
বগুড়ার শেরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে ককটেল হামলা ও মারধরের মামলার এজাহারভুক্ত আসামি এক আওয়ামী লীগ নেতাকে আটকের পর ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের এক উপপরিদর্শকের (এসআই) বিরুদ্ধে।
সোমবার (২ জুন) বিকেলে উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের ছোনকা বাজার এলাকা থেকে আওয়ামী লীগ নেতা আবু জাফর মজনুকে আটক করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, মোটা অংকের সুবিধা নিয়ে ঘণ্টাব্যাপী দেনদরবারের পর তাকে ছেড়ে দেন এসআই তোফাজ্জল হোসেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই দুপুরে শহরের ধুনট রোড বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে ককটেল হামলা ও শিক্ষার্থীদের বেধড়ক মারধর করা হয়। এ ঘটনায় গত ২ নভেম্বর উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের খন্দকারটোলা গ্রামের বাসিন্দা রিফাত সরকার বাদী হয়ে থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি মামলা করেন। মামলায় ১৪৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় অনেককে আসামি করা হয়।
ওই মামলার অন্যতম আসামি বিশালপুর ইউনিয়নের গোয়াল বিশ্ব গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা আবু জাফর মজনু। তিনি সোমবার বিকেলে ছোনকা বাজার এলাকায় ঘোরাঘুরি করছিলেন। গোপনে এমন সংবাদ পেয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শেরপুর থানার এসআই তোফাজ্জল হোসেন সেখানে উপস্থিত হন। একপর্যায়ে ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে হাতেনাতে আটক করেন তিনি। কিন্তু তাকে আদালতে না পাঠিয়ে ছেড়ে দেন।
অভিযোগ রয়েছে, আটকের পর থেকেই ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে ছাড়তে তাদের স্বজনদের সঙ্গে দেনদরবার শুরু করেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা। পরে মোটা অংকের সুবিধা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশালপুর ইউনিয়ন বিএনপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক সিরাজ উদ্দিন বলেন, বিগত ১৬ বছর বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আবু জাফর মজনু। পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় জড়িয়ে দলীয় নেতাকর্মীকে হয়রানি করেছেন। এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে ককটেল হামলায় সরাসরি অংশ নেন। তাই তার বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। অথচ পুলিশ তাকে আটক করলেও ছেড়ে দিয়েছে বলে শুনেছি। যা খুবই কষ্টের ও দুঃখজনক।
উপজেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সংগঠক রাশেদ সাহাদাত অভিযোগ করে বলেন, এসআই তোফাজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে এর আগেও এমন অভিযোগ শুনেছি। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কেন এখনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি সেটি আমাদের বোধগম্য নয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, মামলার আসামি ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে আটক করার ঘটনাটি সঠিক। কিন্তু হাইকোর্ট থেকে জামিন নেওয়ার কারণে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে টাকা-পয়সা নেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন।
তবে আটক হওয়া আওয়ামী লীগ নেতার জামিনের কাগজপত্র ও মেয়াদ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি পুলিশের ওই কর্মকর্তা।
শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈনুদ্দিন বলেন, ঘটনাটি আমার জানা নেই। তবে এমনটি হয়ে থাকলে তা খুবই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।