
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজশাহী জেলা সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী রাশেদুল ইসলাম পদত্যাগ করেছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান তিনি।
ইংরেজিতে লেখা পদত্যাগপত্রে রাশেদুল উল্লেখ করেন, ‘আমি এনসিপির রাজশাহী জেলার প্রধান সমন্বয়কারীর পদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দিচ্ছি। এনসিপির ব্যানারে দলের সেবা করা এবং দেশের উন্নতির জন্য কাজ করা আমার জন্য সম্মানের ও সৌভাগ্যের। জেলা ইউনিটের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমাকে যে আস্থা, সমর্থন এবং সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। তবে ব্যক্তিগত কারণে আমি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে এই মুহূর্তে আমাকে আমার ভূমিকা থেকে সরে দাঁড়াতে হবে।’
তার ওপর আস্থা রেখে সুযোগ দেওয়ার জন্য এনসিপিকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাশেদুল চিঠিতে জানান, তার এই পদত্যাগের সিদ্ধান্তটি রাজশাহীতে দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব এবং সংগঠনের বৃদ্ধির সর্বোত্তম স্বার্থে নিয়েছেন।
রাজশাহী জেলা এনসিপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সমন্বয় কমিটি গঠনের পর থেকেই নানা কারণে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। জেলা ও মহানগর সমন্বয় কমিটির মধ্যেও রয়েছে দূরত্ব। গত বুধবার রাতে একটি রেস্তোরাঁয় বসেছিলেন জেলা কমিটির নেতারা। এই রেস্তোরাঁর মালিক রাশেদুল ইসলাম। সেখানে তার সামনেই ১ নম্বর যুগ্ম সমন্বয়কারী নাহিদুল ইসলাম সাজু আরেক যুগ্ম সমন্বয়কারী ফিরোজ আলমের বুকে লাথি মারেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা একে অপরের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের অভিযোগ তুলেছিলেন।
ওই ঘটনার পর আহত অবস্থায় ফিরোজ আলমকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে জেলা সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী নাহিদুল ইসলাম সাজুকে গতকাল শুক্রবার সাময়িক অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। একইসঙ্গে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কেন তাকে সংগঠন থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না, তা তিন দিনের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে।
গতকাল বিকেলে এক ভিডিও বার্তায় নাহিদুল ইসলাম সাজু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী জেলার আহ্বায়ক পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘এনসিপির জেলা কমিটিতে কিছু বিতর্কিত ব্যক্তি রয়েছে, যারা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন। এর কিছু তথ্য-প্রমাণ সামনে আসায় বিষয়টি নিয়ে কথা বলি। তার কোনো সুরাহা না হওয়ায় এটি শহিদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করার শামিল। রাজশাহীতে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার ধুম চলছে। আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে এনসিপিকে জেলায় অবাঞ্ছিত করা হবে।’
এর আগেই বৃহস্পতিবার রাতে পদত্যাগপত্র পাঠান জেলার প্রধান সমন্বয়কারী। দলের ভেতর এমন বিশৃঙ্খলা সামাল দিতে গতকাল রাজশাহী সফর করেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন।
পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘পদত্যাগপত্র কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। এখন পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়েছে কি না, তা আমি জানি না। তবে আমি এখনো এনসিপির সঙ্গে আছি। এনসিপির ভালোটাই চাই। তবে একান্তই ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছি।’
কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন বলেন, ‘ইতোমধ্যে সবার সঙ্গে কথা বলেছি। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। জেলার প্রধান সমন্বয়কারী পদত্যাগপত্র পাঠালেও সেটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি। এটি এখন বিবেচনাধীন আছে।’