
কঠিন সময় গেছে। আওয়ামী ঝড়-ঝাপটায় কাবু ছিলেন। দেশে থাকা স্বজনরা বারবার বিপর্যস্ত হয়েছেন। বাড়িঘরও জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। ব্যবসায়, সম্পত্তিতেও এসেছে আঘাত। এরপরও টলেননি তারা। সুদূর যুক্তরাজ্য থেকে দেশের জন্য অবিরাম লড়াই করে গেছেন। দেশে আসার সুযোগ না হলেও ভার্চ্যুয়ালি লড়াইয়ে সিলেটের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করে রাখেন তারা। দেন সাহসও। দেশে থাকা বিএনপি নেতারা যখন ঘরবন্দি কিংবা পলাতক তখন তাদের দিকেই তাকিয়ে থাকতেন বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। এরা হলেন- যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সভাপতি এমএ মালিক ও সাধারণ সম্পাদক কওছর এম আহমদ। তাদের দৃশ্যমান লড়াইয়ে দেশের বিএনপি’র নেতাকর্মীদের কাছে তারা ‘হিরো’ ছিলেন। এই দুই নেতা এখন সিলেটে, নিজ এলাকায়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বলছেন; দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করবেন। দলের বাইরে গিয়ে কিছু করবেন না। তবে তারা আশাবাদী দল তাদের মূল্যায়ন করবে। সিলেট-৩ আসনের দক্ষিণ সুরমার তেতলি এলাকার বাসিন্দা আলহাজ এমএ মালিক। তিনি দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাও। দীর্ঘদিন ধরে তিনি যুক্তরাজ্য বিএনপি’র শীর্ষ পদের হাল ধরে আছেন। বিএনপি’র কঠিন মুহূর্তে দলের জন্য অবিরাম কাজ করেছেন। থেকেছেন লন্ডনে থাকা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছাকাছি। বিএনপি’র যখন কঠিন মুহূর্ত তখন তারা লন্ডনেও জনমত গঠনে ভূমিকা রাখেন। পাশাপাশি ইউরোপ জুড়েও বিএনপিকে সুসংগঠিত করতে ভূমিকা রাখেন। যুক্তরাজ্যে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ক্ষেপেছিলেন সিলেট-৩ আসনের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। প্রায় তিন বছর আগে তেতলীতে তার গ্রামের বাড়িতে কয়েক দফা ভাঙচুর চালায় তারা। এমনকি বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়। এমএ মালিকের পরিবারের সবাই প্রবাসে বসবাস করেন। বাড়িতে কেউ থাকেন না। কেয়ারটেকাররা ছিলেন। তাদের মারধর করে তাড়িয়ে দিয়ে বাড়িটিতে আগুন দেয়া হয়। ঘটনার বিচারও পাননি এমএম মালিক। ১৯ বছর ধরে দেশে আসতে পারেননি। এমনকি তার পরিবার-পরিজনও আসেননি। গণ-অভ্যুত্থানের পর মুক্ত পরিবেশে তিনি কয়েক মাস আগে দেশে ফিরেছিলেন। কিছুদিন ঢাকা ও সিলেটে কাটান। এরপর চলে যান যুক্তরাজ্যে। সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে গত সপ্তাহে তিনি দেশে ফিরেছেন। ঢাকা হয়ে সিলেট এসেছেন সোমবার।
বিমানবন্দরে সিলেট বিএনপি’র নেতাকর্মীরা তাকে বরণ করেন নেন। মঙ্গলবার দক্ষিণ সুরমার লালাবাজারে তিনি বিএনপি’র ৩১ দফা নিয়ে গণসংযোগ করেছেন। এমএ মালিক মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘দলের পক্ষে আমার এলাকায় কাজ করছি। ধানের শীষের পক্ষে কাজ করছি। দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করবো।’ তিনি বলেন- ‘আমি আশাবাদী দল আমাকে মূল্যায়ন করবে। বিগত ১৯ বছর লড়াই সংগ্রামের পর আমরা এখন একটা পর্যায়ে আছি। দেশের মানুষ গণতন্ত্রের তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে মুখিয়ে আছে।’ যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক কওছর এম আহমদের বাড়ি জগন্নাথপুরের পৌর শহরে। যুক্তরাজ্য বিএনপি’র একাধিকবারের সাধারণ সম্পাদক তিনি। কওছরকে ‘ভাগ্যবান’ রাজনীতিক বলা যেতে পারে। স্থানীয় বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন- সুনামগঞ্জ-৩ আসন (জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ) আসনে বিএনপি’র প্রার্থী বলতে যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক কওছর এম আহমদ। আর কোনো নেতা তেমন আলোচনায় নেই। ফলে তাকে ঘিরেই স্বপ্ন বুনছেন ওই আসনের বিএনপি’র নেতারা। বিগত নির্বাচনগুলোতেও আলোচনায় তিনি কওছর এম আহমদ। একযুগ তিনি আসতে পারেননি। সরকারের তরফ থেকে নানা চোখরাঙানি ছিল। দেশে থাকা তার সম্পদকে কুক্ষিগত করে রাখা হয়। এতে তিনি ও তার পরিবার ক্ষতির মুখে পড়েছিল। গণ-অভ্যুত্থানের পর এ নিয়ে তৃতীয় দফা দেশে এসেছেন যুক্তরাজ্য বিএনপি’র এ নেতা।
শেষবার তিনি বিএনপি’র চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেশে ফিরেন। এখন রয়েছেন নিজ এলাকায়। গতকাল বিকালেও তিনি কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। তার সব অনুষ্ঠানই এখন নির্বাচন কেন্দ্রিক। স্থানীয় বিএনপি’র নেতারা তার পক্ষে সবাই ঐক্যবদ্ধ। নেতাদের মতে; সুনামগঞ্জ-৩ আসনে নির্বাচনের আগে বিএনপিকে সুসংগঠিত করা এখন বড় কাজ। এই আসনটি গত ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগ জোরপূর্বক জবরদখল করে রেখেছিল। এর আগে বিএনপি’র শরিক দলের কাছে আসনটি ছাড় দেয়া হয়েছিল। এতে করে দল অনেকখানি দুর্বল হয়ে পড়েছিল। নেতাকর্মীদের মধ্যেও দূরত্ব তৈরি হয়। তবে যুক্তরাজ্যে থেকে কওছর নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে ধরে রাখেন। এবার দেশে এসে তিনি নিজ এলাকায়ই বেশি নজর দিচ্ছেন। ঢাকা কিংবা সিলেটের চেয়ে জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জে চষে বেড়াচ্ছেন। মানুষের কাছাকাছি গিয়ে সাড়াও পাচ্ছেন তিনি। গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘নির্বাচন করতে চাই। তবে দল চাইলে করবো। এলাকায় বেশি সময় দিচ্ছি। এখন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ৩১ দফার দাওয়াত জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে কাজ। সেটি করছি। একইসঙ্গে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে দলকে শক্তিশালী করছি।’