
কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে ২০১৮ সালের ৩০ জুন করা সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের সশস্ত্র হামলায় রক্তাক্ত হন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ অনেকেই। সেদিনে ঘটনার কথা স্মরণ করে নুর বলেন, ‘মার খেয়ে হাসপাতালে থাকাবস্থায় বারবার আমার মায়ের কথা মনে পড়ছিল। আজ সোমবার (৩০ জুন) সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি আবেগঘণ এক পোস্ট দেন।
পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘সেদিন মার খেয়ে হাসপাতালে থাকাবস্থায় বারবার আমার মায়ের কথা মনে পড়ছিল। মনোকষ্টে বলছিলাম-মাগো, তুমি আমাকে রেখে ওপারে চলে গেলা, আর আজ ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে গিয়ে এভাবে আমাকে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পড়তে হলো। আমার জন্য পরিবারের সবাই কতটা কষ্ট পাচ্ছে, মা!। রাতে স্বপ্নদেবী মায়ের বার্তা জানিয়ে দিলো, বাবা, অচিরেই দেশবাসী তোকে অনেক ভালবাসবে।’
নুরকে যারা মেরেছে তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সেদিন আমাকে যারা মেরেছিলে, সকলের জন্য শুভাশিস ও ভালবাসা। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ থেকে সকল প্রতিহিংসার অপরাজনীতি দূর হোক!
এদিকে সেই ভয়াবহ হামলার স্মৃতিচারণ করে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পোস্ট দেন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক হাসান আল মামুন।
পোস্টে তিনি লেখেন, ‘সেদিন সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে। সাড়ে নয়টার দিকে নুরুল হক নুর ভিসি চত্বরে দাঁড়িয়ে আমাকে কল দেয় ভাই আমি ভিসি চত্বরে চলে আসছি আপনি কই? আমি তখন হল থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এদিকে ফারুকের সাথেও কথা হলো সে এসএম হল থেকে আসতেছে। রাশেদ তখন হলের বাহিরে থাকায় আমাদের সাথে এক হতে পারেনি। আমরা তিনজন আমি, ফারুক আর নুর একত্রিত হই ভিসি চত্বরে। আরো কয়েকজন আমাদের সাথে একত্রিত হয় এখানে। আর কয়েকজন অপেক্ষা করে লাইব্রেরির সামনে।’
হাসান আল মামুন আরও লিখেছেন, লাইব্রেরির দিকে যাওয়ার পথে নুরকে বললাম প্রতিটি হল থেকে ছাত্রলীগকে এনে জড়ো করা হয়েছে আমাদেরকে মারার জন্য এমন তথ্য হলের একজন সিনিয়র দিয়েছে। তখন নুর বললো মারলে কিছু তো করার নাই চলেন গিয়ে দেখি। আমরা যখন লাইব্রেরির সামনে পৌঁছালাম এর আগে রাশেদ মাহফুজ এদের সাথে কথা বললাম এরাও শাহবাগ থেকে লাইব্রেরির দিকে রওনা হয়েছে। সেদিন লাইব্রেরির সামনে জড়ো করা হয়েছে ছাত্রলীগের সব হার্ডহিটারদের। মানে ছাত্রলীগের মধ্যে যাদের ইতঃপূর্বে মারধরের রেকর্ড আছে।
নুরের ওপর হামলার বর্ণনায় তিনি বলেন, আমরা তখন লাইব্রেরির সামনে গেলাম এবং দাঁড়ানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু হুট করেই কিছু বুঝে উঠার আগেই নুরের হাত ধরে টান দিলো মুহসিন হলের মোন্না ভাই এবং জসিমউদদীন হলের মেহেদী ভাই। টান দিয়ে তখন নুরকে মাটিতে ফেলে দিলো, আমি নুরকে বাঁচাতে তাঁর বাম হাত টেনে ধরলাম কিন্তু পারলাম না। নুরের উপর নেমে এলো এলোপাতাড়ি হামলা। যে যেভাবে পারছে নুরকে লাথি, ঘুসি মারছে। ৪/৫ শত মানুষের সামনে নুর যেনো একটা ফুটবল।