
বিএনপির রাজনীতি করায় গাজীপুরের এক ব্যক্তির নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাবেক মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে।ওই মুক্তিযোদ্ধার নাম মো. আবদুল রউফ সরকার (গেজেট-২৮৫৮)। বাড়ি গাজীপুরের পূবাইলের খিলগাঁও গ্রামে। মোজাম্মেলও গাজীপুরের সন্তান। তবুও আবদুল রউফ মন্ত্রীর আক্রোশের স্বীকার হন বলে অভিযোগ করেছেন। পরবর্তীতে হাইকোর্টের আদেশে ওই মুক্তিযোদ্ধার সনদ ও ভাতা বহাল রাখা হয়।
সনদ ফিরে পেলেও এখনও নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বীর মুক্তিযোদ্ধা রউফকে।ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা ও তাদের দোসর তাকে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ সরকারের সঙ্গে স্থানীয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা সালাউদ্দিন সরকারের জমি নিয়ে বিরোধ দীর্ঘদিনের। সালাউদ্দিন তৎকালীন মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের সঙ্গে দেখা করে তাকে ব্যবহার করেন। মোজাম্মেল হকের পরামর্শেই ওই আওয়ামী লীগ নেতা ২০২১ সালে রউফ সরকারের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন দাখিল করেন। আবেদনে বলা হয় মো. আব্দুল রউফ সরকার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং অন্যান্য বিষয়বস্তু নিয়ে জামুকায় একটি সভা হয়। সেই সভায় সভাপতিত্ব করেন তৎকালীন মন্ত্রী মোজাম্মেল হক।
সভায় মুক্তিযোদ্ধা রউফ সরকারের কোন বক্তব্য না শুনেই একতরফাভাবে তার গেজেট বাতিলের সুপারিশ করা হয়। ওই সভায় বিএনপির রাজনীতি করার কারণে আব্দুল রউফ সরকারসহ আরও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিলের সুপারিশ করা হয়।সেই অনুযায়ী তাদের নাম বাদ পড়ে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে।
পরে গেজেট বাতিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করেন রউফ সরকার। সেই রিটের শুনানি গ্রহণ করে আদালত মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়কে রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আব্দুর রউফ সরকারের মুক্তিযোদ্ধা গেজেট বহাল রাখতে এবং তার নিয়মিত ভাতা দিতে নির্দেশ দেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৭২ সালে গাজীপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুল্লাহ বাহার স্বাক্ষরিত গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা সনদধারী বীর মুক্তিযোদ্ধা রউফ সরকার ২০০৬ সালে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাইবাছাই কমিটিতে আবেদন করেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষ্য, সনদ, দলিল দস্তাবেজ যাচাইবাছাই শেষে তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। একই সঙ্গে ২০১৩ সালে তৎকালীন গাজীপুর জেলা প্রশাসক এক চিঠিতে রউফ সরকারকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য জামুকা ও মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে মো. রউফ সরকার বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত তিনি নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেয়ে আসছেন।
এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা রউফ সরকার বলেন, আমি একাত্তরে ৩নং সেক্টরে ১১১ নং গেরিলা ইউনিটে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিই। সালাউদ্দিন সরকারের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। আইনি প্রতিকার পেতে তার বিরুদ্ধে আমি একাধিক মামলা করি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সালাউদ্দিন সরকার আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করছেন।
তিনি আরও বলেন, সালাউদ্দিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র হত্যা মামলার আসামি। মামলা নং-১৬/ তারিখ ০৮/১২/২০২৪ ।
অভিযোগের বিষয়ে সালাউদ্দিন সরকার বলেন, জমিসংক্রান্ত বিরোধের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের আবেদন করার কোন সম্পর্ক নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জামুকা তার গেজেট বাতিল করেছে। তবে এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের আদেশের বিষয়টি উল্লেখ করা হলে তিনি এড়িয়ে যান।
আওয়ামী লীগ সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক একাধিক হত্যা মামলায় পলাতক থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।