
বিএনপির সঙ্গে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আসন সমঝোতা (ভাগাভাগি) চূড়ান্ত না হওয়ায় নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। সংসদের প্রধান বিরোধীদল হতে আসন সমঝোতার জন্য জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি দেশের বৃহত্তম দল বিএনপির সঙ্গে পর্দার অন্তরালে আলোচনাও চালিয়েছে বলে দাবি করেছেন এক সময়ের জামায়াত নেতা ও বর্তমানে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘ঠিকানা’র টকশোতে এমন দাবি করেন তিনি। তবে এবি পার্টির চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্যের পর এনসিপি ও জামায়াত নেতারা আসন সমঝোতার কথা অসত্য বলে দাবি করেছেন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার এনসিপিকে রাজনৈতিক ফায়দা দিতে চাচ্ছে। এনসিপির কারণে সরার নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণায় বিলম্ব করছে।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মঞ্জু দাবি করেন, রাজনীতির বাইরে কিছু রাজনীতি আছে। বিএনপি কেন নির্বাচনের ব্যাপারে সিরিয়াসলি ফোকাসড? যেহেতু বিএনপি জানে নির্বাচন হলে ক্ষমতায় আসতে পারে। এটা হচ্ছে মূল কথা। আমরা যতই তাত্ত্বিক কথা বলি না কেন, এখানে বাকিদলগুলো, যাদের সাথে বিএনপির ভালো সম্পর্ক তারাও নির্বাচন চায়। আর যারা মনে করে নির্বাচন করলে আমি ভালো করতে পারব না, তারা নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায়। তিনি বলেন, এনসিপি কিন্তু পর্দার অন্তরালে বিএনপির সাথে একটা সিট নেগোসিয়েশনের আলোচনা করেছে। সে ৭০ সিট, ৫০ সিট চেয়েছে... কালকে একটা পর্দার অন্তরালে আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়ে গেল, সিট ভাগাভাগি হয়ে গেল, তাহলে দেখবেন সেপ্টেম্বরেই ইলেকশনের জন্য সবাই একমত হয়ে যাবে। এটা অফ দ্য রেকর্ড সবাই জানে। জামায়াত একটা শক্তিশালী দল। জামায়াতেরও ইলেকশনের ব্যাপারে পিছুটান আছে। ইলেকশন বিলম্বিত হলে এতে তাদের অসুবিধা নেই। বিএনপি যদি কালকে জামায়াতকে বলে আপনাদের ৫০টি সিট ছেড়ে দেব, জামায়াত অক্টোবরে ইলেকশন হলেও রাজি হবে।
তবে মজিবুর রহমান মঞ্জুর এমন দাবি সরাসরি অস্বীকার না করে গত শনিবার বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আমরা রোডম্যাপ চাচ্ছি। রোডম্যাপ ঘোষণার দাবির মধ্যেই আমরা আছি। আগে রোডম্যাপ ঘোষণা করা হোক, তারপর সিট নেগোসিয়েশনের ব্যাপার। এগুলো এখনও ম্যাচিউর্ড পর্যায়ে যায়নি।
তবে আসন সমঝোতার দাবি অস্বীকার করে এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক খান মোহাম্মদ মুরসালিন বলেন, বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতার প্রশ্নই আসে না। আমরা এখন সংগঠনকে গোছাতে কাজ করছি। সারা দেশে আমাদের সংগঠন গোছানোর কর্মসূচি চলছে। আমাদের দাবি আগে জুলাই ঘোষণাপত্র। এরপর নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হলেও বিচার, সংস্কারেরও সুস্পষ্ট ঘোষণা থাকবে হবে। এ বিষয়ে জামায়াতের ঢাকা মহানগরের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেন, জামায়াতের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত একজন দলছুট ব্যক্তি হতাশা থেকে অনেক কিছুই দাবি করতে পারেন। আমরা ব্যক্তির সমালোচনা করছি না। তবে, দল ছোট বা বড় যেমনই হোক এর প্রধানের কাছ থেকে জনগণ আরও ম্যাচিউর্ড বক্তব্য প্রত্যাশা করে।
এনসিপি’র দক্ষিণাঞ্চলীয় সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, নির্বাচনে বিএনপি বা অন্য কোনো দলের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির কোনো সমঝোতা হয়নি। ৩১ মে ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘সম্প্রতি আমরা লক্ষ্য করেছি, একটি দলের প্রধান এক অনলাইন টকশোতে মন্তব্য করেছেন, ‘এনসিপি কিন্তু পর্দার অন্তরালে বিএনপির সাথে সিট নেগোসিয়েশন করেছে। আমরা হাইপোথেটিকালি ধরে নিলাম, পর্দার অন্তরালে সিট নেগোসিয়েশন হয়ে গেল, একটা আন্ডারস্ট্যাডিং হয়ে গেল, তাহলে দেখবেন, ডিসেম্বর না, সবাই সেপ্টেম্বরে নির্বাচনের ব্যাপারে রাজি হয়ে যাবে।’ আমরা উল্লেখিত রাজনীতিবিদের প্রতি আমাদের সম্মান ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে বলতে চাই, বিএনপি বা অন্য কোনো দলের সাথে আসন ভাগাভাগির সমঝোতার দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, এনসিপির দুর্নীতির খবরে দলটি বিপাকে পড়ে গেছে। তাদের নিজেদের দলেরও তেমন শক্তিশালী প্রার্থী নেই। এজন্য হয়তো বা যারা বিএনপির মনোনয়ন পাবে না, এমন লোকদের প্রার্থী করে বিরোধী দল হতে চাইবে। তবে নির্বাচন হলে তাদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম। বিএনপি ক্ষমতায় চলে আসবে। অ্যাবসোলিউট মেজরিটি পাবে। এজন্য হয়তো বা সমঝোতায় বিরোধী দল হতে চাইবে জামায়াত-এনসিপি। রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহের উর রহমান বলেন, আমি ‘ঠিকানা’র ওই টকশোতে অংশ নিয়েছি। এবি পার্টির চেয়ারম্যান যে তথ্য দিয়েছেন তা আগেও বাতাসে ভেসে বেড়িয়েছে। তবে এবার দায়িত্বশীল নেতার মুখে শুনলাম।
উল্লেখ্য, ২০০৯, ২০১৪, ২০২৪, ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে আসন ভাগাভাগি হয়েছিল। আর ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে নির্বাচনের আগেই চূড়ান্ত করা হয়েছিল কোন্ দল কয়টি আসন পাবে চূড়ান্ত করা হয়েছিল।