Image description

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, লন্ডনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক একটি দলের পছন্দ হয়নি। যে কারণে নারাজ হয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে মঙ্গলবার তারা হাজির হয়নি। তিনি বলেন, সংঘর্ষে না গিয়ে দুই নেতা শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছেন। একেই বলে রাষ্ট্রনায়কোচিত নেতা। রাষ্ট্রনায়ক সব সময় জনগণের শান্তির কথা চিন্তা করে কোনো বিভাজনে না গিয়ে আমাদের একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের সুযোগ করে দিয়েছেন। অনেকের পছন্দ হয়নি। কারণ নির্বাচন হলেই তাদের বিপদ। এখন নির্বাচন নেই তাই তাদের অনেক গুরুত্ব। নির্বাচন হলে জনগণের ভালোবাসার দল ক্ষমতায় এলে তাদের গুরুত্ব কমে যাবে এটা তারা জানে। যে কারণে ওরা নারাজ হয়েছে। এ জন্য মঙ্গলবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে তারা হাজির হয়নি।

বুধবার রাজধানীর তুরাগের রানাভোলায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য ফরম নবায়ন কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, যারা আওয়ামী লীগের মতো আচরণ, জোর করে অধিকার হরণ করে, চাঁদাবাজি করে- তারা তো আওয়ামী লীগের মতো হয়ে যাবে। এগুলো করা যাবে না। আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ চাই, পরিবর্তন চাই। আওয়ামী লীগের আগের মতো দুঃশাসন চাই না।

তিনি সতর্ক করে বলেন, আজকে যে সদস্য নবায়ন করা হচ্ছে সেখানে যেন কোনো আওয়ামী লীগ না থাকে। কারণ এটা পরীক্ষিত, আওয়ামী লীগের কেউই ভালো না। আওয়ামী লীগ নিজের স্বার্থ ছাড়া আর কারো স্বার্থ দেখতে পারে না। তাই তাদের কাউকে দলে নেওয়া যাবে না। তবে নিরপেক্ষ কেউ থাকলে তাকে অবশ্যই দলে আসার জন্য আহ্বান জানানো হবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের সময় ভোটকেন্দ্রে কেউ যেতে পারেনি। ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগেই তার ভোট দেওয়া হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমরা এটি চাই না। আমরা নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেয়েছিলাম, যাতে সবাই তার নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও একই কথা বলেছেন যে, মানুষকে শাসিয়ে বা তাদের অধিকার হরণ করে ভোট পাওয়া যাবে না; বরং বিনয়ী হয়ে ভোট চাইতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ দুঃশাসন চালিয়েছে। সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে।

তিনি বলেন, একদিন কারাগারে দেখলাম বৃদ্ধ বয়সে কয়েদির পোশাক পরে ঝাড়ু দিচ্ছে বোরহান নামে এক বিএনপি কর্মী। তাকে দেখে আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি। বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ যা বলতো, তাই আইনে পরিণত হতো। উত্তরায় আমার বাসায় ডিশের লাইনের সংযোগ দিত তুষার নামে এক ব্যবসায়ী। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তার ডিশের ব্যবসা কেড়ে নিয়েছে। বর্তমানে বিএনপির কর্মীরা এমন করলে আমরাও তো তাদের মতো হয়ে যাবো। তাদের মতো অন্যের ব্যবসা কেড়ে নেয়া যাবে না। এ বিষয়ে আমরা সব সময় সতর্ক আছি।

তিনি আরো বলেন, আমরা জনগণের জন্য কাজ করি। দেশের জন্য কাজ করি। আমাদের দল ক্ষমতায় আসলে সর্বপ্রথম বেকার সমস্যার সমাধান করা হবে। এক কোটি বেকার মানুষের চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। তরুণ যুবকদের প্রাধান্য দিয়ে সরকার চালানো হবে। বর্তমানে যারা চাঁদাবাজি করছে তারা প্রফেশনাল চাঁদাবাজ। ঐসকল চাঁদাবাজরা যেভাবেই হোক সরকারি দলে ভিড়তে চেষ্টা করে। বিএনপিতে কোন চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না। ১৯৯১ সালে বিএনপি কয়টা সিট পাবে গ্যারান্টি ছিল না। তবে বিএনপির ভাবমূর্তি ভালো ছিল, তাই তখন সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করতে পেরেছিল।

সদস্য ফরম নবায়ন কর্মসূচি অনুষ্ঠানে তুরাগ থানা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হারুন অর রশিদ খোকনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক মো. আমিনুল হক, সদস্য সচিব মো. মোস্তফা জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, এম কফিল উদ্দিন, আফাজ উদ্দিন, এবিএম আব্দুর রাজ্জাক, উত্তরা পশ্চিম থানা বিএনপির আব্দুস সালাম, মোস্তফা সরকার, আলমগীর হোসেন শিশির, তুরাগ থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম, আলমাছ আলী, চান মিয়া বেপারী প্রমুখ।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক মো. আমিনুল হক বলেন, দুঃসময়ে যারা দলের পাশে ছিল এমন কর্মীদের সদস্য করা হবে। গত ১৭ বছর দলের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়েছেন, সমর্থন যুগিয়েছেন, তাদের সদস্য ফরম দেয়া হবে। তবে কোন আ.লীগের সদস্যকে সদস্য নবায়ন ফরম দেয়া হবে না। ৩ জুলাই পর্যন্ত সদস্য নবায়ন করা যাবে। নিজ নিজ ওয়ার্ডে সদস্য নবায়ন ফরম দেয়া হয়েছে। কেউ যদি আওয়ামী লীগের কোন নেতাকর্মীর সদস্য ফরম নবায়ন করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।