Image description

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, লেখক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ্ বিএনপিকে 'প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল' বলে মনে করেন না। তিনি বলেন, গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বিএনপির ওপর সাধারণ মানুষ যেভাবে ভরসা করতে পারতেন, তা তারা করছেন না, বা হচ্ছে না। দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে প্রচুর অপকর্মের অভিযোগ আসছে। বিএনপি সেভাবে সংগঠিত নয় বলেও তার অভিমত।

নাগরিক সমাজের মধ্যে বিএনপির অবস্থান 'অত্যন্ত দুর্বল' উল্লেখ করে মাহবুব উল্লাহ্ জানান, এমন পরিস্থিতিতে তিনি নিজেও দলটিকে নিয়ে 'উদ্বিগ্ন'। তিনি বলেন, নেতৃত্বের ঘাটতিতে গত বছরের গণঅভ্যুত্থানের 'বৈপ্লবিক সম্ভাবনা' কাজে লাগেনি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে যতোজন লেখক,  নামকরা সাংবাদিক, কবি, বিজ্ঞানী, ইতিহাসবিদ বা সমাজতত্ত্ববিদ আছেন, ততোজন বিএনপির সঙ্গে নেই। বিএনপির কর্মীরা রাজনৈতিক শিক্ষাও যথাযথভাবে পাননি। এ ধরনের নেতাকর্মী দিয়ে রাজনৈতিক গতিবিধি প্রভাবিত করা যায় না।

লেখক, কলামিস্ট মাহবুব উল্লাহ্ বিএনপির শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে পাঠক সমাজে পরিচিত। তার এমন মূল্যায়নে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানামুখী আলোচনা চলছে রাজনীতিমনস্ক নেটিজেনদের মধ্যে। হঠাৎ তিনি এ ধরনের মূল্যায়ন কেন করলেন, এর 'চুলচেরা বিশ্লেষণ' করছেন  অনেকে। মাহবুব উল্লাহ্ বলেন, 'বিএনপিকে প্রতিষ্ঠিত দল বলছেন; তবে আমি তেমনটা মনে করি না। এটা সত্য, বিগত কয়েক দশক এ দেশে একটা দ্বিদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা ছিল–একদিকে আওয়ামী লীগ, আরেকদিকে বিএনপি। উভয় দলের ভোটের হিসাব কাছাকাছি।'

তিনি বলেন, 'যে (রাজনৈতিক দল) যখন জিতেছে, সে তখন ৪০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছে। আবার যখন হেরেছে, তখন তা ৪০ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। সাংগঠনিকভাবেও তারা সারাদেশেই বিস্তৃত। তবে আপনারা যেমনটা মনে করেন, বিএনপি সেভাবে সংগঠিত বলে আমি মনে করি না।'

দৈনিক সমকালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাহবুব উল্লাহ্ এসব কথা বলেন। তার এ সাক্ষাৎকার পত্রিকাটির ছাপা সংস্করণে আজ শনিবার (৫ই জুলাই) প্রকাশিত হয়েছে। এর শিরোনাম- 'নেতৃত্বের ঘাটতিতে গণঅভ্যুত্থানের বৈপ্লবিক সম্ভাবনা কাজে লাগেনি।'

মাহবুব উল্লাহ্ বলেন, "বিএনপির একটা বড় দুর্বলতা হলো, নাগরিক সমাজের মধ্যে এর অবস্থান অত্যন্ত দুর্বল। ক’জন লেখক, ক’জন নামকরা সাংবাদিক, ক’জন কবি, ক’জন বিজ্ঞানী, ক’জন ইতিহাসবিদ বা সমাজতত্ত্ববিদ তাদের দলের সঙ্গে আছে? তুলনামূলক আওয়ামী লীগের তা অনেক বেশি ছিল। তবে বুদ্ধিবৃত্তির জগতের সেই লোকরা সঠিক ভূমিকা রাখতে পারেননি বলেই আওয়ামী লীগের পতন ত্বরান্বিত হয়েছে। বুদ্ধিজীবীর স্বাধীন ভূমিকা তারা রাখতে পারেননি। আমি বহু বছর বিএনপিকে কাছ থেকে দেখছি। দলটির কর্মীরা এমনকি রাজনৈতিক শিক্ষাও যথাযথভাবে পাননি।'

তিনি বলেন, 'বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্তভাবে কিছু সেমিনার, কর্মশালা (বিএনপির পক্ষে) হচ্ছে ঠিক। কিন্তু এগুলো ধারাবাহিকভাবে না হলে স্তরে স্তরে দলীয় আদর্শ ভালোভাবে ছড়ায় না। আর এগুলোর মালমসলা আসে প্রধানত লেখালেখি, বইপত্র ইত্যাদি থেকে, যা করার কথা বুদ্ধিজীবীদের। সেটাও তেমন দেখা যায় না। প্রধানত আবেগের বশে কর্মীরা দলে আছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি তাদের ভালোবাসা অনেক। এ ধরনের নেতাকর্মী দিয়ে রাজনৈতিক গতিবিধি প্রভাবিত করা যায় না।'

তিনি বলেন, 'দলটির (বিএনপির) বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে প্রচুর অপকর্মের অভিযোগ আসছে। ফলে আওয়ামী লীগ চলে যাওয়ার পর বিএনপির ওপর সাধারণ মানুষ যেভাবে ভরসা করতে পারতেন, তা হচ্ছে না। আমি নিজেও উদ্বিগ্ন এ পরিস্থিতিতে।'

সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির নেতারা এতদিন যা করেছেন, তা নিয়েও আমার কথা আছে। তারা এ সরকারের বিরুদ্ধে এতদিন যে ভাষায় কথা বলেছে, তা মাঝে মাঝে অসৌজন্যমূলক পর্যায়েও চলে যেত। এগুলো কিন্তু তাদের কোনো লাভ বা ডিভিডেন্ড দেয়নি।'

তিনি বলেন, 'তারা যদি ঠাণ্ডা মাথায় সরকারের কাছে তাদের কথাগুলো পেশ করত, তাহলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতো। সেগুলো হৃদয়গ্রাহী হতো, জনগণের কাছেও গ্রহণযোগ্য হতো। সম্ভবত এসব দেখেই খালেদা জিয়া একলাইনে একটা মন্তব্য করলেন, এ সরকারের বিরোধিতা করে আমাদের কী লাভ? এরপরই আমরা পরিস্থিতি পাল্টাতে দেখলাম। বিএনপি কিছুটা সংযত আচরণ করছে– কথাবার্তা ও উচ্চারণে।'