Image description

জুলাই বিপ্লবে গণহত্যায় জড়িত স্বৈরাচারী দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে এবার একাট্টা হয়েছে জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য ইসলামী ও সমমনা দলগুলো।

এ দাবি আদায়ে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে যমুনার সামনে শুরু হওয়া ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ব্যাপকভাবে অংশ নেন এসব দলের নেতাকর্মীরা। শুক্রবার বাদ জুমা যমুনার পাশে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। পরে শাহবাগ ব্লকেডেও অংশ নেন তারা।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেয় ছাত্র-জনতা। খবর পেয়ে মধ্যরাতে সেখানে হাজির হন ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতাকর্মীরা। জুলাই বিপ্লবের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে কোনো ব্যানার ছাড়াই তারা দাবির সঙ্গে একমত হয়ে সেখানে হাজির হন। এ সময় ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ অনেক নেতাকে সেখানে রাতভর বক্তব্য ও স্লোগান দিতে দেখা যায়।

এতদিন বিচ্ছিন্নভাবে আওয়ামী লীগের গণহত্যার বিচার দাবিসহ দলটির আর রাজনীতি করার সুযোগ নেই বলে বক্তব্য দিতেন জামায়াত নেতারা। তবে এবার প্রথমবারের মতো দলটি নিষিদ্ধের আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেন। গতকাল যমুনার সামনে মিছিলসহকারে যোগ দিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে জামায়াতে ইসলামী। সকালে দলটির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের নেতৃত্বে ওই কর্মসূচিতে যোগ দেয় দলটি। ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ ছাড়াও কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. খলিলুর রহমান মাদানী। এ সময় মহানগর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, শত শত নয়, হাজার হাজার ভাইকে হত্যাকারী আওয়ামী লীগকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পতনের পর জনমানুষের দাবি ছিল তাদের নিষিদ্ধ করা। এ দাবি শুধু কোনো রাজনৈতিক দল বা ছাত্রদের নয়, এটি সারা দেশের সব দেশপ্রেমিক মানুষের দাবি। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এ আন্দোলনে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানের পক্ষ থেকে একাত্মতা ঘোষণা করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবির এ আন্দোলনে প্রথমবারের মতো জামায়াত অংশগ্রহণ করে বলে জানান দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। তবে এর কারণ সম্পর্কে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেননি।

তবে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের প্রচার সম্পাদক আতাউর রহমান সরকার বলেন, ৫ আগস্ট-পরবর্তী আওয়ামী লীগের বিচার চেয়ে আসছে জামায়াত। একই ভাবে এ আন্দোলনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলামসহ শীর্ষ নেতাকর্মীরা ব্যাপকভাবে অংশ নিয়েছেন।

এ বিষয়ে প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ জানান, ছাত্র-জনতার আহ্বানে জুলাই স্প্রিরিটকে ধারণ করেই আমরা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনে একমত পোষণ করেছি। আমরা এতে অংশগ্রহণ করেছি।

এদিকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে যমুনা এলাকায় আয়োজিত সমাবেশে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যোগ দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা। গতকাল জুমার নামাজের পর পল্টন মোড় থেকে মিছিল নিয়ে যোগ দেন তারা। মিছিলে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আতিকুর রহমান মুজাহিদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইউসুফ আহমাদ মানসুরসহ মহানগরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

পরে সমাবেশে ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

একই ভাবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। দলটির যুগ্ম মহাসচিব আতাউল্লাহ আমিন দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী ও অধ্যাপক আব্দুল জলিলসহ নেতাকর্মীরা সেখানে অংশগ্রহণ করেন। ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজীর নেতৃত্বে শাহবাগ অবরোধ করতে দেখা যায়। এ সময় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।

মিছিলসহ আন্দোলনে অংশ নেয় ইসলামী ঐক্যজোটের আরেক অংশ। দলটির যু্গ্ম মহাসচিব মাওলানা ইলিয়াস আতহারী ও ইসলামী ছাত্রসমাজের সভাপতি মো. বেলাল হোসাইন এতে নেতৃত্ব দেন। ইলিয়াস আতহারী বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলনে থাকব।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনে সক্রিয় দলটি। সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু ও লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান।

নেজামে ইসলাম পার্টির মাওলানা মুসা বিন ইজাহার, খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মুফতি ফখরুল ইসলাম, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ ইসলামি দলগুলোর নেতাকর্মীরা অংশ নেন। পয়গামে ইনসানিয়াত এতে একাত্মতা ঘোষণা করে। সংগঠনটির সভাপতি মুফতি শহীদুল ইসলাম ফারুকী মঞ্চে উপস্থিত হন।

এ ছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ের আলেম-ওলামা ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরাও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনে যোগ দেন।

এদিকে শাপলা চত্বর ও জুলাই গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে দ্রুত নিষিদ্ধ ও বিচার চেয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। গতকাল এক বিবৃতিতে সংগঠনটির আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা সাজেদুর রহমান এ দাবি জানান। বিবৃতিতে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত দলীয় নেতাকর্মীসহ ছাত্র-জনতাকে রাজপথ আঁকড়ে থাকার আহ্বান জানান তারা।