Image description

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর ইস্যুতে চলমান আন্দোলন থেকে ইশরাক হোসেনের সরে যাওয়া উচিত বলে মনে করে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি।

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে ফলপ্রসূ বৈঠকের পর এমন আন্দোলনের আর কোনো যৌক্তিকতা নেই বলেও মনে করেন দলটির অধিকাংশ নীতিনির্ধারক।

তবে সভায় নেতারা মত দেন, এখনই ইশরাক হোসেন আন্দোলন থেকে পিছু হটলে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে যে, সরকারের সঙ্গে বিএনপির সব বিষয়ে সমঝোতা হয়ে গেছে। তাই ধীরে ধীরে আন্দোলন থেকে সরে আসাই সবার জন্য ভালো হবে।

স্থায়ী কমিটির এক সদস্য আমার দেশকে জানান, দলটির নীতিনির্ধারকদের ৯৯ শতাংশ ইশরাকের এ আন্দোলনের পক্ষে নয়। এতে ইশরাকের যেমন ইমেজ নষ্ট হচ্ছে, তেমনি বিএনপিরও ইমেজ নষ্ট হচ্ছে।

গত সোমবার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ইশরাকের শপথ পড়ানোর ইস্যুতে চলমান আন্দোলন নিয়ে এর পক্ষে ও বিপক্ষে আলোচনার পর এমন অভিমতই ব্যক্ত করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ সদস্য। রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ‘লন্ডন বৈঠক’ এবং ইরশাকের শপথ ইস্যু ছাড়াও আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয় বলে আমার দেশকে নিশ্চিত করেন দলটির কয়েকজন নীতিনির্ধারক।

গত ১৪ মে থেকে ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভ করছে তার সমর্থক ও ডিএসসিসি কর্মচারী ইউনিয়ন। ঈদের পর এ আন্দোলন দ্বিতীয় মাসে গড়িয়েছে। এতে গত এক মাস ধরে নগর ভবন কার্যত বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গত সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বিএনপির নীতিনির্ধারকরা ইশরাকের শপথ ইস্যুতে চলমান আন্দোলন নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা করেন। অধিকাংশ নেতা অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, নির্বাচন ইস্যুতে লন্ডনে গত শুক্রবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যনের মধ্যে একটি ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে এক ধরনের স্বস্তিও ফিরে এসেছে। একই সঙ্গে নির্বাচন ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কিছুদিন ধরে চলা বিএনপির যে টানাপোড়েন চলছিল, তারও অবসান ঘটেছে। এমন অবস্থায় ইশরাকের শপথ ইস্যুতে আন্দোলনকে ভালোভাবে নিচ্ছে না দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা। তারা মনে করেন, সিটি করপোরেশনের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। তাই সব দিক বিবেচনায় আন্দোলন থেকে ইশরাকের এখন সরে যাওয়া উচিত। তবে বৈঠকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানা গেছে।

এ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ইশরাকের আন্দোলন (শপথ ইস্যুতে আন্দোলন) বিএনপির কোনো সিদ্ধান্ত নয়। বিএনপির মধ্যে এটা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

বৈঠকে লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ এবং পারস্পরিক সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। গত সোমবার রাতে বিএনপির মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

জানা গেছে, বৈঠকের শুরুতে ‘লন্ডন বৈঠক’-এর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বলা হয়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়ে লন্ডন বৈঠকটি সফল করে দেশের সর্বস্তরের মানুষের মনে আস্থার সঞ্চার করেছেন। কমিটি আরো মনে করে, বহুল কাঙ্ক্ষিত এ বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা ও দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সফলভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

জানা গেছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখবে বিএনপি। সেজন্য অবিশ্বাস তৈরি হয়, আপাতত এমন কিছুতে না জড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, লন্ডন বৈঠককে আমরা এখনো ইতিবাচক মনে করছি। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া, সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড আরো ত্বরান্বিত করা, নির্বাচনের লক্ষ্যে সাংগঠনিক কাজকে এগিয়ে নেওয়াÑএগুলোর ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।