Image description

এক সপ্তাহ আগেও ছিল অনিশ্চিত জীবন। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ নিয়ে কারাগারে বসে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন। গণ-অভ্যুত্থানের পট পরিবর্তনের ফলে আদালতের এক রায়ে অনিশ্চিত জীবনে ফিরে আসে ছন্দ। প্রায় ১৩ বছর কারাবন্দি থাকার পর ২৮ মে নতুন সূর্যোদয়ে মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস নেন জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম। কারাগারে থাকলেও তিনি বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য ছিলেন। মুক্ত হয়ে সক্রিয় হচ্ছেন রাজনীতিতে। যাতায়াত করছেন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। সর্বশেষ শূরা সদস্যের বৈঠকে অংশ নেন। আগামী সপ্তাহে বড় পদে আসতে পারেন তিনি। এ নিয়ে দলের নীতিনির্ধারক ও রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে। এছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন। সবকিছু ঠিক থাকলে রংপুর-২ আসন থেকে তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন। জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য। 

দলটির প্রচার বিভাগের একজন সদস্য যুগান্তরকে জানান, আজহারুল ইসলাম বিশ্রামে আছেন। মাঝেমধ্যে দু-একটি সাংগঠনিক কর্মসূচিতে দলীয় অফিসে আসেন। আলোচনায় অংশ নেন। কারামুক্ত হওয়ার পর চিকিৎসকরা বলছেন, তাকে পুরোপুরিভাবে এখন বিশ্রামে থাকতে হবে। তার স্ত্রী অনেক আগেই মারা গেছেন। সন্তানরাও দেশের বাইরে থাকেন। ছেলে দেশে এলেও ঈদের পর ইংল্যান্ড চলে যাবেন। তখন হয়তো আজহারুল রাজনীতিতে পুরোপুরি সক্রিয় হবেন। সর্বশেষ সোমবার শূরা সসদস্যদের বৈঠকে অংশ নেন আজহারুল ইসলাম। 

জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের রোববার রাতে যুগান্তরকে বলেন, এটিএম আজহারুল ইসলাম দলের সিনিয়র নেতা। সদ্য কারামুক্তি পেয়েছেন। তাকে নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে যে গুঞ্জন ছড়ানো হচ্ছে, সেটি সঠিক নয়। বর্তমানে তিনি চিকিৎসকদের পরামর্শে বিশ্রাম নিচ্ছেন। সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। দলীয় পদ-পদবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য হিসাবে আছেন এখন পর্যন্ত। নতুন করে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে বসবেন। আগামী সপ্তাহে হয়তো নতুন পদে তার নাম ঘোষণা আসতে পারে। 

সাংগঠনিক পদ প্রসঙ্গে জামায়াতের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, এটিএম আজহারুল ইসলাম জামায়াতের অনেক সিনিয়র নেতা। তিনি দলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। দলীয় ফোরামের সিদ্ধান্তে তিনি বড় পদে আসবেন। দু-একদিনের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। আগামী সপ্তাহে (ঈদের পর) দলীয় নতুন পদ ঘোষণা করা হবে। 

সূত্র জানায়, আজহারুল ইসলাম নায়েবে আমির হচ্ছেন। গঠনতন্ত্র অনুসারে আগামী মেয়াদে নির্বাচনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাকে আসতে হবে। 

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ২২ আগস্ট রাজধানীর বড় মগবাজারের বাসা থেকে গ্রেফতার হন আজহারুল। ওই সময় তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্বে ছিলেন। আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ গ্রেফতার হওয়ার পর একবার ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্বও তিনি পালন করেন। ২০১২ সালের পর থেকে মুক্তি পাওয়ার আগ পর্যন্ত কারাগারেই ছিলেন তিনি। ১২ বছর ৮ মাস ৬ দিন কারাবন্দি থাকার পর ২৮ মে তিনি মুক্তি পান।

এদিকে কারামুক্ত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুঞ্জন ছড়ায় সদ্য কারামুক্ত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম জামায়াতের আমির হচ্ছেন। তবে দলের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা বলছেন, বিষয়টি সত্য নয়। জামায়াত পুরোপুরি দলের গঠনতন্ত্র মেনেই পরিচালিত হয়ে আসছে। গঠনতন্ত্র অনুসারে এখনই আজহারুল ইসলাম আমির বা দলীয় প্রধান হওয়ার সুযোগ নেই। বর্তমান আমিরের মেয়াদ শেষ হলে নতুন করে আমির পদে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হবে। 

জামায়াতের নেতারা বলেন, বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমান তিন বছর (২০২৩, ২০২৪ ও ২০২৫) মেয়াদে দলের রুকনদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে আমির নির্বাচিত হন। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তার মেয়াদ রয়েছে। এ বছরের শেষের দিকে আবার জামায়াতের আমির পদে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হবে।

তবে জামায়াতের গঠনতন্ত্রে নায়েবে আমিরের সংখ্যা নির্দিষ্ট করা নেই। সেখানে প্রয়োজনে সংখ্যা কমবেশি হতে পারে। বর্তমানে জামায়াতের নায়েবে আমির পদে আছেন তিনজন-অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও আ ন ম শামছুল ইসলাম। পদের সংখ্যা নির্দিষ্ট না থাকায় আজহারুল ইসলামকে দলের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বলে মনে করছেন দলটির নেতারা। 

জামায়াতের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্যদের শপথ নিতে হয়। এটিএম আজহার কারাগারে থাকায় তার শপথ হয়নি। এখন তাকে শপথ নিতে হবে। এরপর তাকে জামায়াতের আমির বিবেচনামতো দলীয় কোনো পদে যুক্ত করতে পারেন।