
আওয়ামী লীগের সময়ে গোলাম রাব্বানী ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। সেই সময় দলীয় মনোনয়ন না পেলেও ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেই সক্রিয় ছিলেন তিনি। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে বাড়তি সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার উদ্দেশ্যে যোগ দেন গণঅধিকার পরিষদে। যোগ দেওয়ার কিছু দিন পরেই হয়ে যান জেলা কমিটির আহ্বায়ক। গত ৫ জুন আওয়ামী লীগ সম্পৃক্ততার অভিযোগে গণঅধিকার পরিষদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। তবে এবার তিনি হয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমন্বয়ক কমিটির সদস্য।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) জাতীয় নাগরিক পার্টি তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট নওগাঁ জেলা সমন্বয় কমিটি ঘোষণা করেছে। সমন্বয় কমিটির সদস্য তালিকায় রয়েছে গোলাম রাব্বানীর নাম। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। অভিযোগ রয়েছে, গোলাম রাব্বানী প্রয়াত সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলমের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন এবং সেই সময় প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় বিভিন্ন মানুষকে হয়রানি ও মারধর করেছেন।
জানা যায়, ২০২৪ সালের মে মাসে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে মোটর সাইকেল প্রতীকে নির্বাচন করেন গোলাম রাব্বানী। সেই নির্বাচনে দুই হাজার ৭২৪ ভোট পেয়ে জামানত হারান তিনি। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকা ব্যক্তিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির জেলা সমন্বয় কমিটির সদস্য করায় শহরজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
এদিকে শুক্রবার (২০ জুন) বেলা ১১টার দিকে শহরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে গণধিকার পরিষদের রাজনীতি থেকে সরে এসে জাতীয় নাগরিক পার্টিতে যোগদানের ঘোষণা দেন গোলাম রাব্বানী।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নওগাঁয় নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থী আরমান হোসেন বলেন, এনসিপির কাছে আমাদের প্রত্যাশা খুবই অল্প ছিল। জুলাই অভ্যুত্থানের পরে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা বলে অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া কয়েকজন যখন দল করে তখন আমরা ভেবেছিলাম এই দল অন্তত বিশ্বাসঘাতক হবে না, জুলুমকারীদের কাছে মাথা নত করবে না, ফ্যাসিবাদ ও অন্যায়ের বিপক্ষের শক্তি হয়ে সাধারণ মানুষের কণ্ঠ হয়ে উঠবে। কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম দলটির আত্মপ্রকাশের পর থেকেই আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন, থানায় গিয়ে রেফারেন্স দিয়ে আসামি ছাড়িয়ে আনা, নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি, শক্তি প্রদর্শন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করেই যাচ্ছে। যেগুলো আমরা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রেও দেখি। তাহলে এনসিপির পার্থক্য কোথায়। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক।
নওগাঁ জেলা গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউর রহমান বলেন, গোলাম রাব্বানী আত্রাই-রাণীনগরের প্রয়াত সংসদ সদস্য ইসারাফিল আলমের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। ইসরাফিল আলমের প্রভাব খাটিয়ে তিনি এলাকায় বিভিন্ন মানুষকে হয়রানি এবং মারধর করেছেন। তার পরিবারের সকলেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন কবিরকে মোটা অংকের অর্থ দিয়ে আহ্বায়ক পদে নিযুক্ত হন। ৫ আগস্টের আগে গণঅধিকার পরিষদের রাজনীতিতে সে যুক্ত ছিল না। আমরা তার আওয়ামী সম্পৃক্ততার অভিযোগগুলো কেন্দ্রে দীর্ঘদিন যাবত জানিয়ে এসেছি। কেন্দ্রীয় কমিটি দেরীতে হলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। বাড়তি সুযোগ সুবিধা নেওয়ার জন্য তিনি গণঅধিকার পরিষদে যোগ দিয়েছিলেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম রাব্বানী বলেন, আমি ২০২১ সাল থেকে গণঅধিকার পরিষদের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু দলটির অভ্যন্তরীণ অগণতান্ত্রিক আচরণ, চাপ প্রয়োগ ও নেতিবাচক রাজনীতির কারণে নিজে থেকেই গণঅধিকার পরিষদ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরে দাঁড়াই। ১১ জুন আমি আহ্বায়কের পদ থেকে লিখিত পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। এরপরও গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি আমার পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে গত বুধবার (১৮ জুন) আমার বিরুদ্ধে পূর্বের তারিখে ভুয়া বহিষ্কারাদেশ জারি করে। সেই আদেশে আমার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে। ২৪ সাল থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। জাতীয় নাগরিক পার্টির রাজনীতি আমার পছন্দ হয়েছে। তাই দলটিতে যোগদান করেছি।
এ বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং নওগাঁ জেলার প্রধান সমন্বয়ক মনিরা শারমিনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।