
আওয়ামী লীগ সরকারে আমলে সংঘটিত নানা ‘অনিয়ম’, ‘দুর্নীতি’, ‘দুর্বৃত্তায়ন’, ‘গণতন্ত্রবিরোধী কার্মকাণ্ড’, ‘স্বেচ্ছাচারিতা’, এবং ‘নিবর্তনমূলক’ কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে হার্ডলাইনে যাচ্ছে বিএনপি। এরইমধ্যে গুম কমিশনে রিপোর্ট, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা, দলীয় নেতা-কর্মী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সারাদেশে হাজার হাজার মামলা দায়ের করেছে দলটির বিভিন্ন পর্ যায়ের নেতারা। এবার দলীয়ভাবে সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছে বিএনপি।
রোববার (২২ জুন) সকাল ১০টায় নির্বাচন কমিশনে অভিযোগপত্র জমা দিয়ে ১০টা ৪০ মিনিটে শেরেবাংলা নগর থাকায় মামলার আবেদন করবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। সম্প্রতি তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদসহ বেশ কয়েকজনকে আসামি করে মামলার আবেদন করেছেন।
দলীয় সূত্রমতে, ক্ষমতাচ্যুৎ আওয়ামী লীগকে বিন্দুমাত্র ছাড় না দেওয়ার মানসিকতা থেকে এসব মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। কেবল দলটির শীর্ষ নেতা বা মাঠ পর্যায়ে নেতা-কর্মী নয়, বিগত সকরারের বিভিন্ন পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থান নিতে যাচ্ছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে ২০২৩ সালে ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টন সংঘর্ষে নিহত যুবদল নেতা শামীম মোল্লাহ হত্যা মামলায় সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়েছে সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলমকে।
এরই ধারাবাহিকতায় বিগত তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘বিতর্কিত’ করার অভিযোগ এনে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে আজ মামলা করতে যাচ্ছে বিএনপি।
২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের অধীন, ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সিইসি কে এম নূরুল হুদার অধীন ও ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের অধীন কমিশন সম্পন্ন করে।
এর মধ্যে ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করে বিএনপিসহ প্রায় সবগুলো রাজনেতিক দল। ওই নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেড় শতাধিক আসনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ সবগুলো রাজনৈতিক দল অংশ নিলেও কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারে নি। নির্বানে বিএনপি মাত্র ৬টি আসনে জয়লাভ করে, বাস্তবার নিরীখে যা ছিল খুবই হাস্যকর। ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আবারও বয়কট করে বিএনপিসহ বেশির রাজনৈতিক দল। সে সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন কাজী হাবিবুল আউয়াল।
বিএনপির অভিযোগ, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদে থেকে ঠিক মতো দায়িত্ব পালন করেননি কাজী রাকিবউদ্দীন আহমেদ, কেএম নুরুল হুদা এবং কাজী হাবিবুল আউয়াল। বরং তারা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের তরপিবাহক হিসেবে কাজ করেছেন। এই কারণে তাদের শাস্তির আওতায় আনা দরকার।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘‘গণতন্ত্র ধ্বংস এবং মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার মিশনে আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করেছেন এই তিন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার। জনগণের দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব এদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের কাছে নালিশ করা। আমরা সেই উদ্যোগই নিতে যাচ্ছি।’’
সারাবাংলা