
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) সংস্কারের জন্য সাত দফা দাবি পেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির। এ ছাড়া ৩৬ জুলাইয়ের (৫ আগস্ট) মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। রোববার (২৯ জুন) দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
শিবিরের সাত দফা দাবি হলো— শতভাগ আবাসন নিশ্চিত করতে হবে এবং আবাসন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত অনাবাসিক সকল শিক্ষার্থীকে আবাসন ভাতা প্রদান করতে হবে; সকল বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে অনতিবিলম্বে সেশনজট নিরসন এবং শিক্ষার আধুনিকায়ন নিশ্চিত করতে হবে পর্যাপ্ত ও নিরাপদ যাতায়াত সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে; অনতিবিলম্বে চাকসু নির্বাচন দিতে হবে; দ্রুত সময়ের মধ্যে টিএসসি স্থাপন, সেন্ট্রাল অডিটোরিয়াম নির্মাণ, কেন্দ্রীয় মসজিদ পুনর্নির্মাণ এবং আবাসিক হল ও অন্যান্য স্থাপনাসমূহ সংস্কার করতে হবে; জুলাই বিপ্লব ও ফ্যাসিবাদী শাসনামলে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার এবং জড়িত শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করতে হবে; এবং বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনামলে অবৈধ নিয়োগের সাথে জড়িত সকলের বিচার এবং নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকুরিচ্যুত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শাখা সভাপতি মুহাম্মাদ ইব্রাহীম বলেন, ‘চাকসু শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বলিষ্ঠ ও কার্যকর প্লাটফর্ম। কিন্তু বিগত ৩৬ বছর ধরে চবিতে শিক্ষার্থীরা তাদের সেই ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। চাকসু সচল না থাকায় শিক্ষার্থীদের আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলো প্রতিফলিত হয়নি দীর্ঘ সময়েও। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিবছর চাকসু নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও গত ৫৮ বছরে হয়েছে মাত্র ৬টি নির্বাচন। যেখানে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাত্রসংসদ নির্বাচনের নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে সেখানে খুনি হাসিনা পতনের ১০ মাসেও চাকসু নির্বাচনের কোনো রোডম্যাপ প্রকাশ করতে পারেনি বর্তমান প্রশাসন। প্রশাসনকে জানাতে চাই গড়িমসি না করে ৩৬ জুলাই এর মধ্যে চাকসু নির্বাচন বাস্তবায়ন করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের দ্বারা চবিতে শিক্ষার্থীদের নিপীড়ন, শিক্ষকদের বাসার সামনে বোমা হামলার ঘটনা ঘটলেও প্রশাসন এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ। এমনকি জুলাইয়ে গণহত্যার পক্ষে অবস্থান নেয়া শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের যথাযথ আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য একাধিক কমিটি গঠন করা হলেও প্রায় সবকটি কমিটি অকার্যকর ভূমিকা পালন করেছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান জানান দিলেও, চবি বারবার নিজেদের মেরুদণ্ডহীনতার প্রমাণ দিয়ে গেছে।’
৭ দফা বাস্তবায়নে সংগঠনটির পক্ষ থেকে ১০ দিনের সংস্কার ক্যাম্পেইন ঘোষণা করা হয়েছে। যেখানে ১ জুলাই প্রতীকী সিট বণ্টন, ৩ জুলাই সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে মতবিনিময়, ৭ জুলাই গণস্বাক্ষর কর্মসূচি এবং ১০ জুলাই ৭ দফা দাবিতে মানববন্ধন।
এর মধ্যে দাবি বাস্তবায়নে প্রশাসন দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নিলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শাখা সেক্রেটারি মোহাম্মদ আলী, শিক্ষা সম্পাদক মোহাম্মদ পারভেজ, বায়তুলমাল সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক হাবিবুল্লাহ খালেদ, ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক রুহুল আমিন, এইচআরডি সম্পাদক রবিউল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক ইসহাক ভূঁঞা, সাহিত্য সম্পাদক সাইদ বিন হাবিব, দাওয়াহ সম্পাদক হাবিব উল্যাহ, ফাউন্ডেশন সম্পাদক আফনান হাসান ইমরান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক হারেস মাতব্বর-সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।