
সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদের ‘সুন্দর মহল’ নামের পৈতৃক বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ওয়ালিদ আহমেদ অলিকে শোকজ করা হয়েছে। তিনি ময়মনসিংহ মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব।
শনিবার (১৭ মে) সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সদস্যসচিব আল নূর মোহাম্মদ আয়াস এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ওয়ালিদ আহমেদ অলির বিরুদ্ধে সংগঠন পরিপন্থি ও শৃঙ্খলাপরিপন্থি কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। বেগম রওশন এরশাদের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি সংগঠনের নজরে এসেছে এবং ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ কারণে শোকজ করা হয়েছে এবং আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাকে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখতে বদ্ধপরিকর।’
এর আগে গত ১৫ মে ময়মনসিংহ নগরীর গঙ্গাদাস গুহ রোডে বেগম রওশন এরশাদের ‘সুন্দর মহল’ নামক পৈতৃক বাড়িতে এ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হলে শুক্রবার দিবাগত রাত ৯টায় ওয়ালিদ আহমেদকে শোকজ পাঠানো হয়।
তবে অভিযোগ বিষয়ে জানতে ওয়ালিদ আহমেদ অলির ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এদিকে রওশন এরশাদের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহ মহানগর শাখার কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন কমিটির আহ্বায়ক অলিউল্লাহ ও সদস্যসচিব আল নূর মোহাম্মদ আয়াস।
এক বিবৃতিতে তারা দাবি করেন, ‘রওশন এরশাদের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহ মহানগর শাখার কেউ জড়িত না। তবে এ ঘটনায় মহানগর কমিটির কাউকে না জানিয়ে কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ওয়ালিদ আহমেদ অলির অংশগ্রহণের বিষয়ে আমরা অসন্তোষ প্রকাশ করছি। একই সঙ্গে কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে তাকে শোকজ করা হয়েছে এবং তিন কার্যদিবসের মধ্যে যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে না পারলে কেন বহিষ্কার করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।’

বিবৃতিতে রওশনের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে জড়িয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে নেতারা আরও বলেন, ‘আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী হিসেবে জুলাই আন্দোলনের স্পিরিট ধারণ করে দেশবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে কাজ করে যাচ্ছি। এ প্ল্যাটফর্ম যেন কারও ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর। আমরা বিশ্বাস করি, ব্যক্তির চাইতে সংগঠন বড়। বিগত দিনে জাতীয় পার্টি ও বেগম রওশন এরশাদের বিতর্কিত কাজের বিচার জনগণ করবে। রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে আমরা তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।’
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রওশন এরশাদের পৈতৃক বাড়িটিকে ‘দালাল মহল’ আখ্যায়িত করেন বৈষম্যবিরোধীদের একাংশ। সম্প্রতি ‘কুটুম বাড়ি’ নামে একটি রেস্তোরাঁর মালিক বজলুর রহমান ১২ বছরের জন্য রওশন এরশাদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে বাড়িটি ভাড়া নিয়ে স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু করেন। গত ২৩ এপ্রিল বাড়ির সামনে মানববন্ধন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের একটি অংশ। তারা বাড়িতে বাণিজ্যিক ভবন না করে জুলাই স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণের দাবি জানান। এ নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।