Image description

সাবেক ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী হাসিনার অন্যতম দোসর তার রাতের ভোটের বৈধতা দেওয়া সাবেক সিইসি নুরুল হুদা। এই ব্যক্তিকে ঘিরেই এখন প্রশ্ন তোলা হচ্ছে মব তৈরির। হাসিনা পালানোর পর মামলা হয় নুরুল হুদার বিরুদ্ধেও। তিনি উত্তরার নিজ বাসায়ই দীর্ঘ দিন ধরে আত্মগোপনে থাকলেও দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে খুঁজে পায়নি। বিষয়টিকে অনেকেই যখন হাস্যকর হিসেবে দেখছেন তখন হাসিনার দোসর কিছু মিডিয়া নুরুল হুদার গ্রেফতারের বিষয়টিকে ভিন্নভাবে প্রবাহিত করে মব সৃষ্টি করা হয়েছিলো বলে চালিয়ে দেওয়ার পায়তারা করছে। এসব মিডিয়ার সাথে আবার যুক্ত হয়েছে দেশের নামধারী কিছু সুশীল ব্যক্তিবর্গ।

 

 

স্বৈরাচারের দোসর এসব মিডিয়াসহ নামধারী সুশীলরা আজ মায়া কান্নায় ব্যস্ত। তাদের ভাবখানা এমন যে ফ্যাসিস্ট হাসিনার রাতের ভোটের বাস্তবায়নকারী সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার একেবারেই দুধে ধোয়া তুলসী পাতা আর নির্দোষ। সম্প্রতি উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরের নুরুল হুদার নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অথচ শেরে বাংলা থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা ছিলো বেশ আগে থেকেই। নুরুল হুদা গ্রেফতারের আগে সেখানে জড়ো হয় সাধারণ ছাত্র জনতা, এক সময় সাবেক এই প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জুতার মালা পরিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ জনতা।

 

 

জনগণ যে পরিমাণ ক্ষিপ্ত ছিল এই অপরাধীর বিরুদ্ধে তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলতে পারতো, তা না করে শুধু জুতার মালা পরিয়ে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে এটা তো অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও ভদ্রতাপ্রশুতো প্রতিবাদ ছিল। এরপরও এই বিষয়টিকে নিয়েই দেশের হাসিনা পন্থী কিছু মিডিয়া গুজব ছড়ানোর চেষ্টায় মত্ত, তাদের দাবি নুরুল হুদাকে আটক করতে সৃষ্টি করা হয়েছিলো মবের। এর সাথে যোগ দিয়েছে দেশের সুশীল সমাজের ব্যক্তিরাও।

 

 

এখন প্রশ্ন হলো তার বিরুদ্ধে তো আগে থেকেই মামলা রয়েছে আর ফ্যাসিস্ট হাসিনার সময় রাতের ভোটের পাশাপাশি ভোট ডাকাতিতে সহায়তা করা নুরুল হুদাকে পুলিশ কেন আগে খুঁজে পেতে ব্যর্থ হলো? রহস্যজনক কারণে নিজের বাসভবনে অবস্থান করলেও পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করেছে এতদিন, গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করলে আজ জনগণের সেখানে গিয়ে তাকে ধরে বের করার প্রয়োজন হতো না। জনগণ তো তাকে খুঁজে বের করে পুলিশের কাছেই সোপর্দ করেছে তাহলে এখানে মব সৃষ্টির প্রশ্ন আসলো কোথা থেকে?

 

 

এখন যারা নুরুল হুদাকে নিয়ে গলা ফাটাচ্ছেন, তারা কোথায় ছিলেন এতদিন? বাংলাদেশে থাকলে নিশ্চয় আপনার জানার কথা ১৮ এর সেই নির্বাচনে যখন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন নুরুল হুদা তখন তিনি কি করেছেন। একে তো বিএনপি অংশ না নেওয়ায় সেই নির্বচন হয়ে পড়ে পক্ষপাতদুষ্ট এ একতরফা সেখানে আবার সেই নির্বাচনের ব্যালট পেপারে গণহারে নৌকার সিল মারা হয় আগের রাতেই। এসবের কি কোন দায়ভার নেই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের?

 

 

একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগই করা হয় সুষ্ঠু সুশৃঙ্খল নির্বাচন আয়োজনের জন্য। সেখানে নুরুল হুদা এত বড় অধর্মের কাজ করলেন এরপরও কি তিনি নির্দোষ? তার হয়ে গলা ফাটাতে কি লজ্জা করছে না আজ? ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর অপরাধী কে ধরতে জনতা একজোট হয়ে তাকে জুতার মালা পরালে উচিৎ কাজ করেছে, এসব ভোট চোর দালালদের এমনটিই হওয়া উচিৎ বলেই মনে করছেন নেটিজেনরা। আবার মব নিয়ে সাফাই গাইছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারাও যা অত্যন্ত হাস্যকর বলেই মন্তব্য করছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে নেট নাগরিকরা।

 

 

ফারজানা রিয়া নামের একজন ফেইসবুকে লিখেছেন, ‘কি হাস্যকর কথাবার্তা! দেশের কিছু মিডিয়ার মধ্যে এখনো স্বৈরাচারের ভূত-প্রেত বসে আছে। আপনাদের সাথে কি চোখ নেই? কোনটাকে মব বলছেন? ছাত্র-জনতা যেখানে পুলিশকে সহায়তা করলো একজন ভোট চোরকে ধরতে আপনারা সেটাকে মব বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন? আপনাদের কি লজ্জা আছে? আবার উপদেষ্টাদেরও দেখছি বিষয়টিকে মব বলে সাফাই গাইছেন, এসব চরম হাস্যকর কর্মকাণ্ড।’

 

 

প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম নামের আরেকজন ফেইসবুকে লিখেছেন, ‘সুশীল সমাজের নামধারী ব্যক্তিরা কোথায় ছিলেন ১৮ এর নির্বাচনে? জীবনের প্রথম ভোট দিতে গিয়ে সেদিন ভোট দিতে পারিনি, আমার ভোট নাকি আগেই হয়ে গেছে। আর আজ আপনারা মায়া কান্না দেখাচ্ছেন সেসময়ে ভোট ডাকাতের অন্যতম নায়ক নুরুল হুদাকে বাঁচাতে? আপনাদের লজ্জা থাকা উচিৎ। ভুল করেও এমন বেহায়াপনা দেখাবেন না, ছাত্র জনতা ২৪ এর মত গর্জে উঠলে এমন দালাল মিডিয়া একটাও বাঁচবে না।’

 

 

এদিকে গ্রেফতারের পর সাবেক সিইসি নুরুল হুদাকে আদালতে তোলা হলে তাকে চারদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। অন্যায় প্রভাব খাটিয়ে প্রহসনের নির্বাচন দেওয়ার অভিযোগে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় করা মামলায় গ্রেপ্তারের পর সাবেক এই সিইসিকে গতকাল সোমবার সিএমএম কোর্টে তোলা হলে শুনানি শেষে ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজ রহমান ৪ দিনের রিমান্ডের এ আদেশ দেন।