Image description
 

নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে গাইবান্ধার মাশরুম চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাসকরণ প্রকল্প। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রথম কিস্তিতে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ২টি প্রদর্শনী প্রকল্পে ৭ লাখ ৪৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। জুনে প্রকল্প দুটি সম্পন্ন করার সময় বেঁধে দেওয়া হলেও এখনো ঘরের কাজই শেষ হয়নি।

গাইবান্ধা সদরের বল্লমঝড় ইউনিয়নের নারায়ণপুরে বাস্তবায়নাধীন মাশরুম প্রদর্শনীটি চলতি জুন মাসেও সম্পন্ন হয়নি। অপরটি বাদিয়াখালী ইউনিয়নের চুনিয়াকান্দি মৌজায়। প্রকল্পের নির্বাচন ও মাশরুম চাষে উৎসাহী কৃষক নির্বাচন করেই মুখ থুবড়ে পড়েছে সেটি।

জানা যায়, উপজেলা কৃষি অফিসারের অনুকূলে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে প্রতিটি স্পন ও মাশরুম প্রদর্শনীর জন্য ৩ লাখ ৭৪ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিটি প্রদর্শনী প্রকল্পে ইনকুবেশন কক্ষ, চাষঘর, স্টেবিলাইজেশন কাম ইনকুলেশন চেম্বার স্থাপন ছাড়াও মালামাল রক্ষণের জন্য র্যাক ও পরিবহনের জন্য ব্যাটারি চালিত ভ্যানের বিপরীতে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু বরাদ্দকৃত ওই অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় করা হয়নি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রদর্শনী প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দ সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি প্রদর্শনী প্রকল্পে ইনকুবেশন কক্ষ ও তার আনুষঙ্গিক ব্যয় ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ টাকা, চাষঘর ও তার আনুষঙ্গিক ব্যয় ১ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ টাকা, স্টেরিলাইজেশন কাম ইনোকুলেশন চেম্বারের আনুষঙ্গিক ব্যয় ৩০ হাজার টাকা, সাইনবোর্ড বাবদ ২ হাজার টাকা, মার্কেটিংয়ের ভ্যান ক্রয় বাবদ ৪৫ হাজার টাকা, সেটিং ও পরিবহন খরচ বাবদ ৫ হাজার টাকাসহ মোট ৭ লাখ ৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

 

সরেজমিনে প্রকল্প দুটি ঘুরে দেখা যায়, গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাদিয়াখালী ইউনিয়নের চুনিয়াকান্দি মৌজায় মাশরুম প্রকল্পের কয়েকটি সিমিন্টের খুঁটি দাঁড়িয়ে আছে। চাল, বেড়া কিছুই নেই।

থমকে আছে প্রকল্প, কর্মকর্তা বললেন তথ্য দিতে নিষেধ আছে

এই মাশরুম চাষ প্রদর্শনীর উদ্যোক্তা মোছা. সাহিদা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, আমি ঢাকায় বিউটি পার্লারে কাজ করতাম। এক বছর আগে সাভারে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ নিই। ওখান থেকে স্যার নিজ উপজেলায় কৃষি অফিসে যোগাযোগ করতে বলেন। তার কথামতো, উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করে প্রকল্পটি আমার নামে হয়। আট মাস পার হলেও এখনো ঘরে ১৪টি খুঁটি ছাড়া আর কিছুই পাইনি। আশা ছিল একজন সফল উদ্যোক্তা হবো। কিন্তু এখন বেকার হয়ে পড়ছি।

 

এদিকে গাইবান্ধা সদর উপজেলার নারায়নপুর মৌজায় স্পন ও মাশরুম চাষ প্রদর্শনী ঘুরে দেখার সময় উৎপাদক ও উদ্যোক্তা মোস্তফা কামালের কাছে জানা যায়, জুন ২০২৫ অর্থবছরে স্থাপন শেষে উৎপাদনে যাওয়ার কথা থাকলেও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার কর্মসূচি বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতার ফলে প্রকল্প দুটির সুফল অংকুরেই বিনষ্ট হয়েছে।

এর কারণ সম্পর্কে উদ্যোক্তা মোস্তফা কামাল বলেন, সঠিক সময়ে ইনকুবেশন কক্ষ নির্মাণ, চাষঘর তৈরি, স্টেরিলাইজেশন কাম ইনকুলেশন চেম্বার স্থাপন না করায় সঠিক সময়ে উৎপাদনে কাঙ্ক্ষি লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারিনি।

তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের আগে রংপুরে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি, কিন্তু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার দায়সারা কর্তব্য পালনের কারণে প্রকল্পের কাজে নানা অনিয়ম ও বিপত্তি দেখা দেয়।

প্রকল্পটির প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম যেমন ইনকুবেশনের জন্য এগজস্ট ফ্যান, কুলিং প্যাড ও কন্টেইনার, ২টি পিভিসি দরজা, পানির পাম্প, ত্রিপল, ছোট পানির পাম্প, পানি স্প্রে সিস্টেম সরবরাহ করা হয়নি। এসব জিনিসের দাম প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকা।

গাইবান্ধা সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. সাহাদৎ হোসেন বলেন, সাংবাদিকদের ভিডিও বক্তব্য বা তথ্য দিতে ওপর থেকে নিষেধ আছে। এসব দেখার দায়িত্বতো আপনাদের না। অযথা আপনারা আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করেন। নিউজ করে আজ পর্যন্ত কিছুর সমাধান হয়েছে?