Image description
 

দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, ২০১৮ সালে কুষ্টিয়া আদালত চত্বরে শেখ হাসিনার নির্দেশে আমার ওপর আক্রমণ করা হয়েছিলো। ওই আক্রমণের সময় আমার সঙ্গে থাকা এম আব্দুল্লাহ ফেসবুকে লাইভ করায় এখনো আপনারা সেই ছবি, ভিডিও দেখতে পাচ্ছেন।সোমবার চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের (ডিএফপির) সভাকক্ষে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আয়োজিত ‘ফ্যাসিবাদী শাসনামলে সাংবাদিক হত্যা-নিপীড়ণ’শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।

কুষ্টিয়ার আদালত চত্বরের সেই দিনের কথা স্মরণ করে আমার দেশ সম্পাদক বলেন, আক্রমণ চলাকালে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে একটি দলীয় সভা চলছিল, তাতে সভাপতিত্ব করছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাকে বলা হলো— মাহমুদুর রহমানের জীবন বিপন্ন, আপনি সরকারের সঙ্গে কথা বলে দেখেন তাকে অন্তত বাঁচানো যায় কিনা। তিনি তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ফোন করে যখন বললেন, মাহমুদুর রহমানকে কী আপনারা মেরে ফেলবেন আজকে! তাকে তো বাঁচাতে হবে। আসাদুজ্জামান কামালের জবাব ছিল, এখানে আমার কিছু করার নেই, এটা উপরের নির্দেশ। তার মানে ফ্যাসিস্ট সরকারের মন্ত্রী স্বীকার করে নিচ্ছেন, আমার ওপরে আক্রমণের নির্দেশদাতা ছিলেন সয়ং শেখ হাসিনা। সেখানে কামালের কিছু করার নেই।

৩৯ দিন রিমান্ডে থাকা সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গিয়ে মাহমুদুর রহমান বলেন, ডিবির গারদে মাটিতে থাকতাম, ৩০-৩৫ জন গাদাগাদি করে থাকতাম। এর মধ্যে র‌্যাবের আয়নাঘর দেখা হয়ে গেছে। শেষদিন রাতে হঠাৎ ডাক পড়লো, আপনাকে ডিসি ডিবি ডেকেছেন। আমি যাওয়ার পর ডিসি ডিবি আমাকে আশ্চর্যজনকভাবে স্যার সম্বোধন করলেন। বললেন, স্যার, আপনি হয়তো আমাদের আচরণে রাগ করেছেন, রাগ করবেন না। আমাদের ওপর যে নির্দেশ ছিল, তার কিছুই আপনাকে করিনি। আমি জানতে চাইলাম, কী নির্দেশ ছিল? তখন বললেন, সয়ং শেখ হাসিনা জানতে চেয়েছেন যে, আমাদের একটা বিশেষ চেয়ার আছে, সেখানে খুব দ্রুত ঘোরানো হলে মানুষ বমি করতে করতে অজ্ঞান হয়ে যায়। আমাকে ওই চেয়ারে ঘোরানো হয়েছে কিনা।

গাজীপুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর ওপর হামলার ঘটনা উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, হাসনাত আব্দুল্লাহ আমাদের এই বিপ্লবের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের মধ্যে একজন। তার ওপর যেভাবে আক্রমণ হয়েছে, সেই একই প্রকৃতির আক্রমণ ২০১৮ সালে কুষ্টিয়ায় আদালত চত্বরে আমার বিরুদ্ধে হয়েছে। আমার ওপর আক্রমণটা আরও বড় আকারে হয়েছিল, সেটা সবাই জানেন। সাংবাদিক নামধারী আওয়ামী লীগের নেতা বিপ্লব। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে কিন্তু গ্রেপ্তার হয়নি। তার জন্য সাংবাদিক নেতারা মায়াকান্না করছেন। তাহলে আপনাদের বলতে হবে, মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলা আমরা সমর্থন করি! এটা না বলে আপনারা সমবেদনা দেখাতে পারবেন না। যেসব পত্রিকা বিপ্লবদের জন্য মায়া কান্না দেখাবে, তাদের বলতে হবে আপনারা ফ্যাসিস্টের সমর্থক। এই নৈতিক সাহস থাকলে আপনারা বক্তব্য দিবেন, না হয় চুপ থাকবেন।

মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের পর ওই বিপ্লব ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে হয়েছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, সেটি যে ব্যর্থ হয়নি, তা প্রমাণ হয়েছে চব্বিশের ৫ আগস্টের বিপ্লবের সফলতার মাধ্যমে। জুলাই বিপ্লব কোনোদিন ব্যর্থ হবে না, এর যে স্পিরিড তা নিশ্চয়ই দুর্বল হয়েছে। তা নাহলে হাসনাত আব্দুল্লাহর ওপর আক্রমণ হতো না। তার ওপর আক্রমণের সাহস কিভাবে পায় ফ্যাসিস্টরা! পতিত শক্তি সাহস পাচ্ছে মানে, আমাদের মধ্যে ঐক্যর অভাব ঘটেছে, একতা চলে গেছে এবং ফ্যাসিবাদ আবার মাথাচাড়া দিচ্ছে, যারা এতদিন লুকিয়ে ছিল।