
বাজেটে কালো টাকা সাদা করে লুটপাটতন্ত্রের বৈধতা না দেওয়ার বিষয়টি অনুপস্থিত বলে মন্তব্য করেছেন কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার।
রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে বৃহস্পতিবার সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড পিস স্টাডিজের বাজেট সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এমন মন্তব্য করেন তিনি।
ফরহাদ মজহার বলেন, এ রাষ্ট্রকে কালো টাকা সাদা করার বৈধতা দেওয়ার ধারণা থেকে সরে আসতে হবে। আমরা বলেছি, এটা আমরা আয় করেছি, আয় করে দেয়নি। পরে আমরা কর দিয়ে বৈধ করে নিচ্ছি, সেটা এমন কোনো অপরাধ না। কিন্তু যেটা একটা দুর্নীতি, লুট করা, লুটেরা অর্থনীতিকে বৈধতা দেওয়া এই রাষ্ট্রের দায় কিনা? রাষ্ট্র বৈধতা দেবে কিনা? এ রকম একটা কথা এ সরকারের কাছ থেকে আমরা শুনতে চেয়েছি। মাফিয়াতন্ত্রকে বৈধতা দেব না-এটা বাজেট তার বাজেটের ভাষায় বলবে। এ বাজেটে এটা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত।
তিনি বলেন, দেশের প্রতিরক্ষার জন্য কোনো স্পষ্ট বাজেট উল্লেখ করা নেই। প্রতিরক্ষায় কোথায় কত ব্যয় হচ্ছে তা গোপন না রেখে প্রকাশ করা উচিত।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশ্যে ফরহাদ মজহার বলেন, আমি তাকে অশ্রদ্ধা করে বলবো না। তিনি কিন্তু ইকনোমিকসে নোবেল পাননি, তিনি পেয়েছেন শান্তিতে। তো আমাদের একটু সচেতন থাকা দরকার। আমরা কিন্তু তার ‘থ্রি জিরো’ তত্ত্বকে জাতীয় নীতি আকারে গ্রহণ করি নাই।
তিনি বলেন, এই ‘থ্রি জিরো’ কে ইমপ্লিমেন্ট করার জন্য গণঅভ্যূত্থানটা হয় নাই। আমি ইউনূস ভাইকে অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে বলছি কথাটা, এটা তার ভাবমূর্তিকে নষ্ট করে। এ বাজেটে তারা বলছে, তারা ‘থ্রি জিরো’ বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু এটার জন্য আমরা গণঅভ্যূত্থানটা করি নাই।
ফরহাদ মজহার বলেন, আমরা চেয়েছি ভিন্ন ধরনের বাজেটের নামে যে লুটপাটতন্ত্রকে অবৈধ, এটা পেলেই যথেষ্ট। আর তার যে তত্ত্ব (থ্রি জিরো) সম্পর্কে আমাদের বক্তব্য আছে আলাদা। সেটা আমরা আলাদা করবো।
তিনি বলেন, এটা একটা ব্যক্তির স্বপ্ন আমরা এটার প্রসংশা করি। কিন্তু আমাদের কথা তার এই তত্ত্ব বাজেট প্রস্তাবনায় কেন? আন্তর্জাতিকভাবে এটার খ্যাতি থাকতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশে এই তত্ত্ব সঠিকভাবে নেই; এটা আলোচনার অধিকার আমাদের আছে। তাকে অসম্মান করার জন্য বলছি না, তবে এটা যদি তিনি বাজেটে ঢোকান, তাহলে তিনি অসম্মানিত হবে।
তিনি বলেন, এ সরকার নির্বাচিত, তবে অন্তর্বর্তী বটে। কিন্তু নির্বাচিত, অনির্বাচিত না। আমাদের লুটেরা-মাফিয়াতন্ত্র ওয়ালারা বলে এটা অনির্বাচিত সরকার। এটা নির্বাচিত সরকার; এটা আমরা মেনে নিয়েছি কেন? যেহেতু আমরা মনে করি জনগণ তাদের এটা দিয়েছে। কাজেই এ সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি।
তিনি বলেন, আমি মনে করি-এ বাজেটটা আমাদের যথেষ্ট পরিমান সন্তুষ্ট করতে পারে নাই। যে স্পিরিটটা আমরা বাজেটে দেখতে চেয়েছি সেটা আমরা দেখি নাই। এটা একান্তই একটা পুরোনো টেকনোক্র্যাটিক এক্সারসাইজ মনে হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, দেশের স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা না করে বাজেট ঘোষণা করা অন্তর্বর্তী সরকারের উচিৎ হয়নি। বাজেটে কালো টাকাকে সাদা করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে, এটি প্রত্যাহার করা উচিৎ। এটি অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্য।