
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে দলটি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত এবং সে লক্ষ্যেই তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে চায়।
রাজধানীর একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলামী আজ জাতির সামনে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছে— আমরা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিতে চাই। আমরা সেই যোগ্যতা ও সক্ষমতা অর্জন করেছি।”
তিনি আরও জানান, “আসন্ন ১৯ জুলাই ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত মহাসমাবেশ হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জনসমাবেশ, ইনশাআল্লাহ। এই সমাবেশের মাধ্যমে জামায়াত দেখাতে চায়, তারা শুধু আন্দোলনের দল নয়, তারা রাষ্ট্র পরিচালনার জন্যও প্রস্তুত।”
পরওয়ার বলেন, “আমাদের রাজনীতি শুধু ক্ষমতা নয়, ন্যায়ের পক্ষে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। তাই এই সমাবেশ শুধু রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, এটা আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের আয়োজনও।” তিনি বলেন, ২৪ জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান এবং দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে জামায়াতের অবদান স্মরণ করেই এই সমাবেশ হচ্ছে।
তিনি বলেন, “আমাদের প্রিয় নেতারা, যারা শহীদ হয়েছেন, যাদের ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে, সেইসব নেতারাও একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। আজ আমরা তাদের উত্তরসূরি হিসেবে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুত।”
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি বলেন, “আমরা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। এজন্য আমরা দাবি করেছি, নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন তার নিরপেক্ষতা প্রমাণ করুক।” তিনি আরও বলেন, “দেশে জনগণের সঠিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন পদ্ধতি চালু করতে হবে। এতে করে কালো টাকা আর পেশিশক্তির দৌরাত্ম্য কমবে এবং দক্ষ নেতৃত্ব উঠে আসবে।”
প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়েও জামায়াতে ইসলামী তাদের অবস্থান তুলে ধরে। পরওয়ার বলেন, “প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ প্রবাসী যাঁরা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতি সচল রাখেন, তাঁদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।”
সমাবেশকে সফল করতে তিনি ঢাকা মহানগরের প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড ইউনিটকে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে প্রস্তুতি নিতে বলেন। তিনি বলেন, “এই সমাবেশ সফল করতে সবারই আত্মত্যাগ করতে হবে। বিশ্রাম, আরাম, অজুহাত বাদ দিয়ে কাজ করতে হবে। ১৯ জুলাইয়ের মহাসমাবেশ যেন ঢাকাকে জনসমুদ্রে পরিণত করে, সেটাই আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের ওপর যে আস্থা জাতি রেখেছে, সেই আস্থার প্রতিদান দিতেই আমাদের এই উদ্যোগ। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য জামায়াতে ইসলামীর প্রস্তুতি এখন পূর্ণাঙ্গ।”
সমাবেশে শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “বর্ষাকাল হলেও আবহাওয়ার কারণে যেন কেউ মাঠ ছাড়ে না। বৃষ্টিকে ভয় করে ঘরে বসে থাকলে হবে না। মাঠে থাকতে হবে, শৃঙ্খলা মানতে হবে।”
পরওয়ার তার বক্তৃতায় অতীতের দুঃসময়, কারাবাস, নেতাদের শাহাদাত এবং আন্দোলনের সময়কার আত্মত্যাগের স্মৃতিচারণা করেন। বলেন, “এই সব আত্মত্যাগের ফসল আজকের এই সম্ভাবনা। এখন আমাদের দায়িত্ব, আল্লাহর দেওয়া এই নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা। আর তার প্রকৃত রূপ হলো দ্বীনের বিজয়ের জন্য সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করা।”
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, “ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা ১৯ জুলাইয়ের সমাবেশকে সফল করে প্রমাণ করবে, জামায়াতে ইসলামীর হাতেই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিরাপদ।”