Image description

কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার ২ নম্বর গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন পরিষদের নির্বাচিত ইউপি সদস্যরা। গত সোমবার (২৩ জুন) তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিতভাবে এ প্রস্তাব দাখিল করেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মাদকাসক্ত এবং পরিষদ পরিচালনায় বেপরোয়া আচরণ করছেন। তিনি পরিষদ চত্বরে নিয়মিত মাদকসেবনের আড্ডা বসান এবং পরিষদের সদস্যদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।

এ ছাড়া তিনি বিগত চেয়ারম্যানের রেখে যাওয়া কংকর ও মূল্যবান কাঠ আত্মসাৎ করেছেন।

ইউপি সদস্যরা অভিযোগ জানিয়ে বলেন, ইউনিয়নের ১, ৩, ৪ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ নাগরিকদের নাগরিক সেবা যেমন জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ এবং প্রত্যয়নপত্র প্রদান থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিরত থাকছেন চেয়ারম্যান। এসব কর্মকাণ্ডের কারণ হিসেবে তিনি সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডবাসীর ‘বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ’কে দুষছেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্যরা জানান, নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান নিজেকে ‘দ্বিতীয় শেখ মুজিব’ হিসেবে দাবি করেন এবং ইউনিয়ন পরিষদের মাসিক সভা, উন্মুক্ত বাজেট সভা কিংবা স্থায়ী কমিটির কোনো সভা আয়োজন করেন না।

এমনকি বর্তমান সরকারের পরিবর্তনের পরও তিনি আগের মতোই কর্তৃত্ববাদীভাবে পরিষদ পরিচালনা করছেন।

অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, চেয়ারম্যান তার ব্যক্তিগত জমিতে ‘ভুয়া স্টেডিয়াম’ দেখিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প—যেমন টিআর, কাবিখা এবং ভিজিডি-ভিজিএফ বাবদ লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন, যার প্রমাণ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ে সংরক্ষিত রয়েছে।

অভিযোগকারীরা এসব কর্মকাণ্ডের তদন্তপূর্বক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমানকে দ্রুত অপসারণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমানের বাবা ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, ‘জমিটা আমার ও আমাদের ওয়ারিশের নামে।

আমার জমি কবালা মূলে ছেলেকে দি নাই, ওয়ারিশ থেকে নিয়ে সে খেলার মাঠ করেছে।’

গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘ইউপি সদস্যরা যে অভিযোগগুলো তুলেছেন, তার কিছু সত্য, কিছু মিথ্যা। সাবেক চেয়ারম্যানের প্রকল্পের যেসব সামগ্রী ছিল, সেগুলো তখন পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। আমি সেগুলো সংগ্রহ করে ছোট ছোট পিলার তৈরি করেছি এবং সেগুলো স্টেডিয়ামে ঘিরা দেওয়ার কাজে ব্যবহার করছি। আমি একজন ক্রীড়াপ্রেমী, ভুয়া প্রকল্প কেন দেবো? যে জমির কথা বলা হচ্ছে, সেটি আমার বাবার মালিকানাধীন, আমি কীভাবে সেটা ইউনিয়ন পরিষদের নামে হস্তান্তর করব? আমি কোনো ভুয়া প্রকল্প দেইনি।

সরকারি অর্থায়নে তিন-চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি শুধু মাঠে জন্য যেগুলোর আনুমানিক ব্যয় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। এখানে আমি আত্মসাৎ করবো কেন? ওই স্টেডিয়ামে আমি ৪০-৫০ লাখ টাকা খরচ করছি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের আবেদন জমা দিয়েছেন। আমরা ইতিমধ্যে একজন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছি। প্রতিটি অভিযোগ তিনি বিশ্লেষণ করে দেখবেন এবং সেই অনুযায়ী একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রদান করবেন। উক্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান ২০২১ সালের ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।এবং চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে পরিষদে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করে। এমনকি পরিষদে পোস্টার লাগিয়ে কয়েটি ওয়ার্ডের সেবা ও বন্ধ করে দিয়ে দিল।