
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) এখন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আতঙ্ক বিরাজ করছে। দুদকের তদন্ত জালে কারা পড়তে যাচ্ছে-এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। কর্মকর্তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। গত রোবাবার এনবিআরের ছয় কর্মকর্তার পর গতকাল আরো পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরুর কথা জানিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠানটি।
এনবিআরের আরো কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর আদায়ের ক্ষেত্রে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান চলছে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে যাদের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত চলছে তাদের অধিকাংশই এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। দেড় মাস ধরে তারা এনবিআর সংস্কারের পাশাপাশি এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন। সে আন্দোলনের কারণে দুদক তদন্ত করছে কি না, এমন প্রশ্ন উঠেছে।
জানতে চাইলে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের মহাসচিব আমার দেশকে বলেন, দুদকের তদন্তের সঙ্গে আন্দোলনের অবশ্যই একটা সম্পর্ক রয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে, এটা আগে থেকেই নিশ্চয়ই হয়ে আসছিল। এখন কেন তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে? এনবিআরের আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল বিধায় তাদের হয়রানি করার জন্য দুদক তদন্তের কথা বলছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ ছাড়া দুদকের তদন্তের ভয়ে আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়নি বরং ব্যবসায়ীদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তা করা হয়েছে বলে জানান পরিষদের মহাসচিব।
অন্যদিকে এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমার দেশকে বলেন, এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আগে থেকেই দুদকের তদন্ত চলছিল। এর সঙ্গে আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আরো বলেন, এ আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন কিন্তু সৎ অফিসার হিসেবে পরিচিত তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের তদন্ত হচ্ছে না। সুতরাং আন্দোলন করার কারণে দুদক তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে-এটা ঠিক নয়।
এনবিআর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্তে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, দুদকের কার্যক্রমে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো হস্তক্ষেপ নেই। সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এনবিআরের পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কর আদায়ে ঘুস গ্রহণ, কর ফাঁকির সুযোগ দেওয়া ও হয়রানির অভিযোগে তদন্তের কথা জানিয়েছে দুদক। তারা হলেন এনবিআরের সদস্য লুৎফুল আজীম, ভ্যাটের বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) অতিরিক্ত কমিশনার আবদুর রশীদ মিয়া, কর গোয়েন্দা সেলের (সিআইসি) সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন, কর অঞ্চল-১৬-এর উপ-করকমিশনার মোহাম্মদ শিহাবুল ইসলাম ও এনবিআরের যুগ্ম কমিশনার তারেক হাসান।
গত রোববার ছয়জনের বিরুদ্ধে তদন্ত অনুসন্ধানের কথা জানায় দুদক। তারা হলেন আয়কর নীতি বিভাগের সদস্য একেএম বদিউল আলম; নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার; ঢাকা-৮ কর-অঞ্চলের অতিরিক্ত কমিশনার মির্জা আশিক রানা; ঢাকা কর অঞ্চল-১৬-এর অতিরিক্ত কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা; ঢাকা দক্ষিণ কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার সাধন কুমার কুণ্ডু এবং বিএসএস কর একাডেমির যুগ্ম কর কমিশনার মোহাম্মদ মোরশেদ উদ্দীন খান।
দায়িত্ব পালনকালে এসব কর্মকর্তা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে কর ও শুল্ক ফাঁকির সুযোগ করে দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছেন বলে দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এ ছাড়া রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর কর্মকর্তারা মোটা অঙ্কের ঘুসের বিনিময়ে কিছু করদাতাকে কর ফাঁকির সুযোগ করে দেওয়া, আবার নির্ধারিত পরিমাণ কর আদায় না করে ইচ্ছাকৃতভাবে কর কমিয়ে দিয়ে করদাতা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা উভয়ে লাভবান হওয়া, ঘুস না পেলে কর ফাঁকির মিথ্যা মামলা দিয়ে করদাতা ও প্রতিষ্ঠানের মালিকদের হয়রানি করাসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।