Image description

রাঙামাটিতে আনোয়ার হোসেন কায়সার নামের এক ছাত্রলীগ কর্মীকে পিটিয়ে পুলিশে দিয়েছেন ছাত্রদল ও শিবিরের নেতা-কর্মীরা। আজ শুক্রবার দুপুরে শহরের বনরূপায় এ ঘটনা ঘটে। এদিকে ছাত্রলীগ কর্মীকে পেটানোর একপর্যায়ে ছাত্রদল ও শিবিরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

আনোয়ার হোসেন কায়সার নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের রাঙামাটি জেলা কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি। আজ দুপুরে জুমার নামাজের পর একটি ট্যাক্সিতে করে চট্টগ্রামে যাওয়ায় সময় তাঁকে আটকে দেন ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। উত্তেজিত যুবকেরা কায়সারকে মারধর করেন। পরে পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। গত ৫ আগস্টের পর শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় দায়ের করা একটি মামলায় আটক হন কায়সার। কিন্তু কিছুদিন কারাগারে থাকার পর হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে লুকিয়ে থাকছিলেন তিনি। আজ শুক্রবারই তিনি রাঙামাটি আসেন বলে জানিয়েছেন তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, আজ একটি বিয়ের দাওয়াতে এসে বনরূপা মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে তাঁকে দেখে জড়ো হন ছাত্রশিবির, ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন। পরে কায়সার ওই স্থান থেকে দ্রুত পালাতে একটি ট্যাক্সিতে করে রাঙামাটি ছাড়ার সময় তাঁকে আটক করে ব্যাপক মারধর করা হয়। তাঁর শরীরের পোশাক ছিঁড়ে ফেলা হয়।

কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) মো. সাহেদ বলেছেন, ‘আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে কায়সারকে উদ্ধার করে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে এসেছি। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

এদিকে কায়সারকে মারধরের ঘটনার সময় এক ছাত্রদল নেতার ওপর শিবিরের হামলার ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কায়সারকে মারধরের সময় একদল শিবির কর্মী ছাত্রদলের দুই নেতার ওপর হামলা করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে শিবিরের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালান। এ সময় শিবিরের অন্তত ৫ জন আহত হন। পরে বিএনপি ও জামায়াতের সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।’

হামলার শিকার রাঙামাটি সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাদুর শাহ বলেন, ‘ছেলেপেলেরা যখন গাড়ির ভেতর কায়সারকে মারধর করছিল এবং গাড়িতে আঘাত করছিল, তখন আমি তাদের বলি, গাড়ির ভেতর থেকে বের করতে এবং গাড়িতে আঘাত না করতে। তখন শিবিরের একটা ছেলে কোনো কারণ ছাড়াই আমাকে ও আকাশকে ঘুষি মারে এবং একটি বস্তু দ্বারা আঘাত করে। খবর পেয়ে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ছুটে আসে এবং শিবির কর্মীদের ধাওয়া দিলে তারা ইসলামি সেন্টারে ঢুকে যায়। এ সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। শিবিরের ছেলেরা বিনা উসকানিতে আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমরা দুজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি।’

এ বিষয়ে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করে রাঙামাটি জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি শহিদুল ইসলাম শাফি বলছেন, তেমন কিছুই হয়নি। হামলায় ছাত্রশিবিরের কেউ আহত হয়েছেন কি না, সেটিও জানাতে চাননি তিনি। এদিকে জেলা জামায়াতের সিনিয়র নেতা ও শুরা সদস্য অ্যাডভোকেট হারুনুর রশীদ বলেন, ‘নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসী আনোয়ার হোসেন কায়সারকে আটকের পর মারধর করার সময় না চেনার কারণে শিবির ও ছাত্রদলের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে। আমরা খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই পক্ষকে সরিয়ে দিয়েছি। এ সময় শিবিরের একজন কর্মীকে বেশি মারধর করা হয়েছে। জেলা বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা বসে বিষয়টি সমাধান করে দেব। ছাত্রশিবিরের সঙ্গে তো ছাত্রদলের কোনো বিরোধ নেই। এটা নিছক ভুল-বোঝাবুঝি।’ রাঙামাটি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ বলছেন, ‘ছাত্রলীগের একজনকে আটক করার সময় ছাত্রদল ও শিবিরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল-বোঝাবুঝির ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি আমরা বসে সমাধান করে দেব।’