Image description

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। তার আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে জুলাই মাস ধরে চলে আন্দোলন, যা পরিচিতি পায় ‘জুলাই বিপ্লব’ বা ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ নামে। ছাত্র-জনতার সেই বিপ্লবী জুলাইয়ের এক বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে দিন দুয়েক পরই। অবশ্য অনেকেই মনে করছেন, বছর পার না হতেই দেশজুড়ে আলোড়ন তোলা এই বিপ্লবের ঘটনাবহুল দিনগুলো জনমানস থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে কিংবা ঝাপসা বিভ্রান্তিকর ইতিহাসের পাঠ দিতে শুরু করেছে। একই সঙ্গে জুলাইয়ের দৃঢ় ঐক্যে ধরেছে ফাটল। এমন প্রেক্ষাপটে জুলাই বিপ্লবের অনুভূতি ফিরিয়ে আনতে মাসব্যাপী নানান কর্মসূচির পরিকল্পনা করছে অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের নিয়ে গড়া রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

দলটির দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুলাই মাসজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে দলের পক্ষ থেকে। যার মধ্যে অন্যতম হলো সারা দেশে লংমার্চ। জুলাই বিপ্লবের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের কবর চত্বর থেকে শুরু হয়ে রাজধানী ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হতে পারে এই কর্মসূচি। ঢাকাসহ যেসব জায়গায় আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে এবং শহীদরা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, সেসব জায়গায় বিশেষ কর্মসূচি রাখার চিন্তা করছে নতুন এই রাজনৈতিক দলটি। বিশেষ করে জুলাই বিপ্লবের যেসব কর্মসূচিতে ছাত্র-জনতা উজ্জীবিত হয়েছিল, সেগুলো প্রতীকীভাবে পালন করা হতে পারে।

এনসিপির সম্ভাব্য কর্মসূচিগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসহ সারা দেশে ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, প্রজেকশন ম্যাপিং ও জুলাইয়ের গান এবং ড্রোন শো। বিশেষ করে অভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশি উন্মাদনা ছড়ানো বাংলা র‌্যাপ গান নিয়ে ঢাকায় হবে বড় কর্মসূচি। এর মধ্যে ‘কথা ক’, ‘বাংলা মা’, ‘বায়ান্ন’, ‘দেশ সংস্কার’, ‘স্বাধীনতার গন্ধ’, ‘দেশ কার’, ‘আবু সাঈদ’, ‘রক্ত’, ‘দেশ কারও বাপের না’, ‘শকুনের চোখ’, ‘আওয়াজ উডা’সহ আন্দোলনে প্রেরণা জোগানো গানগুলোকে স্মরণ করা হবে।

এ ছাড়া জুলাই ঘিরে সারা দেশে আর্ট ক্যাম্প, চলচ্চিত্র উৎসব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ভিডিওচিত্র প্রদর্শনসহ নানান কর্মসূচি থাকবে। সবশেষ ৩ কিংবা ৫ আগস্ট ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হবে জুলাই মহাসমাবেশ। ৩ আগস্ট একদফা এবং ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিজয়কে বিশেষভাবে পালন করার চিন্তা করছে জাতীয় নাগরিক পার্টি।

এনসিপির কর্মসূচি পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন সেলের সম্পাদক অনিক রায় কালবেলাকে বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট কেন্দ্র করে আমরা নানান কর্মসূচি হাতে নিচ্ছি। জুলাইকে যাতে সবার মাঝে পুনরুজ্জীবিত করা যায় এবং আবার সে অনুভূতিকে ফিরিয়ে আনা যায়, সেজন্য আমরা কাজ করছি। রোডমার্চ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আর্ট ক্যাম্প, সমাবেশসহ বেশকিছু কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে। বিশেষ করে জুলাইয়ের সিগনিফিকেন্ট (তাৎপর্যপূর্ণ) দিনগুলো কেন্দ্র করে আমাদের বিশেষ আয়োজন থাকবে। এসব আয়োজনে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারাসহ সারা দেশের মানুষ অংশগ্রহণ করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।’

সারা দেশের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে জুলাইকেন্দ্রিক কর্মসূচি পালিত হবে বলে জানান দলটির যুগ্ম সদস্য সচিব আলাউদ্দিন মোহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘সারা দেশে লংমার্চ এবং ঢাকায় মহাসমাবেশ হবে। এ ছাড়া ঢাকায় আমাদের অফিসসহ আন্দোলনের স্পটগুলোতে ভিডিওচিত্র প্রদর্শনী হবে। পুরো জুলাই তথা গণঅভ্যুত্থানকে স্মরণ করার জন্য আমরা সব ধরনের পরিকল্পনা করছি।’

কর্মসূচি থাকবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেরও: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও জুলাইকেন্দ্রিক বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে বলে জানা গেছে। সংগঠনটির মুখপাত্র সিনথিয়া জাহীন আয়েশা কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা দেখছি মিডিয়া, পাঠ্যপুস্তক, এমনকি প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতিও ধীরে ধীরে জুলাইয়ের রাজনৈতিক তাৎপর্যকে ধোঁয়াটে করে ফেলতে চাচ্ছে। এক ধরনের ‘ডি-কালেক্টিভ মেমোরি’ তৈরি করা হচ্ছে, যাতে জনগণ নিজেদের ইতিহাস ভুলে যায়, নিজেদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অন্যায়-অবিচারকে ভুলে যায়। এই বাস্তবতায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কাছে জুলাই এক ঐতিহাসিক দায়। কারণ, জুলাই মানে শুধু শোক নয়, জুলাই মানে প্রতিরোধ, নির্মাণ এবং দায়িত্বশীল রাজনৈতিক স্মৃতির পুনরুদ্ধার।’

জুলাই সামনে রেখে সাংগঠনিক বহুমাত্রিক কর্মপরিকল্পনার কথা জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র বলেন, ‘স্মৃতি-মিছিল ও পোস্টার ক্যাম্পেইন, শহর ও প্রান্তিক অঞ্চলে পোস্টার, ব্যানার, দেয়াললিখন ও স্মৃতিচারণাভিত্তিক র্যালির মাধ্যমে জুলাইয়ের ইতিহাসকে জনমানসে ফিরিয়ে আনা হবে। জুলাই আন্দোলনের প্রামাণ্য দলিল সংরক্ষণ এবং জনসাধারণের কাছে তুলে ধরার জন্য একটি মুক্ত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার চিন্তা রয়েছে আমাদের।’

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হাসান ইনাম কালবেলাকে বলেন, ‘পুরো জুলাই জুড়েই বিভিন্ন রকম আয়োজন ও কর্মসূচির জন্য পরিকল্পনা করছি আমরা। গত এক বছর জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে যেসব কাজ করা হয়নি বা অসমাপ্ত পড়ে আছে, সেই কাজগুলোর দিকেই মনোযোগ দেব আমরা। গণহত্যার ডকুমেন্টেশন, গণহত্যায় জড়িতদের বিচার নিশ্চিতকরণ, জুলাই ঘোষণাপত্র আদায় করাসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে আমাদের।’