Image description

চট্টগ্রাম নগরের দক্ষিণ খুলশীতে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষ হয়ে ভবন দখল করতে দেখা গেছে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা। দখলকারীদের হাতে অস্ত্র ছিল। তবে বাড়ির মালিক জাতীয় জরুরি সহায়তা সেবা ৯৯৯-এ ফোন করার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে তারা সরে যায়। গত রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ খুলশীর ১ নম্বর সড়কের ‘সাইফ ভ্যালি’ নামের একটি ভবনে এ ঘটনা ঘটেছে। 

জানা গেছে, পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়ার ভাই বিদ্যুৎ বড়ুয়ার পক্ষ হয়ে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মী ভবনটির ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, খুলশী থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক ‘ফার্নিচার’ শাহ আলমের নেতৃত্বে অন্তত ৪০ জনের একটি দল ওই ভবনে হানা দেয়। এদের মধ্যে ছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাবেদ শাফায়াত, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ফয়সাল ইসলাম জিয়া এবং পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি রানা। এ সময় বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী অস্ত্র বহন করছিলের বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও আধিপত্য বিস্তারের বিভিন্ন ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে ‘ফার্নিচার’ শাহ আলমকে স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে সম্প্রতি বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে তিনি দলের প্রভাব দেখিয়ে এলাকায় এখনও ভূমি দখলসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে যাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গত ২৯ ডিসেম্বর ভবন দখলের সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ ফারুক চৌধুরীও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগ দেন। তিনি বিদ্যুৎ বড়ুয়ার পিএস হিসেবে পরিচিত। বিদ্যুৎ বড়ুয়ার পক্ষে বিভিন্ন জনের বিরুদ্ধে মামলার বাদিও তিনি। তার বাড়ি ফটিকছড়ি পৌরসভায় ধুরুংয়ে হলেও তিনি থাকেন নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী এলাকার পশ্চিম শহীদ নগরে।

জানা গেছে, বিদ্যুৎ বড়ুয়ার পিএস ফারুক চৌধুরী পিকআপভর্তি মালামালসহ এক মহিলাকে নিয়ে ওই ভবনে যান। এ সময় তারা একটি ফ্ল্যাটে জোর ঢোকার চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে ‘ফার্নিচার’ শাহ আলমের নেতৃত্বে সেখানে এসে উপস্থিত হয় খুলশী থানা যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা। এ সময় ভূমিমালিক ও ভবনের নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে তারা প্রথমে হুমকি-ধমকি এবং একপর্যায়ে ধস্তাধস্তি শুরু করেন। যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা এ সময় ভবনের মালিককে হুমকি দেয়, এই মহিলাকে এখানে থাকবে। সে ভাড়া বিদ্যুৎ বড়ুয়া থেকে ভাড়া নিয়েছে। ভবনমালিক এ সময় জাতীয় জরুরি সহায়তা সেবা ৯৯৯-এ ফোন করার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা সরে যায়।

জানা গেছে, ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া ও তার ভাই বিদ্যুৎ বড়ুয়া দুজনেই ভারতে পালিয়ে যান। পরে বিপ্লব বড়ুয়া সেখান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং বিদ্যুৎ বড়ুয়া লন্ডনে চলে যান বলে জানা গেছে। জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনের ঘটনায় বিপ্লব বড়ুয়া ও তার ভাই বিদ্যুৎ বড়ুয়ার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বড় ভাই বিপ্লব বড়ুয়ার প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যুৎ বড়ুয়া চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ খুলশী এলাকার একটি ফ্ল্যাট জোর করে দখলে রাখেন বলে অভিযোগ ওঠে। 

জানা গেছে, দক্ষিণ খুলশী ১ নম্বর রোডে ভূমিমালিক কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুদ্দিন সৈয়দ ২০১৩ সালে ভবন নির্মাণের জন্য নিফকো প্রপার্টিজ নামের একটি ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেন। নিফকো প্রপার্টিজের মালিক এইচএম জামাল উদ্দিন বিদ্যুৎ বড়ুয়ার ব্যবসায়িক অংশীদার এবং রাউজান বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক। পরে ডেভেলপার হিসেবে এইচএম জামাল তার অংশের ছয়টি ফ্ল্যাটের পাঁচটিই বিক্রি করে দেন। কিন্তু ভূমিমালিকের অংশের ছয়টি ফ্ল্যাটের কাজ অসমাপ্ত রেখে দেন। পরে ডেভেলপারের অংশে পড়া একটি খালি ফ্ল্যাটে ভূমিমালিক তালা লাগিয়ে দেন। এ অবস্থায় সেই খালি ফ্ল্যাটের দখল নিতে ডেভেলপার জামাল উদ্দিন তার ব্যবসায়িক অংশীদার বিদ্যুৎ বড়ুয়ার সঙ্গে একটি ‘চুক্তি’ করেন। ২০২১ সালে সেই ‘চুক্তি’র পরপরই তালা ভেঙে বিদ্যুৎ সেই ফ্ল্যাটের দখল নেন। ওই ফ্ল্যাটে তার বান্ধবী হিসেবে পরিচিত শারমিন আক্তার নামের এক নারীকে রাখা হয়। বিদ্যুৎ বড়ুয়াসহ আরও বিভিন্ন লোকের সেখানে আসা-যাওয়া ছিল। শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার কিছুদিন আগে স্ত্রী অগ্নি বড়ুয়া বিষয়টি জানতে পারলে বিদ্যুৎ বড়ুয়া ফ্ল্যাটটি থেকে ওই মেয়েকে অন্যত্র সরিয়ে নেন। পরে তিনি আরেকটি পরিবারকে সেখানে তুলে দেন।