Image description

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘অঙ্গীকার’ দিয়ে রাজনৈতিক দল মনোনীত প্রার্থী কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দিতা করতে হবে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা-২০২৫-এর খসড়া প্রস্তাবে এমন বিধান রেখে সংস্কার আনছে।

প্রস্তাবটি চূড়ান্ত করার জন্য কমিশন সভার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসিরউদ্দীন সম্মতি দিলে শিগগিরই এ-সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হবে। ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার আমার দেশকে বলেন, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা কমিশন সভায় আলোচনার পর চূড়ান্ত হবে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যা যা প্রয়োজন, সবই এতে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আলোচনার পর অনেক কিছু সংযোজন-বিয়োজন হতে পারে। এমনকি কমিশন সভাটি কবে হবে, এখন পর্যন্ত তার জানা নেই বলে জানান তিনি।

খসড়া প্রস্তাবে সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সংজ্ঞায় প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী, টিফ হুইফ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী বা তাদের সমমর্যাদার কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য ও সিটি মেয়ররা বিদ্যমান আচরণবিধিতে যুক্ত আছেন। তবে অন্তর্বর্তী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যসহ সমপর্যায়ের ব্যক্তিগণের শব্দাবলি নতুন যুক্ত করে খসড়া প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে।

নির্বাচনি প্রচারণায় পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়, এ ধরনের কাপড়, চট বা অন্য কোনো উপাদানে তৈরি পোস্টারের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হচ্ছে কাগজ, রেক্সিন, পলিথিন বা প্লাস্টিকের তৈরি পোস্টারের ব্যবহার।

চলাচলে বিঘ্ন ঘটে এমন কোনো সড়কে জনসভা কিংবা পথসভা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। প্রস্তাবে ভোটার স্লিপ ১২/৮ সেন্টিমিটারের করার কথা বলা হয়েছে। এই স্লিপে প্রার্থীর নাম, প্রতীক ও ভোট প্রার্থনা- এ ধরনের কিছু রাখা যাবে না বলে প্রস্তাব করা হয়েছে।

রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় সর্বোচ্চ পাঁচজন উপস্থিত থাকতে পারবেন। এর বেশি হলে আচরণবিধি লঙ্ঘনে প্রার্থিতা বাতিল হতে পারে। আবার প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল ও প্রত্যাহারের সময় কেউ বাধা দিতে পারবে নাÑ এটা যুক্ত করা হয়েছে। নির্বাচনি প্রচারণায় কোনো গেট বা তোরণ নির্মাণ কিংবা চলাচলের পথে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। নির্বাচনি প্রচারকালে ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করে বক্তব্য প্রদান বা কোনো ধরনের তিক্ত বা উসকানিমূলক বা মানহানিকর কিংবা লিঙ্গ, সম্প্রদায়িকতা বা ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে, এমন বক্তব্য পরিহার করতে হবে।

ডিজিটাল বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্বাচনি প্রচারণার সুযোগ রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত খসড়ায়। তবে শর্ত জুড়ে দিয়ে বলা হয়েছে, প্রার্থী বা তার নির্বাচনি এজেন্ট বা উক্ত ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নাম, অ্যাকাউন্ট আইডি, ই-মেইল আইডিসহ অন্য শনাক্তকরণ তথ্যাদি প্রচার-প্রচারণার আগে রিটার্নিং অফিসারকে আগেভাগে জানাতে হবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী নির্বাচনি প্রচারকার্যে ব্যবহৃত মাইক বা শব্দবর্ধনকারী যন্ত্রের শব্দের মানমাত্রা হবে সর্বোচ্চ ৬০ ডেসিবল। কোনো প্রার্থীর নির্বাচনি এলাকায় একত্রে তিনটির বেশি মাইক্রোফোন বা লাউড স্পিকার ব্যবহার করা যাবে না। তফসিল ঘোষণার পর কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাদের পক্ষে সরকারি প্রচারযন্ত্রের ব্যবহার, সরকারি কর্মকর্তাকে ব্যবহার বা সরকারি যানবাহন বা রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ বা ব্যবহার পুরো নিষিদ্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রার্থী পরিচিতি, নির্বাচনি ইশতেহার, ঘোষণা পাঠ এবং আচরণবিধি প্রতিপালনের ঘোষণাসংক্রান্ত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রতীক বরাদ্দের পর পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচনি প্রচারণার উদ্দেশ্যে রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার একই মঞ্চে সব প্রার্থীর উপস্থিতিতে তাদের নির্বাচনি ইশতেহার, ঘোষণাপত্র এবং আচরণবিধি প্রতিপালনের ঘোষণা প্রদানের ব্যবস্থা করবেন। প্রার্থীরা অংশ নিতে পারবেন টেলিভিশন চ্যানেলে আয়োজিত সংলাপে। তবে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য নিষিদ্ধ থাকবে।

এ ছাড়া প্রার্থীদের ব্যয় সংকোচনের জন্য এক উপজেলাবিশিষ্ট নির্বাচনি আসনকে বিবেচনায় নিয়ে ইসির স্বীয় তত্ত্বাবধানে রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও কমিশনের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নির্বাচনি প্রচারের ব্যবস্থা করবেন। পাশাপাশি প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচনি ইশতেহার ও ঘোষণাপত্র পুস্তিকা আকারে প্রকাশ এবং প্রার্থীদের মধ্যে বিলি করবেন।

কমিশনের প্রার্থিতা বাতিলসংক্রান্ত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এ বিধিমালার অন্যান্য বিধানে যাই থাকুক, যদি কোনো উৎস হতে প্রাপ্ত রেকর্ড কিংবা লিখিত রিপোর্ট থেকে কমিশনের কাছে প্রতীয়মান হয়, প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থী বা তার নির্বাচনি এজেন্ট এ বিধান লঙ্ঘন করেন বা চেষ্টা করেন, তাহলে তিনি নির্বাচিত হওয়ায় অযোগ্য হবেন এবং কমিশন এ অপরাধে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করতে পারবে।

খসড়া প্রস্তাবের ২৯ নম্বর ধারায় রাজনৈতিক দলের প্রদত্ত প্রত্যয়নপত্রে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলসমূহ এ আচরণবিধির সব বিধান মেনে চলবে এবং এই মর্মে একটি অঙ্গীকারনামা নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় পেশ করবেন।

প্রস্তাবের ৩০ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি প্রার্থী হিসেবে ঘোষিত হলে তাকে তফসিল-১-এ উল্লিখিত নমুনা অনুযায়ী এই মর্মে অঙ্গীকার করতে হবেÑ তিনি এই বিধিমালার সব বিধান মেনে চলবেন এবং যদি তার বা তার কোনো সহযোগীর দ্বারা এই বিধিমালার কোনো বিধান লঙ্ঘন হয়, তাহলে তিনি আইন বা বিধিমালার বিধান অনুযায়ী শাস্তি মেনে নিতে বাধ্য থাকবেন।