Image description

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে পতন ঘটে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের। একই সাথে পালিয়ে যায় ফ্যাসিস্টের দোসর আওয়ামী লীগের অধিকাংশ শীর্ষস্থানীয় নেতাকর্মীরা। বর্তমানে তারা বিদেশে অবস্থান করে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। ঝটিকা মিছিল, ককটেল বিস্ফোরণসহ বিভিন্ন সহিংস কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে রাজধানীসহ সারাদেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এই নিষিদ্ধ ঘোষিত দলটি।

গোয়েন্দা সংস্থার সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, জুলাইয়ের আন্দোলন-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগসহ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকার্য ব্যাহত করতে সচেষ্ট রয়েছে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

এরই ধারাবাহিকতায়, গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিল বের করে। এ সময় শাহবাগ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একজনকে গ্রেফতার করে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানেক্স ভবনের সামনে থেকে সাতটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করা হয়।

এর আগে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের সব রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সরকার। তবে এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আগামী জুলাই পর্যন্ত ধারাবাহিক কর্মসূচির পরিকল্পনা নিয়েছে দলটি। হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রামসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।

টার্গেটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ হল : রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্থাপনার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অন্যতম। বিশেষভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলকে কেন্দ্র করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই হলকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের সহিংসতা ঘটানো গেলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ড. ইউনূসের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা এবং বিচার ও সংস্কার কার্যক্রমে বিঘœ ঘটানোর পথ সুগম হবে।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছে এবং প্রয়োজনে জগন্নাথ হলসহ আশপাশের এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

ঢাবির বঙ্গবন্ধু হলের পকেট গেটে বিস্ফোরণ, আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা : গতকাল সোমবার ভোরে রাজধানীর শাহবাগ ও কাটাবনের মধ্যবর্তী এলাকায় নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের একটি ঝটিকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল চলাকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের পকেট গেটের সামনে পরপর দুটি ককটেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দে এলাকা কেঁপে ওঠে। এতে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, আনুমানিক ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে মিছিলটি শাহবাগ মোড় থেকে শুরু হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল হয়ে কাটাবন মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে “শেখ হাসিনা ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই” এবং “শেখ হাসিনা নিজের দেশে, আসবে ফিরে বীরের বেশে” এমন স্লোগান দেয় নেতাকর্মীরা। তবে এখনো মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিলায়েত শেখ জানান, “ভোরের নীরবতা ভেঙে হঠাৎ ‘জয় বাংলা’ এবং ‘শেখ হাসিনা’-র স্লোগানে ঘুম ভেঙে যায়। বঙ্গবন্ধু হলের পকেট গেটে পৌঁছে মিছিলটি শেষ হয়। পরবর্তীতে পনেরো-বিশজনের একটি দলকে পরিবাগ মোড়ে দেখা যায়, যারা পরে ছড়িয়ে পড়ে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই দুটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। শব্দ এতটা বিকট ছিল যে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে।” তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা কী এমন দৃশ্য দেখার জন্য আন্দোলন করেছি? নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও অভিযুক্ত সন্ত্রাসীরা আবারো প্রকাশ্যে সন্ত্রাস চালাচ্ছে।”

শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খালিদ মনসুর বলেন, “ছাত্রলীগের ব্যানারে কাটাবন মোড়ে একটি ঝটিকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়, যা মাত্র ৩০ সেকেন্ড স্থায়ী ছিল। আমরা ধাওয়া দিলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। ইতঃমধ্যে একজনকে গ্রেফতার করেছি। ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।”

ঢাবির কাজী মোতাহার হোসেন ভবন থেকে ৭টি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার : গতকাল সকাল ৯টার দিকে শাহবাগ থানার পুলিশ ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট কাজী মোতাহার হোসেন ভবনের সামনে থেকে সাতটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করে। সহকারী প্রক্টর জানান, “সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে খবর পাই। গিয়ে দেখি দুটি ওয়ানটাইম বক্সে মোট সাতটি ককটেল রাখা ছিল, একটিতে চারটি, অন্যটিতে তিনটি। আমরা শাহবাগ থানাকে জানালে তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেয়।”

কে বা কারা ককটেলগুলো সেখানে রেখেছে তা নিশ্চিত না হলেও তিনি জানান, মেডিক্যাল গেটটি সবসময় খোলা থাকে এবং সিসিটিভি না থাকায় কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে আজ থেকেই বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সহকারী প্রক্টর।