
১৯ শে জুলাই ২০২৪ , শুক্রবার , বিকাল ৫টা ৫ মিনিট !
ধানমন্ডির ল্যাবএইডের পিছনের আইডিয়াল কলেজের গলিতে শহীদ তাহির জামান প্রিয় ভাই !
দুপুর তিনটায় হ্যাপি আর্কেড শপিং মলের সামনে পুলিশ গুলি করে আমাদের দুইজন ভাইকে শ*হী*দ করার পর আমরা পালিয়ে সবাই পপুলার হাসপাতালের আশেপাশে লুকিয়ে ছিলাম। তখন লোকসংখ্যা অনেক কমেও গিয়েছিলো। ৪.৪৫ এর দিকে কয়েকজন বড় ভাই বললেন এখানে লোকসংখ্যাতো কম ,ল্যাবএইডের পিছনে মনে হয় অনেকে লুকিয়ে আছেন আমাদের মতো , চলো ওনাদের সাথে ওখানে গিয়ে যুক্ত হই আমরা। এরপর আবার সায়েন্সল্যাবের মেইন রাস্তার দখল নিই । আমরা পাঁচটার আশেপাশের সময়ে ল্যাবএইডের পিছনে গেলাম। দেখলাম ওখানে অনেকে আসলেই আছেন । সংখ্যাটা বিশ-ত্রিশ জন হবে সর্বোচ্চ!
কিছুক্ষণ ওখানের অবস্থান করা কয়েকজনের সাথে কথা হলো। সবাই ভাবছে মেইন রাস্তায় আবার অবস্থান নিবে । একেবারে হঠাৎ কেউ একজন বলে উঠলেন পুলিশ এদিকে আসতেছে ভাই ! সাথে-সাথে একটু পালানোর জন্য পিছিয়ে গেলাম। পরক্ষণে মনে হলো ওনি বোধহয় ভুল বলেছেন, এই টাইপের আতংকের সময়ে এমন কথা অনেক শোনা যায়। এটা ভেবে যেই কীনা একটু এগিয়ে যাচ্ছি। এই সময় নিজের আশেপাশে গুলির প্রচণ্ড শব্দ পেলাম। সাথে-সাথে সর্বোচ্চ জোরে দৌড়ে পালাতে থাকলাম পিছনের দিকে। আমি তখনও জানতাম না আমার একটু মাত্র সামনে থাকা তাহির জামান প্রিয় ভাই তখনই শহীদ হয়ে গিয়েছেন।
ভিডিওটা ২৬ সেকেন্ডের । ভিডিওর প্রথম সেকেন্ডে দেখা যাচ্ছে প্রিয় ভাই আইডিয়াল কলেজের গলির ভেতরের দিক থেকে সামনে এগিয়ে আসছেন। আস্তে-আস্তে হেঁটে রাস্তার শেষ মাথায় সবার একেবারে সামনে চলে আসছেন । কমলা রংয়ের একটা টি শার্ট পরা। ৬ সেকেন্ডে ওনি সরাসরি মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। সাথে-সাথে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন । ৭ সেকেন্ডের পর থেকে সবাইকে পালাতে দেখা যাচ্ছে। এখানের অনেকে তখনও জানাতেন না ঐ মুহুর্তে একজন অলরেডি শাহাদাত বরণ করে রাস্তায় পড়ে আছেন। ১০ সেকেন্ডের পরে এক আপুকে দেখা যাচ্ছে প্রিয় ভাইয়ের নিথর দেহ**টা একাই টেনে নিয়ে আসতে । কিন্তু এপিবিএন পুলিশ অনেক কাছাকাছি এসে গু**লি চালানো শুরু করলে ওনিও পিছিয়ে যেতে বাধ্য হন ।
পুলিশ প্রিয় ভাইকে এভাবেই টানা আধ ঘন্টা যাবত ফেলে রাখতে বাধ্য করে। অনেকবার আমাদের ভাইয়েরা উদ্ধার করতে এগিয়ে যেতে চাইলেও পুলিশ গুলি করে পিছিয়ে যেতে বাধ্য করে। মনে পড়ে ,আমরা আইডিয়াল কলেজের আশেপাশে যখন লুকিয়ে ছিলাম। তখন একটা আপুকে অনেক কান্না করতে দেখি। আশে-পাশের সবার থেকে তখনই প্রথমবার জানতে পারি যে , আমাদের একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে সামনে পড়ে আছেন। কিন্তু পুলিশ ক্রমাগত গু**লি করে যাচ্ছে বলে কেউই সামনে গিয়ে উদ্ধার করতে পারছে না ।
ভিডিওতে প্রথমবার ৩ নম্বর সেকেন্ডে নিজেকে দেখতে পাচ্ছি । নিউজিল্যান্ডের একটা জার্সি পরা । কাঁধে ব্যাগ। আস্তে-আস্তে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি । এরপর ৭ নম্বর সেকেন্ডে পুলিশের গু***লির শব্দ পেয়ে দৌড়ে পিছনে পালিয়ে যাচ্ছি । তখনও জানি না আমার একেবারে পাশে থাকা একজন ভাই পুলিশের গুলিতে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েছেন।
কখনো নিজের চোখের সামনে এভাবে কাউকে মারা যেতে দেখিনি । আর এভাবে যে একেবারে হঠাৎ করে কোন কারণ ছাড়া পুলিশ এসে গু**লি করতে পারে এটাও ছিলো কল্পনার একেবারে বাহিরে । এখানে কোন উস্কানি ছাড়াই এপিবিএন পুলিশ গু***লি করছে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিও>> https://www.facebook.com/bdtodaynet/videos/1034047852026944
Farahat Sajed পোস্ট থেকে সংগৃহীত