Image description
 

বিএনপির অন্যতম শীর্ষ নেতৃত্বসহ বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক নেতা এখনো পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ইমিগ্রেশন বিভাগের নিষেধাজ্ঞায় রয়েছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলে দলটির কয়েক সারির নেতার নামে ইমিগ্রেশনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো অনেকের নামে সেই নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে। বিএনপি নেতারা ছাড়াও সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তির নামও রয়েছে স্টপ লিস্টে (ইমিগ্রেশনে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা)।

 

 

 

এ কারণে চিকিৎসা কার্যক্রমসহ গুরুত্বপূর্ণ ও পারিবারিক কাজে বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে বিমানবন্দরে বিড়ম্বনায় পড়ছেন তারা।

একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, শীর্ষস্থানীয় ও পরিচিত নেতা এবং বিভিন্ন পর্যায়ের কিছু ব্যক্তির নামে থাকা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলেও বড় একটি অংশ এখনো নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছেন। এ ক্ষেত্রে এসবির শীর্ষ পর্যায়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেক ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা তুলতে টাকা লেনদেনেরও অভিযোগ উঠছে।

 

এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার আমার দেশকে বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরই ইমিগ্রেশন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দরকার ছিল। হাসিনার শাসনামলে প্রতিহিংসামূলকভাবে বিএনপির অনেক নেতার বিরুদ্ধে এনআইডি ব্লকসহ বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। এখনো যদি নিষেধাজ্ঞা থাকে, দ্রুততম সময়ে সেগুলো তুলে নেওয়া উচিত।

 

শেখ হাসিনার ১৬ বছরে মিথ্যা, গায়েবি মামলাসহ সব ধরনের অন্যায়-অত্যাচার চালানো হয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা বড় ধরনের জুলুমের শিকার হন। বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েক হাজার নেতার নামে ইমিগ্রেশনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় ‘এসবি ইমিগ্রেশনে’। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়া পর্যন্ত এসবি প্রধান ছিলেন অতিরিক্ত আইজিপি (সাবেক) মনিরুল ইসলাম। তার নেতৃত্বে ইমিগ্রেশনে ব্লক করে অনেক অসুস্থ নেতাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে দেওয়া হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে কিছুটা কম পরিচিত নেতা ও ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে তখন নিষেধাজ্ঞার দোহাই দিয়ে বিভিন্ন অংকের লেনদেনের অভিযোগ ছিল ব্যাপক আলোচনার বিষয়।

 

জানা যাচ্ছে, পট-পরিবর্তনের পরও এখনো সেই ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। ফ্যাসিবাদের সহযোগী হিসেবে অনেক ব্যবসায়ী, সাবেক আমলা, রাজনৈতিক নেতা নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত হয়েছেন। সব মিলিয়ে পুরাতন এবং ৫ আগস্টের পরের মিলিয়ে প্রায় ৭ হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে ইমিগ্রেশনে নিষেধাজ্ঞা ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্লক রয়েছে বলে জানা গেছে। শেখ হাসিনার সময়ের চেয়ে বর্তমানে লেনদেনের অভিযোগ কিছুটা কমলেও এটি বন্ধ হয়নি। বাড়তি ঝমেলা এড়াতে অনেকে আপসরফার মাধ্যমে ইমিগ্রেশন ঝামেলা মিটিয়ে ফেলছেন।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাড্ডা এলাকার সাবেক কমিশনার ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্র ঋণবিষয়ক সম্পাদক এম এ কাইয়ুম সম্প্রতি চিকিৎসার উদ্দেশ্যে বিদেশ যেতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান। তবে ইমিগ্রেশন থেকে তার নামে নিষেধাজ্ঞার কথা জানানো হয়। তাৎক্ষণিক তিনি সংশ্লিষ্ট একাধিক চ্যানেলে যোগাযোগ করেন। এভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনেকে। নিজের স্ট্যাটাসের কারণে কেউ কেউ পার পেলেও হয়রানি থেকে বাঁচতে পারছেন না বেশিরভাগই।

 

জানা গেছে, গত মে মাসে গুরুত্বপূর্ণ একজন জাতীয় ব্যক্তিত্ব দেশে ফেরার সময় ইমিগ্রেশন অফিসাররা তার নামে নিষেধাজ্ঞা দেখতে পেয়ে হতবাক হয়ে যান। শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে প্রতিহিংসামূলকভাবে তার নামে তিন দফায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। জাতীয় পরিচয়পত্রও ব্লক করা হয়। কিন্তু আগস্টের পরিবর্তনের পরও জাতীয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তিত্বের নাম স্টপ লিস্ট থেকে বাদ না দেওয়ায় এসবির শীর্ষ পর্যায়ের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন থেকে উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করে বিকল্প ব্যবস্থায় বিষয়টি সমাধান করা হয়।

 

শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহচর ও সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ রাতের আঁধারে বিদেশ যাওয়ার পর হৈচৈ শুরু হলে এ বিষয়ে এসবির শীর্ষ পর্যায়ের দায় নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। আবদুল হামিদ দেশে ফিরে আসার পর পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ে এ বিষয়টি আলোচনা হচ্ছে। তার নামে কিশোরগঞ্জে মামলা হওয়ার প্রেক্ষাপটে সংশ্লিষ্টরা যথাযথ নিয়মে এসবি প্রধান বরাবর আবদুল হামিদের দেশ ত্যাগের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে আবদুল হামিদের নাম এসবির ইমিগ্রেশন নিষেধাজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে দায় কার, তা বের করা কঠিন কিছু নয়। কিন্তু দেখা গেল হামিদের বডিগার্ড ও ইমিগ্রেশনের দায়িত্বরত ছোট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলো। আড়ালেই থেকে গেল আসল ঘটনা।

 

সর্বশেষ শেখ হাসিনার চাচা শেখ কবির হোসেন ৮ জুন ভোরে সিঙ্গাপুর চলে যান। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ২৩ প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার শীর্ষ পদে ছিলেন শেখ কবির হোসেন। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত একাধিক বিমা কোম্পানি, সেবা খাতের সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং গুরুত্বপূর্ণ অ্যাসোসিয়েশন রয়েছে এই তালিকায়। শারীরিক অসুস্থতার কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের বোর্ড মিটিংয়েও নিয়মিত অংশ নিতে পারতেন না। আবার কোনো কোম্পানি দখল করার পর তাকে সামনে রাখা হতো। এসব কোম্পানির নেপথ্যে মালিকানায় ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বিতর্কিত ব্যবসায়ী চৌধুরী নাফিজ সরাফাতসহ ফ্যাসিস্টের সুবিধাভোগী কয়েকজন ব্যবসায়ী। আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত একাধিক কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালক আবার অন্য একাধিক তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্বতন্ত্র পরিচালক ছিলেন।