Image description

অভাবনীয় ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে ইরান। না স্বীকার করতে পারছে, না বিশ্বাস করতে পারছে ইসরায়েল। দূরপাল্লা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে মোসাদের একটি ভবন ধসিয়ে দিয়েছে ইরানের প্রতিরোধ বাহিনী। তেহরানের দাবি, ওই ভবন গোপন অভিযানের পরিকল্পনা প্রণয়নে ব্যবহার করা হতো। ইরানের তাসনিম নিউজ এজেন্সির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টানা পাঁচ দিন ধরে তেল আবিব যে অন্যায্য ও ঔদ্ধত্য আক্রমণ করছে, এরই জবাব হিসেবে তাদের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার ওপর প্রত্যাঘাত করা হয়েছে। ইসলামি বিপ্লবী বাহিনী দাবি করেছে, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা কেন্দ্রেও এ দিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। ইরানি হামলার আতঙ্কে বহু দেশ তাদের নাগরিকদের ইসরায়েলে না যাওয়ার এবং যারা সেখানে আছেন, তাদের দ্রুত ইসরায়েল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। জেরুজালেমে নিজেদের দূতাবাসের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র, এই সংঘাতে গোপনে যারা উসকানি ও সামরিক মদদ দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে ইরান।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির অনলাইনে সরাসরি প্রচারিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তেহরান থেকে থেমে থেমে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে তেল আবিব ও পশ্চিম জেরুজালেমে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এগুলোকে আকাশেই প্রতিহত করতে ব্যতিব্যস্ত ছিল। তাদের শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দর্প চূর্ণ করে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে কিছু স্থানে। ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গতকাল এসব হামলার পর অন্তত দেড়শ আহতকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। দমকল বাহিনী ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার অভিযান চালিয়েছে। ইরানি প্রতিরোধ হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ২৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। অন্যদিকে আকাশপথে হামলা চালিয়ে ৪৫২ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল,

এই অভিযোগ করেছে হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস ইন ইরান নামের একটি অলাভজনক সংস্থা। এদের মধ্যে ২২৪ জন বেসামরিক নাগরিক ও ১১৯ জন সামরিক বাহিনীর সদস্য। আরও ১১৯ জনকে চিহ্নিত করা যায়নি।

আল জাজিরার অনলাইনে সরাসরি প্রচারিত প্রতিবেদন অনুসারে, গতকাল ইসরায়েলি বাহিনী পরোক্ষভাবে মোসাদের ভবনে হামলার কথা স্বীকার করেছে। কারণ তারা জানিয়েছে, ইরানের একটি ক্ষেপণাস্ত্র তেল আবিবে এবং আরেকটি ১৬ কিলোমিটার দূরে হার্জলিয়ায় আঘাত হেনেছে। হার্জলিয়ায় একটি ‘সংবেদনশীল স্থাপনা’য় আঘাত হেনেছে ওই ক্ষেপণাস্ত্র। আল জাজিরা বলছে, সামরিক কিংবা কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বলতে এই ধরনের পরিভাষা ব্যবহার করে থাকে ইসরায়েল।

ইরানকে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হতে দিতে চায় না ইসরায়েল। তাদের ভয়, পাছে পারমাণবিক বোমায় তছনছ হয়ে যায় ইহুদি রাষ্ট্রটি। কিন্তু ইরান কোনো পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে না বলে দাবি করে তেহরান। ফলে ভিত্তিহীন অনুমানের ওপর ভর করে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে সার্বভৌম দেশের ওপর সামরিক আগ্রাসন শুরু করেছে ইসরায়েল। এরই মধ্যে তারা ইরানের সেনাপ্রধান এবং বিপ্লবী বাহিনীর প্রধানসহ শীর্ষ জেনারেলদের হত্যা করেছে। এই সংঘাত শুরুর পর সেনাপ্রধান নিহত হলে যিনি এই পদে দায়িত্ব নিয়েছিলেন, সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত আলী শাদমানিকেও গতকাল হত্যা করেছে ইসরায়েল। এমনকি তারা খামেনিকেও হত্যা করার কথা ভাবছে। যুদ্ধবাদী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যা করা হলে সংঘাতের শেষ হবে ও পারমাণবিক যুদ্ধ এড়ানো যাবে।’ আর তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, ‘খামেনির পরিণতি হবে ইরাকের পতিত স্বৈরশাসক সাদ্দাম হোসেনের মতো।’

ইরানকে নানাভাবে কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে পারমাণবিক প্রকল্প থেকে সরে আসার জন্য চাপ দিচ্ছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তো এখন সরাসরি বলছেন, যুদ্ধবিরতির সমঝোতা নয়, ‘পরিসমাপ্তি’ দেখতে চান তিনি। কিন্তু তেহরান ভাঙতে রাজি, মচকাতে নয়। যেমন বিবিসির প্রতিবেদক তোহিদ আসাদি একজন উচ্চপদস্থ ইরানি নিরাপত্তা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন। ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ইরান প্রতিশোধমূলক হামলা বন্ধ করতে রাজি নয়। তবে তিনি বলেছেন, যদি ইরানের সীমারেখাগুলো ইসরায়েল মেনে চলে এবং সংযত হয়ে সেগুলো বিবেচনায় নেয়, তাহলে ইরান আলোচনার একটি পথ খুলে দিতে প্রস্তুত। ওই কর্মকর্তার দাবি, ‘ইসরায়েলের বর্তমান কৌশল তাদের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।’ তিনি হুশিয়ার করেছেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে হস্তক্ষেপ করে, তাহলে এর ফলে পুরো অঞ্চল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।’