Image description

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা উপস্থাপন করেছেন। এর অংশ হিসেবে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে কমিটি গঠনের কথা ছিল। তবে বিএনপির ত্রিমুখী দ্বন্দ্বের কারণে শনিবার (২৮ জুন) সেই প্রক্রিয়া স্থগিত হয়েছে। 

বরিশাল বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সহ-সম্পাদক কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু এই স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেন।

এতে পিরোজপুর জেলা সম্মেলনে অংশগ্রহণে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। উপজেলা বিএনপি নেতারা বলেছেন, তার পছন্দের ব্যক্তিকে উপজেলা কমিটিতে নির্বাচিত করা এবং তার অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ বাছাই প্রক্রিয়ার কার্যক্রম স্থগিত করেছেন বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা। এ বিষয় নিয়ে উপজেলাব্যাপী মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। 

জানা যায়, আগামী ৪ জুলাই এর মধ্যে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে সম্মেলন এবং ১২ জুলাই পিরোজপুর জেলা পর্যায়ে সম্মেলন সম্পন্ন করার জন্য গত ২৩ জুন পিরোজপুরে এক প্রস্তুতি মূলক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলন সফল করার জন্য তৃণমূল পর্যায় থেকে বিগত দিনে যারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বিএনপির সহযোগিতা করেছেন তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। 

তারই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) নেছারাবাদ উপজেলায় সদস্য ফরম যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেন বরিশাল বিভাগীয় দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সহ-সম্পাদক কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু। এতে উপজেলা বিএনপির তিন গ্রুপে ১০টি ইউনিয়নের ৯০টি ওয়ার্ড কমিটি গঠনের ফরম জমা দেন। 

কিন্তু ওয়ার্ড পর্যায় থেকে উপজেলা পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ ও ফরম জমা দেয়ার শেষ তারিখ ছিল গত বুধবার (২৫ জুন) সন্ধ্যা পর্যন্ত। এই নিয়মকে উপেক্ষা করে উপজেলা বিএনপির একাংশ গ্রুপ জেলা বিএনপির সদস্য মো. ফকরুল আলম গ্রুপের সমর্থকরা ২৬ জুন এবং ২৭ জুন সদস্য ফরম জমা দেন। এ নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সহ-সম্পাদক কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপুর সম্মুখে বাকবিতণ্ডা হয়। 

পরবর্তীতে শনিবার (২৮ জুন) তৃণমূলের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা কমিটি যাচাই-বাছাইয়ে অংশগ্রহণ করলেও বরিশাল বিভাগীয় দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সহ-সম্পাদক কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু সেখানে উপস্থিত হননি। 

এ ব্যাপারে তৃণমূল থেকে উঠে আসা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আজাহারুল ইসলাম টুটুল বলেন, ‘১৭ বছর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার হামলা মামলার শিকার হয়েছি। এখন যদি আমাদের সাথে কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা বিমাতাসুলভ আচরণ করে তাহলে আমরা অবমূল্যায়ন হই। আমরা চাই যোগ্যতার ভিত্তিতে পুনরায় যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শুরু হোক।’ 

এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. নাসির উদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘আমরা প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদের কমিটিতে নির্বাচিত করার লক্ষ্যে সদস্য ফরম পূরণ করেছি। কিন্তু একটি মহল কেন্দ্রীয় নেতাদের সুপারিশের কথা বলে তৃণমূলের মতামতের কোন গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাই নিরপেক্ষভাবে সবার মতামতের ভিত্তিতে যোগ্য নেতা নির্বাচন করতে চাই।’

নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. ওয়াহিদুজ্জামান ওয়াহিদ বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অবদান যাচাই-বাছাই না করে ওয়ার্ড পর্যায়ে ৩৫ জনের সদস্য ফরম জমা দেয়ার কথা বলে কমিটি। যেখানে জমা পড়েছে ১০০টির বেশি সদস্য ফরম। আমি এটার প্রতিবাদ করেছি। যেখানে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন হয় না সেখানে যোগ্য নেতৃত্ব কীভাবে আসবে।

তবে নেছারাবাদ উপজেলার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় নেতা কাজী রওনাকুল ইসলাম গতকালের (২৮ জুন) যাচাই-বাছাই কার্যক্রম কেন স্থগিত করেছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাউকে জানায়নি তাই তৃণমূল পর্যায়ের সকল নেতাকর্মীরা ওখানে উপস্থিত হয়ে সবাই ফিরে গেছেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. আব্দুল্লাহ আল-বেরুনী সৈকত ও পিরোজপুর জেলা বিএনপির সদস্য মো. ফখরুল আলমের কাছে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিলে ফোনটি রিসিভ করেননি।

পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মীদের ভোটে উপজেলা পর্যায়ের নেতা তৈরি হবে। উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের প্রত্যক্ষ ভোটে জেলার নেতা নির্ধারিত হবে। বর্তমানে নেছারাবাদ উপজেলায় নিজেদের কমিটি গঠন প্রক্রিয়া বন্ধ আছে। কমিটি গঠন না করলে জেলা সম্মেলনে তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে না। তা ছাড়া কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্যদের সমন্বয়ে যাচাই-বাছাই কমিটি করা আছে। তারাই সব সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না। তবে সমস্যার সমাধান হওয়াটা জরুরি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগীয় দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সহ-সম্পাদক কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু মুঠোফোনে বলেন, ‘আমরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ মোতাবেক তৃণমূল থেকে জনগুরুত্বের ভিত্তিতে এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ভোটার তালিকা করে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা এবং জেলা সম্মেলন সম্পন্ন করব। কিন্তু ১২ জুলাই পিরোজপুর জেলায় অনুষ্ঠাতব্য সম্মেলনটা নেছারাবাদ উপজেলার নেতাকর্মীরা মনে হচ্ছে চাচ্ছে না। আমি সকল নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে চেষ্টা করেছি আগামী ৪ জুলাইয়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষ করব। বিষয়টি কেন্দ্রে জানিয়েছি এখন কেন্দ্র থেকে যে নির্দেশনা দিবে সে অনুযায়ী পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’