Image description
 

ভোট মানেই জনগণের মতপ্রকাশের অধিকার, স্বাধীনভাবে প্রতিনিধি নির্বাচন করার সুযোগ। কিন্তু সেই ভোট যদি কালোটাকার দখলে চলে যায়, যদি ধনীদের বিলাসী প্রচার, রাতের অন্ধকারে টাকার বস্তা আর কেনা সমর্থনের প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়, তাহলে সে ভোট কি সত্যিকার অর্থেই জনগণের? প্রশ্নটা আজ সবচেয়ে জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে—কারণ কালোটাকার লাগামহীন ব্যবহার আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন, গণঅধিকার পরিষদ জামালপুর জেলা  সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখার আহ্বায়ক আল-আমিন মিলু।
একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি আরো বলেন,
প্রতিটি নির্বাচনের আগে আমরা দেখি কিছু অস্বাভাবিক চাঞ্চল্য। হঠাৎ করেই কোনো এক প্রার্থী শত শত মোটরসাইকেলের শোডাউন করে, লিফলেট, ব্যানার, টি-শার্ট, ক্যাপ, খাবার বিতরণ শুরু করে। রাতের আঁধারে ভোট কেনা-বেচার হাট বসে। মানুষ পরিস্থিতির শিকারে বাধ্য হয়ে ভোট দেয় একদিনের প্যাকেট বা নগদ টাকার বিনিময়ে। অথচ সেই ভোটে যিনি নির্বাচিত হন, তিনি পরে সেই টাকা সুদে-আসলে তুলে নিতে উঠে পড়ে লাগেন—ঘুষ, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার তার হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ায়।

এটাই বাস্তবতা। যে কালোটাকা দিয়ে ভোট কেনা হয়, সেটা জনগণের সেবায় ব্যবহার হওয়ার নয়। কারণ যে প্রার্থী ভোটকে পণ্য বানিয়ে কেনে, সে জনগণকে সম্মান করে না, তাদের অধিকারকে মূল্যহীন মনে করে।

কালোটাকার এ দৌরাত্ম্য কেবল নির্বাচনকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে না, পুরো গণতন্ত্রকে করে জিম্মি। প্রকৃত জনপ্রতিনিধিরা হারিয়ে যান এই টাকার স্রোতে। শিক্ষিত, সচেতন, সৎ প্রার্থীরা সুযোগই পান না প্রচারে দাঁড়ানোর। ফলে রাষ্ট্র চলে যায় সুবিধাভোগী, ক্ষমতাবাজ, দুর্নীতিপরায়ণ গোষ্ঠীর হাতে। আর সাধারণ মানুষ পড়ে প্রতারণার ফাঁদে।

 

তাই এই কালোটাকার দৌরাত্ম্য রোধ করা এখন সময়ের দাবী। একে ঠেকাতে হবে কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে, সম্পদের হিসাব যাচাইয়ের মাধ্যমে, নির্বাচনী ব্যয়ের নিরপেক্ষ অডিটের মাধ্যমে। প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, এবং সবচেয়ে বড় কথা, জনগণকে হতে হবে সজাগ ও সাহসী। যে মানুষ একদিনের টাকার লোভে নিজের ভোট বেচে দেয়, সে আসলে নিজের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে।

 

ভোট শুধু অধিকার নয়, এটা দায়িত্বও। আমরা যদি সত্যিকারের গণতন্ত্র চাই, তাহলে কালোটাকার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই হবে। জনসম্পৃক্ত, স্বচ্ছ ও ন্যায়নিষ্ঠ রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় কালো টাকার রাজত্ব ভেঙে দিতে হবে। অন্যথায়, ভোট থাকবে, কিন্তু তা হবে শুধুই এক অভিনয়, যেখানে জনগণ দর্শক, আর ক্ষমতাবানদের হাতেই থাকবে মঞ্চের নিয়ন্ত্রণ।

তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন,
আজ আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে—আমরা কি সেই অভিনয়ের দর্শক হয়ে থাকবো, না কি আমরা নিজেদের অধিকার রক্ষায়, কালোটাকার বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নেব? সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি।