Image description

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, গত সাতদিনের বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে কিছু অগ্রগতি হলেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এখনো হয়নি। ‘জুলাই সনদ’ কবে নাগাদ হতে পারে, তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা আশা করেছিলাম- আবু সাঈদের শাহাদতবার্ষিকীতেই সকলে মিলে সনদে স্বাক্ষর করতে পারবো। সেটা কতোটা সম্ভব হবে তা আপনাদের (রাজনৈতিক দল) ওপর নির্ভর করছে। আমরা খানিকটা শঙ্কিত যে, সে জায়গায় যাবো না। তবে এটা আমরা বলতে পারি জুলাই মাসের মধ্যে এই প্রক্রিয়াকে একটা পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে হবে। গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় দফার সপ্তম দিনের বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল- সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট, উচ্চকক্ষের নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং উচ্চকক্ষের দায়িত্ব ও ভূমিকা।
ড. আলী রীয়াজ বলেন, একদিন পর জুলাই মাস। কমিশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি- আমরা আন্তরিক থাকতে চাই, জুলাই মাসের মধ্যেই যেন আমরা একটি জাতীয় সনদে উপনীত হতে পারি। সেই প্রচেষ্টায় আমাদের একটা স্বপ্ন ছিল।

তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে মুক্ত হবো। যে ব্যবস্থা ফ্যাসিবাদী শাসনকে তৈরি করেছে, তার কাঠামোগত পরিবর্তনগুলো আমাদের করতে হবে। এই সংকল্প থেকে সমস্ত কিছু পাশে রেখে আমরা সমবেত হয়েছিলাম। আপনাদের কর্মীরা প্রাণ দিয়েছেন, নিপীড়ন সহ্য করেছেন। সেই রক্তের ওপর পা রেখে আমরা এখানে এসেছি। ৭০ অনুচ্ছেদের ক্ষেত্রে কমিশনের যে প্রস্তাব ছিল সেখান থেকে কমিশন আলোচনার মধ্যদিয়ে সরে এসেছে।

আলী রীয়াজ বলেন, উচ্চকক্ষের বিষয়ে দুটি প্রস্তাব ছিল। এর মধ্যে একটি, ১০৫ জন সদস্যকে রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন দেবেন। আপনারা এই বিষয়ে আপত্তি তুলেছেন। সঙ্গতভাবে কমিশন এই জায়গা থেকে সরে এসে ১০০ জন সদস্যের উচ্চকক্ষ তৈরির বিষয়ে একমত হতে পেরেছি। মূলনীতির ক্ষেত্রে কমিশনের কিছু প্রস্তাব ছিল সংবিধান সংস্কার কমিশনে। সেখানে আমরা আলোচনা করেছি, অনেকটা অগ্রসর হয়েছি। 

বৈঠক শেষে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি ও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ বিভিন্ন কমিটি নিয়ে আমাদের মতামত আগের মতোই। আমরা চাই এসব সংস্থাগুলোর স্ব স্ব আইন সংশোধন করা এবং বিদ্যমান আইনে প্রয়োজনীয় সংস্কারের মধ্যদিয়ে আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হোক। বিদ্যমান আইনের সংস্কারের মধ্যদিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করতে চাই। আইনের ধারা নির্ধারিত আরও যদি সংস্থা থাকে, সেগুলোতে ঐকমত্যের মধ্যদিয়ে আমরা আইন প্রণয়নের মধ্যদিয়ে নিয়োগ বিধি স্ব স্ব আইনে রাখতে চাই। কারণ আমরা ভারসাম্যমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। 

তিনি বলেন, ১০০ সদস্যবিশিষ্ট উচ্চকক্ষ গঠনের জন্য বিএনপি’র পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সংসদের নিম্নকক্ষের প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ নির্ধারণের জন্য দলের পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়েছে। তবে নির্বাচন প্রক্রিয়া কীভাবে হবে তা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে যদি সুন্দর গ্রহণযোগ্য কোনো প্রস্তাব আসে দেশের স্বার্থে আমরা সেটা বিবেচনা করবো। ঐকমত্য কমিশন থেকে আরও আলোচনা করতে বলা হয়েছে। এভাবে আর কতোদিন আলোচনা করলে ঐকমত্য হবে তা জানি না।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন,  সংবিধানিক এবং সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানসমূহের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।  এনসিসি’র ওপর অনেক দলের আপত্তি থাকায় এর পরিবর্তে ‘সংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ নিয়োগ কমিটি’ গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। 

এবি পার্টির সাধারণ সমপাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, কিছু সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পিএসসি মানবাধিকার ও তথ্য কমিশনের নিয়োগের ক্ষমতা কার কাছে থাকবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিগত সময়ে আমরা দেখেছি সার্চ কমিটি গঠন করে নিজেদের মতো নিয়োগ দেয়া হতো। এনসিসি’র প্রস্তাবে বিএনপি’র আপত্তি ছিল তাই কমিশন থেকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে যে একটা বডি থাকবে যারা এ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ দিবে। যেখানে দলীয় রাজনীতিকরণের মাধ্যমে নিয়োগ হবে না। বড় একটি দল রাজি না হওয়ায় কমিশনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে আরেকবার বিবেচনা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।  

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি ও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো ঐকমত্য হয়নি। আমরা বিগত সময়ে দেখেছি এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোতে নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্ব থাকার কারণে সরকারের অনুগত লোকদের নিয়োগ দেয়া হতো। আমরা সরকার বিরোধী দল এবং বিচার বিভাগের প্রতিনিধিত্বের সমন্বয়ে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ চাই। বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল আপত্তি জানিয়েছে। সংসদের ১০০ সদস্যবিশিষ্ট উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়ে আমরা একমত। তবে গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে ঐকমত্য হওয়া যায়নি। 

বৈঠকে কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

এ সময় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী,  জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।