
এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেছেন, “গত বছরের জুন, জুলাই, আগস্টে দেশে গৃহযুদ্ধ হওয়ার মতো সব উপাদানই ছিল। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশ কোন রকম গৃহযুদ্ধের দিকে যায়নি, এটাই আমাদের গণঅভ্যুত্থানের সবচেয়ে বড় অর্জন।”
তিনি বলেন, সারা বিশ্বে গণঅভ্যুত্থানের পর সাধারণত গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। কিন্তু বাংলাদেশে ছাত্র-জনতা, রাজনৈতিক দল, প্রশাসন, সামরিক-বেসামরিক বাহিনী ও সমাজের সব পক্ষের সম্মিলিত সংযমের কারণে তা হয়নি। “ড. ইউনুসকে স্মরণ করতে হলে এই কারণে স্মরণ করতে হবে, তিনিও অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে এই স্থিতিশীলতায় ভূমিকা রেখেছেন,”— মন্তব্য করেন ফুয়াদ।
তিনি আরও বলেন, “আমাদের গণঅভ্যুত্থান প্রমাণ করেছে, কীভাবে ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়। ১৬ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটেছে কোনো অস্ত্র ছাড়াই, শুধু লাঠি আর বুক পেতে দিয়ে।”
গত বছরের পরিস্থিতি স্মরণ করিয়ে দিয়ে ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, “জুনে বাজেট ঘোষণার সময় দেশে ভয়াবহ বন্যা চলছিল। সরকার তখন উপকূলীয় দুর্গতদের জন্য জনপ্রতি ৫ কেজি চাল ও ১০ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল, যা ছিল অত্যন্ত হাস্যকর। এর মাঝেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ব্যানারে কোটা সংস্কারবিরোধী আন্দোলন নতুন করে জোরালো হয়, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।”
তিনি আরও জানান, “প্রধানমন্ত্রী তখন দিল্লি ও বেইজিং সফর করেন, তবে চীন সফর সংক্ষিপ্ত করে দ্রুত দেশে ফেরত আসেন। সরকার এই সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ হয় এবং তখন থেকেই জনগণের অসন্তোষ তুঙ্গে ওঠে।”
ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, “আওয়ামী লীগের নেতারা তখন হুমকি দিয়েছিলেন—তাদের ক্ষমতা থেকে সরানো হলে দেশে লাখো লাশ পড়বে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, কেবল কিছু নিচুতলার নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। কোনো প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হননি।”
তিনি বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকাও স্বীকার করেন। বলেন, “বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিলেন—কোনো প্রতিশোধ নেওয়া যাবে না। নেতাকর্মীরা সেটা মেনে চলেছেন। এটাই ছিল দায়িত্বশীলতার পরিচয়।”
আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, “আমাদের দ্বিতীয় বড় অর্জন হচ্ছে—দেশে দুর্ভিক্ষ হয়নি। পলাশীর যুদ্ধের পর এই অঞ্চলে ১৯০ বছরের শোষণ-লুটপাটে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। অথচ সাম্প্রতিক ১৬ বছরে বাংলাদেশ থেকেও ২৩৪ বিলিয়ন ডলার লুট হয়েছে। ৪০টি ব্যাংক ফাঁকা করে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক পর্যায়ে চুরি, প্রকল্পের নামে দুর্নীতি, এমনকি সবচেয়ে দামি রাস্তাগুলোর পিচ ছয় মাসেই উঠে গেছে, এসবের পরেও বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হয়নি। কেউ না খেয়ে মরেনি, কৃষক এখনও উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে।”
তিনি বলেন, “এই অর্জন সম্ভব হয়েছে কারণ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে, সব রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তি দেশকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছে। মানুষ এখন অন্তত ঘরে ঘুমাতে পারছে। মিথ্যা মামলার হয়রানি কমেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে গণমাধ্যম ও নাগরিকদের অতিরিক্তভাবে দমন করা হচ্ছে না। যদিও সবকিছু বন্ধ হয়নি, আগের তুলনায় পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নত।”
তিনি বলেন, “এই গণঅভ্যুত্থান ছিল ঐতিহাসিক। শান্তিপূর্ণ পরিবর্তনের এক অনন্য উদাহরণ। গৃহযুদ্ধ হয়নি, দুর্ভিক্ষ হয়নি— এই দুইটা বিশাল ধকল থেকে দেশ বেঁচে গেছে, এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য।”
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/r4whJ4nkeSQ?si=XY2izF8eIGwYjHAs