Image description
লন্ডন বৈঠক

লন্ডন বৈঠকে নির্বাচনের সময় নিয়ে সমঝোতার আভাস পাওয়ার পর দেশে নির্বাচনী আবহ তৈরি হয়েছে। নির্বাচনের সময় নিয়ে যে অনিশ্চয়তা ছিল তা কেটে গেছে এই বৈঠকের মাধ্যমে। বৈঠকের বার্তা পাওয়ার পর নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করছে দলগুলো। যদিও কিছু দল আগে থেকেই নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে। 

অন্যদিকে জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি দলীয় কাঠামো তৈরিতে ব্যস্ত থাকায় নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে তারা এখনই ভাবছে না। আপাতত সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে যাবে দলটি। একইসঙ্গে বিচার এবং সংস্কারের বিষয়টি সামনে রেখে কাজ চলবে বলে নেতারা জানিয়েছেন। 

শুক্রবার লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে ঐতিহাসিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে তারেক রহমান আগামী রমজানের আগে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব করেন। প্রধান উপদেষ্টা জানান, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে রমজানের আগের সপ্তাহেও নির্বাচন হতে পারে। 

লন্ডন থেকে এই বার্তা আসার পর বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল স্বাগত জানিয়েছে। ওই বৈঠককে ইতিবাচক হিসেবে বর্ণনা করেছে। জামায়াত এবং এনসিপি কিছুটা ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত বৈঠকের পর যৌথ ঘোষণা নিয়ে। তবে দল দু’টি বৈঠককে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। 

নির্বাচনে সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা না হলেও জামায়াতে ইসলামী প্রায় ৩০০ আসনে তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। ইতিমধ্যে তারা নির্বাচনী প্রচারণার কাজ শুরু করছেন। এ ছাড়া জাতীয় নাগরিক পার্টি ঈদের আগে থেকেই সারা দেশে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। এখন দলটি কমিটি গোছানোয় মনোনিবেশ করছে। নির্বাচন হলে তা অংশগ্রহণ করবে। এর আগে তারা জুলাই সনদ, সংস্কার ও বিচারকে প্রাধান্য দিচ্ছে। 

রাজনৈতিক দলসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি সব সময়ই থাকে। তবে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করবে দলটি। নাগরিক ঐক্য ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি নির্বাচনী প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে। এলডিপি’র নির্বাচনী প্রস্তুতি থাকলেও তারা সমঝোতার ভিত্তিতে বিএনপি’র সঙ্গে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইছে। গণফোরাম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল এবং গণঅধিকার পরিষদও দলগতভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভোটের আগে বিএনপি’র সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্য হলে সমঝোতার ভিত্তিতে প্রার্থী দেবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। এই দলের নির্বাচনী প্রস্তুতি সব সময়ই থাকে। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো প্রার্থী বাছাই শুরু হয়নি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে, এরপরে আমরা মনোনয়নপত্র নেয়ার জন্য আহ্বান জানাবো। আর রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক কাজই হচ্ছে নির্বাচনী প্রস্তুতি।  নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না মানবজমিনকে বলেন, নির্বাচন প্রস্তুতির কাজ আস্তে আস্তে শুরু হচ্ছে এবং কৌশল ঠিক করা হচ্ছে। বিএনপি’র সঙ্গে জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে মান্না বলেন, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রস্তাব করেছিলেন যে, জাতীয় সরকার গঠন করবেন। সবাই মিলে একসঙ্গে সরকার পরিচালনা করবো। এই কমিটমেন্টে এখনো তিনি আছেন। তবে এ বিষয়ে এখনো কথা বলা হয়নি। এখন আমরা নিজেদের মধ্যে কথা বলে সব ঠিক করবো।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক মানবজমিনকে বলেন, রাজনৈতিক দলের সব সময়ই একধরনের নির্বাচনী প্রস্তুতি থাকে। এখন আমরা সাংগঠনিক কাজে মনোযোগ দিয়েছি। গণসংযোগের কাজ শুরু করেছি। জোটগতভাবে না-কি সমঝোতা করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো, এ বিষয়ে বিএনপি‘র সঙ্গে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি, নির্বাচন এগিয়ে আসলে আলোচনা হবে।

গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, গণফোরাম একটি নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। আমাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি রয়েছে। গণফোরামের প্রত্যেক জেলা ইউনিটকে নির্বাচনী প্রস্তুতি কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসবে, আমরা প্রার্থী বাছাই নিয়ে তত কাজ করবো।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন মানবজমিনকে বলেন, অনেক দিন ধরেই আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রার্থী তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। জেলা কমিটিগুলোও ইতিমধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং করে চূড়ান্ত করবো। আর বিএনপি’র সঙ্গে আমরা যুগপৎ আন্দোলনে আছি, এখন জোটগতভাবে আমরা নির্বাচনে অংশ নেবো কিনা, এ বিষয়ে অফিসিয়ালি এখনো কোনো আলোচনা হয়নি।

গণ-অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান মানবজমিনকে বলেন, লন্ডনে বৈঠকে নির্বাচনের সিদ্ধান্তকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। আর আমাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি ভালো। দলগতভাবে আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। বিএনপি’র সঙ্গে জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হলে তখন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। 

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, বিএনপি’র সঙ্গে আমরা যুগপৎ আন্দোলনে ছিলাম, এখনো যুগপৎ আন্দোলনসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বিএনপি’র সঙ্গে সম্পৃক্ত আছি। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকের যে সফলতা, এজন্য আমরা আনন্দিত ও উৎসাহিত। আমরা এই বৈঠককে সাধুবাদ জানাই। আর আমাদের যারা সম্ভাব্য প্রার্থী আছে তারা কাজ করছেন। এরপরে যখন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তখন আমরা চেষ্টা করবো সমঝোতার ভিত্তিতে বিএনপি’র সঙ্গে মিলেই ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে। আর নির্বাচনের প্রস্তুতি তো আমাদের আছেই।  

অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এককভাবে এবং ইসলামী দলকে ঐক্যবদ্ধ করে জোটবদ্ধ উভয়ভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই প্রক্রিয়া এখনো চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছে সংগঠনটি। এখন দলগুলো নিজ নিজ দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবে। জোটবদ্ধ হওয়ার পরে সমঝোতার মাধ্যমে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবে। এদিকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নিজেদের ব্যানারে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংগঠনটির নেতারা অন্যান্য ইসলামী দল থেকে প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে লড়বেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, নির্বাচনী প্রস্তুতি আমাদের আছে। প্রত্যেক শাখাকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এখন নির্বাচনকেন্দ্রিক যে জোট গঠনের আলোচনা চলছে, এই জোটের সব দল নিজ নিজ দলের প্রার্থী ঘোষণা করবে। যখন ঐক্যবদ্ধ হবে তখন ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবে। 

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী মানবজমিনকে বলেন, হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে কেউ নির্বাচনে অংশ নেবে না। তবে হেফাজতের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেবে। তাদের সেই প্রস্তুতি রয়েছে। আর হেফাজতের কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাইলে তখন আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।