
নানা ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যে দূরত্ব ছিল, তা লন্ডন বৈঠকে মিটে গেছে বলে মনে করছে বিএনপি। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ওই বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়ে দেশের সর্বস্তরের মানুষের মনে আস্থার সঞ্চার করেছেন। সোমবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব আলোচনা হয়েছে বলে দলটির কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন।
তবে ড. ইউনূসের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে কী কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বৈঠকে জানাননি এবং স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও জানতে চাননি। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, এর মাধ্যমে দেশে নির্বাচনের একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা যেন কোনোভাবে হাতছাড়া না হয়। এছাড়া বৈঠকে নেতারা ইশরাক হোসেনের চলমান আন্দোলন নিয়ে পক্ষে ও বিপক্ষে মত দেন। তবে বেশির ভাগ নেতা মনে করেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে ফলপ্রসূ বৈঠকের পর ইশরাক হোসেনের এই আন্দোলন থেকে সরে যাওয়া উচিত, আন্দোলন বন্ধ করা উচিত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য যুগান্তরকে বলেন, ‘ইশরাককে ইতোমধ্যে আন্দোলন করতে নিষেধ করা হয়েছে। দেখা যাক, কী হয়। তারা এই আন্দোলনের পক্ষে নন। এতে ইশরাকের যেমন ইমেজ ক্ষুণ্ন হচ্ছে, তেমনি বিএনপিরও ইমেজ নষ্ট হচ্ছে। বিএনপির লক্ষ্য এখন জাতীয় নির্বাচন।’
রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বৈঠক সূত্র জানায়, লন্ডন বৈঠক ছাড়াও ইশরাকের শপথ ইস্যু এবং আগামী নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়েও আলোচনা হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসাবে ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানো ইস্যুতে চলমান আন্দোলন নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনায় অধিকাংশ নেতা বলেন, নির্বাচন ইস্যুতে লন্ডনে গত শুক্রবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মধ্যে একটি ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট সংকট ও অনিশ্চয়তা কেটে যাওয়ার পাশাপাশি এক ধরনের স্বস্তিও ফিরে এসেছে। একই সঙ্গে নির্বাচন ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কিছুদিন ধরে চলা বিএনপির টানাপোড়েন সম্পর্কেরও অবসান ঘটেছে। এমন অবস্থায় ইশরাকের শপথ ইস্যুতে আন্দোলন চলতে থাকলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে পারে। তাছাড়া দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। তাই সব দিক বিবেচনায় আন্দোলন থেকে এখন ইশরাকের সরে যাওয়া উচিত। তবে বৈঠকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘এটা (শপথ ইস্যুতে আন্দোলন) বিএনপির কোনো সিদ্ধান্ত নয়। ইশরাক ঢাকাবাসীকে নিয়ে এটা করছে। বিএনপির মধ্যে এটা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
সূত্র জানায়, বৈঠকে বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতারা জানান, ড. ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকের পর সরকারের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব মিটে গেছে। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, এর মাধ্যমে দেশে নির্বাচনের একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেটা যেন কোনোভাবে হাতছাড়া না হয়। অত্যন্ত ফলপ্রসূ এবং পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে ঐতিহাসিক বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে, বহু কাঙ্ক্ষিত ওই বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা ও দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সফলভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
এ প্রসঙ্গে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘লন্ডন বৈঠককে আমরা এখনো ইতিবাচক মনে করছি। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া, সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড আরও ত্বরান্বিত করা, নির্বাচনের লক্ষ্যে সাংগঠনিক কাজকে এগিয়ে নেওয়া-এগুলোর ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।’
গত শুক্রবার লন্ডনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক হয়। বৈঠকের পর দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।