
আপোষহীন নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার রহমানের নেতৃত্বে গড়া দল বিএনপি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন গণমানুষের নেতা, নিজ হাতে জনগণের জন্য খাল খনন থেকে শুরু করে বরাবরই দাঁড়িয়েছেন সাধারণ মানুষের কাতারে। বেগম খালেদা জিয়াও জিয়াউর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে হয়েছেন আপোষহীন নেত্রী। বিগত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ আর হাসিনার স্বৈরাচারীতার রোষানলের ধাক্কা সবচেয়ে বেশি পড়েছে বেগম জিয়ার ওপর। জেলে রেখে স্লো পয়জনিং করে মারার চেষ্টা বিদেশে চিকিৎসা করতে না দেওয়ার মত নেক্কার কর্মকাণ্ডও ঘটিয়েছেন হাসিনা। এক ছেলেকে হারিয়েছেন আরেক ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও হাসিনা মামলা দিয়ে আসতে দেননি দেশে, শতশত বাঁধা বিপত্তির মুখেও আপোষহীন নেত্রী সদা সর্বদা রয়েছেন আমজনতার পাশে।
আর অন্যদিকে ঢাকার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিতর্কিত রায়ে মেয়র নির্বাচিত হওয়া ইশরাক হোসেনের এক শপথকে কেন্দ্র করে রাজধানীর হৃদস্পন্দন গুলিস্তানের মত জায়গায় নগর ভবনের সামনে চলছে জনদুর্ভোগ তৈরি করে আন্দোলন। বিএনপির মত একটি বড় দলের কি এই কর্মকাণ্ড মানায়? এমন প্রশ্ন তুলছেন নেটিজেন থেকে শুরু করে জনসাধারণ।
এদিকে গতকাল বুধবার (১৪ মে) ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিএনপির বৈদেশিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করা ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে রিটে।
বিএনপির প্রয়াত নেতা সাদেক হোসেন খোকার পুত্র ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে নগর ভবনের সামনে সড়ক অবরোধ করে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছে। এতে রাজধানীর নগর ভবন সংলগ্ন গুলিস্তান-বঙ্গবাজার গুরুত্বপূর্ণ সড়কের উভয়পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। জনসাধারণ পড়েছে সীমাহীন দুর্ভোগে। এমন অমানবিক কর্মকাণ্ডে নেটিজেনরা রীতিমতো ধুয়ে দিচ্ছেন বিএনপিসহ ইশরাক হোসেনকে। তাদের মতে, মেয়র হিসেবে ইসরাকের শপথ গ্রহণে দেরি হচ্ছে, সেই আন্দোলন কেন রাস্তায় করতে হবে? দেশের প্রশাসন আছে আইন আদালত আছে তাদের দ্বারস্থ না হয়ে বিএনপির কেন রাস্তায় নেমে জনদুর্ভোগ তৈরি করতে হবে?
সামিয়া শিমু নামের এক সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে দেখতাম গুলিস্তানে পার্টি অফিসের সামনে রাস্তা বন্ধ করে জনদুর্ভোগ তৈরি করে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ আর আন্দোলন করতে। এখন দেখছি বিএনপির মত একটি বড় রাজনৈতিক দলও ফ্যাসিস্ট হাসিনার দলকে অনুসরণ করছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ কি এটিই ছিলো?’ তাসনিম জারা নামের আরেকজন লিখেছেন, ‘বিএনপির কোন নেতার ইন্ধোনে এভাবে রাস্তা বন্ধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে? দেশে কি আইন আদালত নেই? মেয়রের শপথ গ্রহণে দেরি হচ্ছে তো ড. ইউনূস সাহেবের কাছে যান বা আদালতের দ্বারস্থ হোন। রাস্তায় কেন ভাই? সাধারণ পাবলিক কি দোষ করলো?’
নেটিজেনরা অনেকেই আবার বলছেন ইশরাক হোসেনের কি এমন যোগ্যতা আছে মেয়র হওয়ার? বাবা সাদেক হোসেন খোকা মেয়র ছিলেন বলে ছেলেরও সেই যোগ্যতা আছে এটি ভাবা হাস্যকর বলেও মন্তব্য করছেন অনেকে। মাহমুদ ফয়সাল নামের একজন ফেসবুকে এ বিষয়ে লিখেছেন, ‘হায়রে বাংলাদেশে রাজার ছেলে যোগ্যতা না থাকলেও এখানে রাজা। ইসরাকের কি এমন যোগ্যতা আছে মেয়র হওয়ার? সাদেক হোসেন খোকার পুত্র বলে তাকে মেয়র বানাতে হবে? এটি চরম হাস্যকর।’ মৌমিতা নামের একজন লিখেছেন, ‘রাস্তা বন্ধ করে নাটক চলছে, মনে হচ্ছে দেশটা তার বাবার। ইশরাকের কি অভিজ্ঞতা আছে এমন যে তাকে মেয়র বানাতে হবে? একটি অফিস সামলানোর যোগ্যতা যার নেই সে আবার সামলাবে রাজধানী ঢাকার মত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা? তারেক রহমান অনেক জ্ঞানী আর অভিজ্ঞ মানুষ, তিনিও নিশ্চয় চাননা একজন অদক্ষ আর অযোগ্য লোক ঢাকা দক্ষিণের মেয়রের দায়িত্ব নিক।’
শুধু নেট নাগরিকরাই নন বরং ইশরাক হোসেন আর বিএনপির আন্দোলনকারী এসব নেতাকর্মীদের রাস্তা বন্ধ করে জনদুর্ভোগ তৈরি করা কর্মকাণ্ডে ক্ষেপেছেন সাধারণ আমপাবলিকও। ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি হওয়া ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে প্রায় পৌনে ২ লাখ ভোটে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে গত ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ওই ফল বাতিল করে ইশরাক হোসেনকে বৈধ মেয়র ঘোষণা করেন। এরপর ২৭ এপ্রিল তাকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। তবে শপথ গ্রহণে দেরি হওয়ায় এখন জনদুর্ভোগ তৈরি করেই আন্দোলন করছেন ইশরাকের সমর্থকরা।