পড়বে তখন তারা জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে অনেক অজানা বিষয় জানতে পারবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছেও এটি ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে উপস্থাপিত হবে।
এর আগে আবিদুল ইসলাম খানের ‘প্লিজ কেউ কাউকে ছেড়ে যায়েন না’ শিরোনামে এক গ্রাফিতি বেশ পরিচিতি পায় ক্যাম্পাসে। তার এই গ্রাফিতির উদ্দেশ্য ছিল জুলাইয়ের ঐক্য ধরে রাখা।
তিনি জানান, ৫ আগস্ট সকাল ৯টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুলিশের হামলায় উপস্থিত ছাত্র-জনতা ছত্রভঙ্গ হওয়ার উপক্রম হলে ঢাকা মেডিকেলের নতুন বিল্ডিং এর পাদদেশে ছাত্র-জনতাকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানান। সে সময় তার বক্তব্যের কিছু অংশ ছিল, ‘শুধুমাত্র একটাই কথা, প্লিজ কেউ কাউকে ছেড়ে যায়েন না। এই যুদ্ধের ময়দানে আমাদের সাথে থাকবেন। আমরা এ লড়াইয়ে জিতব কোনও সন্দেহ নেই, আজকেই আমরা জিতব, তবে কেউ ভয় পাবেন না।’
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ক্যাম্পাসে সংঘর্ষে লিপ্ত হলে ৫ আগস্টের সেই ‘প্লিজ কেউ কাউকে ছেড়ে যায়েন না’ এই আহ্বানকে প্রাসঙ্গিক মনে করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দেয়ালে গ্রাফিতি অঙ্কন করেন।